ছবি সংগৃহীত

অনলাইনে বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিট

এম. মিজানুর রহমান সোহেল
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০১৩, ০৮:৫০
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৩, ০৮:৫০

(প্রিয় টেক) ঈদে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্গতির সীমা নেই। টিকিট প্রাপ্তি এখন বড় চ্যালেঞ্জিং বটে। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অথবা একদিন আগে লাইনের থাকার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টিশনে বা বাস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করা এ দেশের মানুষের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে টিকিট প্রাপ্তির সম্ভাবনা ততই কমে যাচ্ছে। তাহলে কি এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ নেই? আছে। ঝটপট কাজে সহযোগিতা পেতে এবং সময় বাঁচাতে এ যুগের ইন্টারনেট এখন বড় একটি অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিত্য অনেক কাজের সাথে বাংলাদেশে গত ২০১২ সালের ২৯ মে থেকে রেলের টিকিট অনলাইনে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তার আগে ২০১০ সালের ১ নভেম্নর থেকে অনলাইনে বিমানের টিকিট এবং ২০১৩ সালে ও তার আগে কয়েক দফায় বাসের টিকিট অনলাইনে কেনার বন্দবস্ত হয়েছে। ফলে এখন কষ্ট করে লাইনে না দাঁড়িয়েও অনলাইনেই বাস ট্রেন বা বিমানের টিকিট কেনা যাচ্ছে। সেই সম্পর্কে খবর জানাতেই এই প্রতিবেদন। অনলাইনে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট অনলাইনে কাটার শুভ সূচনা হয় গত বছরের ২৯ মে। জনভোগান্তি রোধে এবং চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দেরি করে হলেও সরকার অনলাইনে রেলের টিকিট বিক্রি শুরু করে। সাধারণ নিয়মানুসারে ভ্রমণকারীকে ৩ দিন আগে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে টিকিট কিনতে হবে। একটি কার্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কেনা যাবে। অনলাইনে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিট কিনতে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে www.esheba.cnsbd.com এই ঠিকানায়। এরপর Purchase Ticket অংশে ক্লিক করে ভ্রমণের তারিখ, যাত্রা শুরুর স্থান, গন্তব্য, ট্রেনের নাম, আসনের শ্রেণী, টিকিটের সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে। আসন খালি থাকলে টিকিট কেনার পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। ভাড়া পরিশোধ করা যাবে ভিসা কার্ড, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়েই। এ ব্যাপারে আরো জানা যাবে এই লিংকে http://www.railway.gov.bd/files/ETicket_Procedure.pdf। একই সাথে মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসের মাধ্যমেও টিকিট কেনা যাবে। এসএমএসে টিকিট কেনার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে চোখ রাখুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েব লিংকটিতে- www.railway.gov.bd/sms_info.asp । প্রসঙ্গত, মূল টিকিট পেতে হলে ই-টিকিটিং প্রক্রিয়া শেষে প্রদর্শিত পাতাটি প্রিন্ট করে স্টেশনের নির্ধারিত বুথে জমা দিতে হবে। এরপর আপনি আসল টিকিট পেয়ে যাবেন। মোবাইলে এসএমএস করে ট্রেনের টিকিট বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোও এসএমএস-এর মাধ্যমে রেলওয়ের টিকিটের ব্যবস্থা চালু করেছে বেশ আগেই। তাদের মধ্যে প্রথম গ্রামীণফোন এই সেবা চালু করে। তবে এ সেবা পেতে গেলে প্রতি সিট অনুযায়ী ২০ টাকা আপনার মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা যাবে। অন্যদিকে একজন মোবিক্যাশ গ্রাহক সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। টিকিট কাটার সুযোগ থাকবে ভ্রমণের তিন দিন আগে থেকে। গ্রামীণফোনের মোবিক্যাশের মাধ্যমে টিকিট করার জন্য প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে TKET লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১২০০ নম্বরে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলে ব্যবহারকারী কাছে ফিরতি ম্যাসেজে একটি পিন নম্বর আসবে। প্রয়োজনে এই পিন নম্বর পরিবর্তন করাও সম্ভব। তবে যারা নিজেদের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করার জন্য বিলপে সার্ভিসের গ্রাহক; তাদের জন্য এ নিবন্ধন না করলেও চলবে। এ সুবিধা শুধু গ্রামীণফোনের গ্রাহকরাই পাবেন। মোবিক্যাশের মাধ্যমে টিকিট ক্রয়ের পাশাপাশি বুকিংও করা সম্ভব। বুকিং দেওয়ার জন্য *131*1# ডায়াল করে ভ্রমণের তারিখ টাইপ করতে হবে। যদি ব্যবহারকারী ৪ আগস্ট বাড়ি যেতে চান তাহলে তিনি টাইপ করবেন 04। এর পরের প্রক্রিয়াগুলো মোবাইলেই উঠে আসবে। যেখানে ভ্রমণের শুরুর স্টেশন, সময়, আসন বিন্যাস নির্ধারণ করা যাবে। সর্বশেষে ব্যবহারকারী একটি ই-টিকিট নম্বর পাবেন। এ নম্বরটি গ্রামীণফোনের যে কোনো সেন্টারে দেখিয়ে টাকা শোধ করে টিকিট নিতে পারবে। তবে টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ঝক্কিটি হলো ৩০ মিনিটের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে। এ সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্যও গ্রামীণফোন ই-টিকিট সরাসরি কেনার সুযোগ দিচ্ছে। আর এজন্য মোবিক্যাশ অ্যাকাউন্ট থাকলেই হবে। তবে বুকিং এবং সরাসরি টিকিট কেনার পদ্ধতি প্রায়ই একই। *131*1# ডায়েল করে প্রতিটি ধাপ শেষ করে ই-টিকিট নম্বর এসএমএস আকারে ব্যবহারকারী পেয়ে যাবে। এরপর নিকটস্থ গ্রামীণফোন সেন্টারে টাকা পরিশোধ করে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। এদিকে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকও তাদের গ্রাহকদের জন্য মোবাইল টিকিটিংয়ের সেবা দিচ্ছে। এ জন্য গ্রামীণফোনের মতোই একই পদ্ধতিতে আগে নিবন্ধন করে নিতে হবে। ফিরতি ম্যাসেজে একটি পিন নম্বর পাবেন গ্রাহক। তবে এই পিন নম্বরটি পরিবর্তন করে নিতে হবে। টিকিট ক্রয়ের জন্য *131*1# করলেই তখন পিন নম্বর ডায়াল করার জন্য বলা হবে। গ্রাহকের পিন নম্বরটি প্রেস করলেই টিকিট কাটার ধাপগুলো চলে আসবে। প্রতিটি ধাপ পূরণ করলে দেওয়া হবে একটি ট্রানজেকশন আইডি। সেই আইডিটি বাংলালিংকের যেকোনো ক্যাশপয়েন্টে দেখিয়ে টাকা পরিশোধ করলেই পাওয়া যাবে টিকিট। অনলাইনে বাসের টিকিট সম্প্রতি কয়েকটি বাসের টিকিট বিক্রেতা অনলাইন এজেন্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ই-টিকিটিং বা অনলাইনে আন্তঃজেলা বাসের টিকিট ক্রয়ের সেবা চালু হলো। কিছুদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পোর্টাল www.busbd.com-এর উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া www.shyamolipari bahanbd.com সাইট থেকেই অনলাইনে শ্যামলীর আন্তঃজেলা বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে বিমানের টিকিট ঈদে বিমানে যারা ঘরে ফিরতে চান তাদের জন্যও অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রেখেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। শুধু ঘরে ফেরাই নয় দেশের বাইরে ঈদ ভ্রমনে যেতে চাইলে বিমানের টিকিট অনলাইনেই কেটে নিতে পারেন। ২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অনলাইনে টিকিট বুকিং চালু করেছে। যাত্রীরা www.biman-airlines.com ঠিকানায় লগ-ইন করে টিকিট বুকিং ও বুকিং নিশ্চিত করতে পারবেন। এ ছাড়া এ ওয়েবসাইটে ফ্লাইট-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যও পাওয়া যাবে। তবে টিকিট সংগ্রহের জন্য ট্রেনের মতো বিমানের যাত্রীদেরকেও বিমানের কার্যালয়ে যেতে হবে। অনলাইনে বুকিং দেওয়ার পর বুকিংয়ের প্রিন্ট কপি অথবা বুকিং নম্বর নিয়ে বিমানের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকিট সংগ্রহ না করলে বুকিং বাতিল হয়ে যাবে। বর্তমানে বিমানের নিজস্ব ৩৬টি টিকিট বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে আটটি বাংলাদেশে এবং ২৮টি বিদেশে। এ ছাড়া প্রায় এক হাজার এজেন্টের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস টিকিট বিক্রি করে থাকে।