ছবি সংগৃহীত
একটি গড়পড়তা গোপন প্রেমের গল্প
প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০১৪, ১৮:১৪
আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৪, ১৮:১৪
আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৪, ১৮:১৪
যেভাবে শুরু-
মাঝে মাঝে খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন হয়... খুব অহরহ হয়... হয়তো যে মানুষটাকে আমরা ভালোবাসি, সেই মানুষটা হয়ে যায় অন্য কারো! হয়তো তাঁকে ছাড়া জীবনের একটি দিনও কল্পনা করা হয়নি আপনার, কখনো সে থাকবে না জীবনে আপনার মনেও হয়নি মুহূর্তের জন্য। নিজের গভীর রাতের স্বপ্নগুলোতে না জানি কত শত সহস্রবার দেখেছেন সেই মানুষটির আপন হবার অনুভব, দুজনের ছোট্ট একটা লাল-নীল সংসারের আশায় না জানি কেটে গেছে কতগুলো জীবন। বড় তীব্র সেই ভালোবাসা, বড় তীব্র সেই আবেগ আর স্বপ্নের পিছুটান। তবুও আবেগ কাটে, আবেগ ভাঙে... সেই খুব ভালোবাসার মানুষটিও একদিন ঠিক ঠিক পর হয়ে যায়। এতটা পর যে একসময় দূরত্বেও আর ব্যথা লাগে না। যাকে ছাড়া একটি দিনও চলতো না, তাঁকে না দেখেই দিব্যি কাটে আপনার দিনের পর দিন আর বছরের পর বছর। মানুষটা এতই পর হয়ে যায় যে তাঁর অন্য কারো হয়ে যাওয়াতেও এক বিন্দু কষ্ট হয় না... এক বিন্দু ভাবায় না... এক বিন্দু অশ্রু জমে না চোখের কোনো কোণে। সত্যিই কি কষ্ট হয় না? নাহ, এক বিন্দুও না! আর হয়না বলেই হয়তো আয়নার সামনে দীর্ঘসময় নিয়ে নিজেকে সাজায় অবনী। তাঁর শ্যামলা বরণ চেহারায় নাকি সাজসজ্জার বাহার মানায় না, সোহেল প্রায়ই বলতো। সেকারণেই কিনা জানে না, আজ বেশ করে সাজে। জমকালো শাড়ির সাথে বড় একটা টিপ পরে কপালে, গাঢ় রেখার কাজলে আঁকে চোখ, ঠোঁটে লিপস্টিকের ছোঁয়া। খোঁপায় বেশ যত্ন করে ফুলও পরে। টকটকে লাল জারবেরা, সোহেলের পছন্দের ফুল! আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে কেমন অন্যরকম লাগে। সে কি চাইছে বিয়ের আসরে তাঁকেই বেশী সুন্দর লাগুক? নববধূর চাইতেও বেশী? নিদেনপক্ষে সোহেলের চোখে? হবে হয়তো! মনের কোন এক অবচেতন কোণে হয়তো আজও লুকিয়ে আছে সেই মানুষটির চোখে সবচাইতে সুন্দরী দেখাবার ছেলেমানুষি প্রয়াস। সব মেয়ের কোণেই কমবেশি থাকে হয়তো। আগে খুব লজ্জা হতো এই ইচ্ছায়, আজ আর হয় না। বরং আজ আয়নায় নিজেকে ভারি ভালো লাগে। কতদিন পর সোহেলের জন্য নিজেকে সাজাল সে? এক বছর? দুবছর?... ৫ বছর?... ৭ বছর?... কতদিন, কত মাস, কত বছর? এখন যে আর হিসাবও নেই! জীবনের কিছু কিছু অধ্যায়ের কোন হিসাব থাকে না, জীবনের কিছু কিছু গল্পের কোন শেষ থাকে না। কিংবা হয়তো থাকে। কিন্তু এই পরিসমাপ্তি এত এলোমেলো যে তাঁকে শেষ বলা চলে না। ভাবনার আঁচল গুটায় অবনী, বেলজিয়াম গ্লাসের বিশাল আয়নাটার মোহ ছাড়ে। একটা ঝলমলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হবে আজ তাঁকে, যেখানে সে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথিদের একজন। বলা চলে বিয়ে বাড়ির শোভা। নামী দামী মানুষদের আমন্ত্রন করাই তো হয় শোভা বাড়ানোর জন্য। এবং মজার ব্যাপারটি হচ্ছে... খুব অদ্ভুতভাবেই আজ বিয়েটা সেই মানুষটির, যাকে কখনো অবনী নিজের চাইতেও বেশী ভালোবাসত। প্রতিটি মানুষের জীবনেই হয়তো একজন থাকে, যাকে ভালোবাসার পর আর কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতাই অবশিষ্ট থাকে না। আজ অবনীর সেই শেষ মানুষটির বিয়ে... সবচাইতে প্রিয় মানুষটির বিয়ে...যেভাবে দেখা
বহুদিন দেশের বাইরে ছিল, কোথায় কী হচ্ছে সেভাবে জানা নেই কিছুই। তবে হ্যাঁ, শুনেছিল যে মেয়েটা গায়িকা হয়েছে। বাংলাদেশে দশজনে তাঁকে চেনে। কিন্তু তাই বলে এমন নামী-দামী গায়িকা? পরিস্থিতিটা অস্বস্তিকর। আমন্ত্রিত মেহমানরা গায়িকার অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত, একসাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত। বিয়ের আসরে সকলের সমস্ত মনযোগ থাকবার কথা বর-কনের দিকে। আরও ভালো করে বললে,কেবল কনের দিকেই। কিন্তু এখানে তেমন কিছু হচ্ছে না। সকলে ব্যস্ত গায়িকা নিয়ে। কেন এসেছে মেয়েটা এখানে? অবশ্য প্রিয়ার আব্বা প্রভাবশালী মানুষ, বিয়েতে মন্ত্রী-এমপিদেরও দাওয়া করে এনেছেন। সেখানে এ তো তুচ্ছ এক গায়িকা কেবল... একটি মেয়েকে বধূ বেশে তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী দেখায়, যেমনটা বাকি জীবন আর কখনো হয়তো দেখায় না। এই দিনটায় সবাই তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে, বিয়ের সমস্ত আয়োজনটাই যেন তাঁরই জন্য। এসবের ভিড়ে সবার মনযোগ অন্য কারো দিকে থাকলে ভালো লাগবে? কিন্তু প্রিয়ার লাগছে। এমনকি তাঁর চোখ গুলো ঝলমল করছে আগ্রহ আর আনন্দে। বিষয়টা এমন যে বিয়ের কনে না হলে এই মুহূর্তে সেও সামিল হতো সেই ভিড়ে... গায়িকার ফ্যানদের ভিড়ে! ইতিমধ্যে কয়েকবার বলেও ফেলেছে- "তুমি জানো, অবনী আপা আমার কত প্রিয়? তুমি জানো? উনি ৬ মাস তালিম দিয়েছে আমাকে... কাউকে দেন না, আমাকে দিয়েছেন। আব্বু কত বলে যে রাজি করিয়েছে!... তুমি জানো অবনী আপা কি যে সুইট!..." বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হয়, যেন হৃৎপিণ্ডটা পাগল হয়ে গেছে। খুব সুক্ষ্ম রেখায় ঘাম জমে সোহেলের কপালের রেখায়। জীবন তাঁকে নতুন করে আবার কী পরীক্ষায় ফেলতে যাচ্ছে এবার? এত মানুষ থাকতে এই এক অবনীই কেন হবে তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রীর প্রিয় মানুষ, আদর্শ? কেন হবে? পরিস্থিতি আরও বিব্রতকর হয়ে ওঠে, যখন সোহেল অনুভব করে যে তাঁর মনটাও কোন এক অজানা কারণে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই অবনীর আশেপাশেই। লক্ষ টাকা মূল্যের লেহেঙ্গায় সজ্জিত প্রিয়া, দামী গহনা আর এক্সপার্ট হাতের মেকআপে তাঁকে ইন্দ্রাণীর মত দেখাচ্ছে আজ। কত শখ করে নিজে পছন্দ করে করে প্রিয়ার জন্য এসব কিনেছে সোহেল। অথচ আজ... আজ সেই মেয়ের দিকেই বারবার আটকে যাচ্ছে দৃষ্টি, যাকে কিনা সে নিজেই কখনোই ত্যাগ করেছিল। যে সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই, কোনো বুদ্ধিমান মানুষ কি তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখে? রাখে না। সেও রাখেনি। মাঝে মাঝে আমাদের পরিবার ও ভালোবাসার মানুষের মাঝে যে কোন একটিকে বেছে নিতে হয়। সোহেল পরিবারকে নিয়েছিল, নিজের ভবিষ্যতকে নিয়েছিল। এবং সে জানে, নিশ্চিত জানে যে সে ভুল করেনি! আসলেই কি নিশ্চিত জানে? আসলেই কি সে ভুল করেনি আর আসলেই কি সে সুখী মানুষ? যদি তাই হবে তাহলে এমন অস্থির কেন লাগছে? যদি তাই হবে, তাহলে বুকের মাঝে এমন অদ্ভুত একটা ব্যথা মোচড় কেন দিচ্ছে? কেন? সম্পর্ক ভাঙে জীবনে অহরহ, ভাঙতেই পারে। কিন্তু তাঁর কাজটা যদি ঠিকই হয়ে থাকবে, তাহলে কেন অবনীকে কেন কিছু না জানিয়ে একদিন পালিয়ে গিয়েছিল সে বাংলাদেশের বাইরে? কেন এতগুলো বছর সে একটাবার খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেনি মেয়েটা কেমন আছে, কোথায় আছে। কেন অবনীর সাথে যোগাযোগ এড়াতে সম্পর্ক ভেঙে ফেলেছিল সমস্ত পুরনো বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে? শত সহস্র প্রশ্ন, জবাব নেই কোন! কেন যেন এখন এই মুহূর্তে জবাব খুজতেও পারে না সোহেল। মাঝে ঘুরে গেছে জীবনের অনেকগুলো বছর, নিজে নিজে বদলে গেছে যেন আগাগোড়া। অথচ অবনীকে দেখে মনে হয় সময় থমকে গেছে তাঁর দোরগোড়ায়। বয়স যেন একটু স্পর্শ করেনি, এখনো প্রতিটি হাসির সাথে ঝিলমিল করে ওঠে তাঁর চোখজোড়া। আর সবচাইতে অদ্ভুত অবনীর সাজ। ঠিক তেমন, বহু বছর আগে এক সদ্য তরুণ ছেলে যেমনটা কল্পনা করতো। ভারি ছিমছাম এক বধূর কল্পনা, যার মুখে নেই নামী দামী পার্লারের হাজার হাজার টাকার মেকআপ। পরনে নেই লক্ষ টাকার শাড়ি, লক্ষ লক্ষ টাকার গহনা যাকে জাপটে ধরে রাখেনি। সিঁদুর রঙা শাড়িতে সাদামাটা এক নবপরিণীতা- যার কপালে টিপ, খোঁপায় একটা লাল জারবেরা, চোখে মোটা রেখায় কাজল। খুব সাদামাটা বিয়ে হবার কথা ছিল তাদের। যে বিয়েতে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ নেই, অতিথির কোলাহল নেই, ওয়েডিঙ ফটোগ্রাফির হ্যাপা নেই, অহেতুক জাঁকজমক নেই। শুধু অসংখ্য সোনালি আলোতে ঝলমলে এক আলোকসজ্জা আছে, আর আছে মেয়েটির চোখের পাতায় তিরতির কাঁপন তোলা অজানা একরাশ স্বপ্ন। কি অদ্ভুত ভাবনা! অদ্ভুত, আর হাস্যকর! এমন অদ্ভুত ভাবনা দিয়ে কি জীবনে চলে? আর চলে না বলেই তো সোহেল বাস্তববাদী হয়েছিল। অল্প বয়সের ঘোর ত্যাগ করে নিজেকে নিয়ে ভেবেছিল। এই ভাবনায় কি সে স্বার্থপর হয়ে যায়? হবে হয়তো! কিন্তু এই স্বার্থপরটুকুন হয়ে যদি নিজে ভালো থাকা যায়, নিজের পরিবারকে ভালো রাখা যায়, তাহলে স্বার্থপর হওয়া নিয়ে বিন্দু মাত্র আফসোস নেই তাঁর। জীবনে এটুকু স্বার্থপর সকলকেই হতে হয়। এখন ভালো আছে সে। ভীষণ ভালো আছে। জীবনে সফল হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অবনীর চাইতে সহস্র গুণে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করেছে, শ্বশুরবাড়ি বিশাল নামকরা, পরিবারের সবাইকেও ভালো রেখেছে... নিজেকে অকারণে সান্ত্বনা দেয় সোহেল। দিতে থাকে আর দিতেই থাকে। বারবার বোঝায় যে কত ভালো আছে সে। কী ভীষণ ভালো আছে! এমন ভালো থাকার জন্য একটা কেন, দোষটা অবনীকে ত্যাগ করা যায়। বিগত বছরগুলোতে কত মেয়েই তো এসেছে তাঁর জীবনে। এখন সবার কথা ভেবে মাথা ঘামিয়ে অস্থির হলে কি চলবে? সোহেল তখনও জানে না, বৃথাই এই সান্ত্বনা দেয়া। সে নিজে যা কখনো বুঝতে পারেনি, অবচেতন মনটা সেসব আজ ঠিক ঠিক বুঝে ফেলেছে। সোহেল তখনও জানে না যে জীবনে একটা বিশেষ মানুষ সকলের থাকে, যে কিনা সবটুকু ভালোবাসার ওপর একছত্র অধিকার দাবী করে। আর নিংড়ে নিয়ে যায় সবটুকু!এবং যেভাবে শেষ হয়ার কথা ছিল না
চলে গেছে অবনী? চলে গেছে? তবে কি এবার সত্যি দেখা হলো না? আসরে একজন নামজাদা মন্ত্রী এসেছেন। গায়িকা বাদ দিয়ে মেহমান এখন মন্ত্রীর পানে তাকিয়ে। প্রিয়া গেছে ড্রেসিং রুমে নিজের সাজপোশাক একটু গুছিয়ে নিতে। একটু বাদেই বিয়ের কিছু বিশেষ ফোটোগ্রাফ তোলা হবে... কৃত্রিম ভঙ্গিমায় ভালোবাসার অসাধারণ সুন্দর ফোটো! কোলাহলের সুযোগে নিজেকে সরিয়ে আনে সোহেল, একটি সিগারেটের বাহানায়। শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড রাহাতের দৃষ্টি বলে দেয়-"আজ কোন দুর্ঘটনা ঘটাস না প্লিজ!" না, দুর্ঘটনা সোহেল ঘটাবে না। এত বোকা মানুষ সে নয় যে নিজের হাতে ধরে নিজের সুখের পৃথিবী ধ্বংস করবে। কিন্তু তাঁকে জানতে হবে... কিছু প্রশ্নের জবাব আজ তাঁকে জানতেই হবে! কেন অবনী তাঁকে না চেহার ভান করলো? কেন অবনী আজ এখানে এল? কী প্রয়োজন ছিল? কী চায় এই অবনী? "কী চাও তুমি?... চাওটা কী?" প্রশ্নটা সরাসরিই করে সোহেল। আর ভীষণ ভীষণ রূঢ় ভাবে। "কেন এসেছ তুমি এখানে?" খুব আলতো করে হাসে মেয়েটা, কিংবা হাসার মত ভঙ্গি করে। মুখে উচ্চারণ করে না কিছুই। বিশাল এই সেন্তারের কোন এক কোণায় একটি খোলা করিডরের এক প্রান্তে কেমন যেন অপার্থিব দেখায় তাঁকে। মুখে খেলা করে সোনালি আলোকসজ্জার ঝলমলে ছায়া, ঠিক তাঁর চোখ জোড়ার মতই। সেই চোখ, যেগুলো আজও যেন অন্তরের ভেতরটা পর্যন্ত দেখে নেয়। কেমন যেন অসহায় বোধ করে সোহেল, ঠিক সেই তরুণটির মতই। যার চেতন-অবচেতন মনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল একটি মাত্র মুখ। যে মুখটিকে সে ছেড়ে তো ঠিক গিয়েছিল, কিন্তু রাতের পর রাত সেই দূর প্রবাসে না জানি কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে তাঁকে স্বপ্ন দেখে। আর তাঁকে ভুলে যেতে একের পর এক নারীকে স্থান দিয়েছে জীবনে। এখন তো ব্যাপারটা এমন যে সেই স্বপ্নটাও তাঁর জীবনেরই অংশ। "কী করছো তুমি আমার সাথে অবনী, কী করছো?" "কী করেছি আমি?" "তুমি কি কখনো আমাকে তোমার কথা ভুলতে দেবে না?" প্রশ্নের জবাবে আবারও প্রশ্ন। "তুমি তো ভুলেই গেছ আমাকে।" "ভুলে গেছি? একে ভুলে যাওয়া বলে? প্রতিরাতে একটা মানুষের স্বপ্ন দেখি... এটাকে ভুলে যাওয়া বলে?" অদ্ভুত এক রকম মমতা নিয়ে হাসে এবার মেয়েটি, হয়তো একটু অশ্রু ঝিকমিকিয়ে ওঠে চোখের কোণে। হয়তো... "আমিও তো ম��ে করি তোমাকে, সোহেল।" "আমি তোমাকে মনে করতে চাই না! কখনো না, কোনদিনও না। আমার জীবনের কোথাও তুমি নেই। কোথাও, কোথাও না!" "সত্যি নেই?" "না, নেই। কখনো ছিলে না। আমি কখনো তোমাকে ভালবাসিনি। কখনো না। এক মুহূর্তের জন্যও না।" "তাই?" "হ্যাঁ তাই! এখন যাও আমার জীবন থেকে প্লিজ। অতীতের মৃতদেহ আর কতকাল বহন করে বেড়াতে হবে আমাকে। আর কত বছর শাস্তি দেবে আমাকে তুমি?" এবারো হাসেই মেয়েটি। কিংবা হাসির মত একটা ভঙ্গি করে। কথা বাড়ায় না, চলে যায়। একটিবারও বলে না যে তারও এখন স্বামী আছে, সংসার আছে। একলা ফেলে চলে যাওয়া সেই প্রেমিক পুরুষের কথা সে-ও ভুলে গেছে বহুকাল। এত আগে যে আজকাল আর ব্যথাও লাগে না। শুধু কখনো কাজের ফাঁকে প্রিয় গানটি গাইবার সময় চোখ গুলো অকারণ যন্ত্রণা করে। মনে হয় এক সমুদ্র অশ্রু তাদের বুকে ধারণ করা... এক জীবনে ঝরে ঝরেও যারা শেষ হবে না! ব্যাস, এটুকুই! এর বাইরে সোহেল নেই তাঁর জীবনে। একটুও না!পরিশিষ্ট-
চলে যাচ্ছে অবনী। বহু বহু দূরে। তাঁর একটি একটি পদক্ষেপ যেন তৈরি করছে যোজন যোজন মাইলের ব্যবধান। সেই অন্তহীন দূরত্ব, যা আর কোনদিন ঘুচবে না। এখন থেকে মেয়েটি চোখের সামনেই থাকবে তাঁর, টেলিভিশনের পর্দায় থাকবে, তাঁর ঘরদোরে ভেসে বেড়াবে তাঁর কিন্নর কণ্ঠের সঙ্গীত। শুধু মেয়েটি থাকবে না... কোথাও থাকবে না আর! জানে না কেন, সোহেলের বুকের মাঝে সবকিছু কেমন দুমড়ে মুচড়ে যায়। একটা অসহনীয় ব্যথা একটু একটু করে যেন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র অস্তিত্বে, অবশ করে আনে চেতনা। একটা তীব্র, অন্যায় ইচ্ছা একটু একটু করে আছন্ন করে ফেলে। মনে হয় সেই চলে থাকা মেয়েটির মাঝে নিহিত তাঁর সম্পূর্ণ পৃথিবী। তাঁর শুধু একটি বার জড়িয়ে ধরতে হবে তাঁকে... একটিবার বুকে টেনে নিতে হবে। আর তারপর... ঠিক হয়ে যাবে সব। সব ঠিক হয়ে যাবে! হবে সমস্ত যন্ত্রণার অবসান! এত বছরের লালিত সব যন্ত্রণা... যে যন্ত্রণা সে না বুঝে নিজেকে দিয়েছে। অবনী কি বুঝতে পারে সোহেলের নিঃশব্দ চিৎকার? কে জানে, হয়তো পারে। আর পারে বলেই হয়তো যেতে যেতে ফিরে থাকায় কয়েক মুহূর্তের জন্য। তাঁর সেই দৃষ্টিতে কষ্ট থাকে, কান্না থাকে, হাহাকার থাকে। আর মুখে থাকে এক চিলতে হাসি। সান্ত্বনার! এবং সেদিন সেই মুহূর্তে সোহেল নিশ্চিত হয়... বাকি জীবন তাঁকে এই মুখটিকে স্বপ্ন দেখেই কাটিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি রাতে, যতদিন সে জীবিত আছে। তাঁর পাশে থাকবে অন্য একটি মেয়ে, হয়তো জীবনে আরও একাধিক। কিন্তু তাঁর চেতনার সমস্তটা জুড়ে থাকবে এই একটি মাত্র মানুষ! কী বলে একে? ভালোবাসা? পাগলামি? কিংবা বোকামি? আমার জানা নেই। শুধু জানি যে, পৃথিবীতে একজন মানুষ সবার জন্য আছে, যাকে ভালোবাসার পর অন্য কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতাটাই আর থাকে না। ১৭ আগস্ট, ২০১৪।- ট্যাগ:
- লাইফ
- জীবন চর্চা
- সাহিত্য
- প্রেমের গল্প
২ ঘণ্টা, ৩ মিনিট আগে
২ ঘণ্টা, ৯ মিনিট আগে
www.ajkerpatrika.com
| ভারত
২ ঘণ্টা, ২১ মিনিট আগে
২ ঘণ্টা, ২৩ মিনিট আগে
৩ ঘণ্টা, ৮ মিনিট আগে
৩ ঘণ্টা, ১১ মিনিট আগে