নিজেকে সুন্দর করে তুলে ধরতে কে না চায়? দাগহীন ত্বক আর সুন্দর চুল অনেকের কাছেই সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে থাকে। চুল যেহেতু আমাদের সৌন্দর্যের অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকে তাই এর যত্নও নিতে হবে অনেক বেশি। এজন্য চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যাবহার করা ভাল। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার চুলকে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিয়মিত শাম্পুর ব্যাবহারে চুল থাকে খুশকিমুক্ত ও নানা ধরনের মাথার ত্বকের সমস্যাও কমে যায়। তবে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করার আগে চুলের ধরন বুঝে নিন। আপনার চুল তৈলাক্ত হলে ইউভি সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে প্রতিদিন চুল ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে চুল কম তৈলাক্ত হবে। ঘন চুলে প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শুষ্ক ও রুক্ষ চুলের জন্য তেল সমৃদ্ধ যে কোনো শ্যাম্পু বেছে নিন। শুধু শ্যাম্পু করাই এই জাতীয় চুলের জন্য যথেষ্ট নয়। ব্যবহার করুন ভাল কোন ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার। তবে খেয়াল রাখবেন কন্ডিশনার প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য নয়। এত গেল সাধারন কন্ডিশনারের কথা। চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চাইলে সপ্তাহে বা দুই সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করাতে হবে। ডিপ কন্ডিশনিং করা হলে চুল অনেক ধরনের গভীর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এটি চুলের নানাবিধ সমস্যা যেমন চুল পড়া, খুশকি রোধ করার সাথে সাথে সূর্যের আলোর ফলে চুলের যে ক্ষতি হয় তার উপশম করে। সেই সাথে চুলে জট বাধার সমস্যা, চুলের ঝলমলে ভাব ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করে অনেকাংশেই। কোন কোন ডিপ কন্ডিশনার আবার নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে সেই সাথে চুলের ফেটে যাওয়াও রোধ করে। বাজারে নানা ধরনের ডিপ কন্ডিশনার পাওয়া যায়। আপনার চুলের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী ভাল কোন ডিপ কন্ডিশনার বেছে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকাতে গুলশান আলমাস, প্রিয়, নিউ মার্কেট, গাওসিয়া, বসুন্ধরা সিটি সহ ছোট বড় যেকোনো মার্কেটেই ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ইত্যাদি জায়গাতেও পাবেন এসব ডিপ কন্ডিশনার। বাজার ভেদে লোলানে ব্র্যান্ডের ডিপ কন্ডিশনার পাবেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। লরিএল ব্র্যান্ডেরটা পাবেন ৩০০ থেকে ১৮০০ টাকা ভেদে, নানা সাইজে ও নানা ধরনের কন্ডিশনার। ডাভ এর হেয়ার ট্রিটমেন্ট মাস্ক পাবেন ৫০০ থেকে ৬০০ এর মাঝে। আরও আছে ওয়াটসন ও স্যালন নিউস ডিপ কন্ডিশনার। বাজার ভেদে এদের দাম পড়বে যথাক্রমে ৪০০ থেকে ৪৮০টাকা ও ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও বুটস হেয়ার নরিশিং কন্ডিশনার ও প্যান্টিন কন্ডিশনার পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এসব ছাড়াও আরও অনেক রকমের ডিপ কন্ডিশনার পাওয়া যাচ্ছে। ডিপ কন্ডিশনার তো পেয়ে গেলেন, কিন্তু ভাবছেন বাসায় বসে এর ব্যবহার করবেন কীভাবে? বাসায় বসে সহজেই চুলের ডিপ কন্ডিশনিং করার জন্য কিছু প্যাক তৈরির নিয়ম দেয়া হল- প্রথম প্যাক টি তাদের জন্য যারা খুশকির সমস্যায় ভুগছেন। খুশকির সমস্যা দূর করতে এই প্যাকটি ব্যাবহার করতে পারেন- উপকরনঃ অ্যালোভেরা পাতা ( পাতা না পেলে জেল ও ব্যাবহার করতে পারেন) একটির কিছু অংশ ট্রিটমেন্ট ক্রিম- ১ থেকে ২ টেবিল চামচ মধু- ১ থেকে ২ টেবিল চামচ * চুল লম্বা হলে এর বেশি পরিমাণে নিতে হবে। সব উপকরন এক সাথে নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করুন। এবার মিশ্রণটি চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত অংশে ভাল করে লাগিয়ে নিন। মাথার ত্বকেও লাগিয়ে নিন। এভাবে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপরে শ্যাম্পু করে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। শাম্পুর পরে কন্ডিশনার ব্যাবহার করুন। যারা ঘন ও ঝলমলে চুল চান তাদের জন্য নিচের প্যাকটি কাজে দিবে- উপকরনঃ ট্রিটমেন্ট ক্রিম- ৩ টেবিল চামচ মধু- ২ টেবিল চামচ ডিমের কুসুম- ১টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২ থেকে ৩ টা সব উপকরন এক সাথে ভাল করে মিশিয়ে নিন। উপরের প্যাকটির মতই এটিও মাথার ত্বক, চুলের গোঁড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত ভাল করে লাগিয়ে নিন ও ৩০ মিনিট রাখুন। এরপরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলে চুল কন্ডিশনার দিয়ে আবার ভাল করে পরিষ্কার করুন। বাইরে যাওয়ার আগে ঝটপট করেও চুলে ডিপ কন্ডিশনার ব্যাবহার করে নিতে পারেন। এর ফলে আপনার চুল সারাদিন সুন্দর, ঝলমলে ও জটবিহীন থাকবে। বাইরে যাওয়ায় আগে দিয়ে প্রথমেই শ্যাম্পু করে নিন। এরপরে মাথার ত্বকে ও সম্পূর্ণ চুলে যেকোনো ভাল একটি ডিপ কন্ডিশনার সরাসরি কোন কিছুর সাথে না মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এরপরে ১০ থেকে ১২ মিনিট অপেক্ষা করে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস আপনার চুল সারাদিনের ধকল সহ্য করার জন্য তৈরি। মনে রাখবেন ডিপ কন্ডিশনিং ও সাধারন কন্ডিশনিং সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি প্রোডাক্ট। সাধারন কন্ডিশনার কখনই সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যাবহার করবেন না। এতে চুল পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। প্রত্যেক দুই এক সপ্তাহ পরপর একদিন নিজের চুলকে একটু বেশি সময় দিতে ভুল করবেন না যেন। ভাল করে চুলে ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুলের যেকোনো সমস্যা ঠিক হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই আর অবহেলা নয়, সামান্য যত্ন নিয়েই পেয়ে যান আপনার কাঙ্ক্ষিত চুল।