লাখো মানুষ পানিবন্দি
দিরাই-শাল্লায় পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি এবং কিছু পাকা ও আধাপাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষ নিজ গৃহ ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন না। উপজেলায় বহমান কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ১০৫ সে. মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এলাকার সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা গতকাল সোমবার শাল্লা উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদিরসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ। ড. জয়া সেনগুপ্তা বানবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে রয়েছেন। যথেষ্ট ত্রাণসামগ্রী সরকারের পক্ষ থেকে মজুদ রাখা হয়েছে, তা বানবাসীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলার সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার কবলে পড়েছে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দিরাইয়ে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার, ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহীন আলম, শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল হালিম, প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, পাউবো কর্মকর্তা রিপন আলী, ইউপি চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান, এহসান চৌধুরী, শিবলী আহমেদ বেগ, মুজিবুর রহমান, আবদুল কুদ্দুস, রতন কুমার তালুকদার প্রমুখ। পাউবোর উপজেলা সমন্বয়কারী রিপন আলী জানান, আজ (গতকাল সোমবার) বিকাল ৩ ঘটিকা পর্যন্ত কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ১০৫ সে. মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী জানান, তার ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আক্রান্ত পরিবারের লোকজন কেউ কেউ এখনও নিজ ঘরে অবস্থান করলেও পরিবারের মহিলা শিশু সন্তানসহ গবাদিপশু আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী জানান, অন্যান্য এলাকার তুলনায় আমরা এখনও যথেষ্ট ভালো রয়েছি। চিন্তার কোনো কারণ নেই, সরকার বন্যার্তদের পাশে রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ফ্লাড সেন্টার ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ দেব জানান, উপজেলা সদরে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে সার্বক্ষণিক সকল ইউনিয়নের সঙ্গে খবর নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী উপজেলার প্রায় হাজার খানেক বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নালিতাবাড়ীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিহুমকির মুখে শহররক্ষা বাঁধনালিতাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদী, চেল্লাখালি নদী, তিনানীর মালিঝি ও মহারশির নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদ-নদীর পানি ও নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ভাটি অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের ৬০টিরও অধিক গ্রাম। এদিকে আমন ফসলের বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের শহররক্ষা বাঁধের ২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসীর সূত্রে, অব্যাহত টানা বর্ষণে নালিতাবাড়ী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে নালিতাবাড়ীর প্রধান নদী ভোগাইসহ, চেল্লাখালি, তিনানীর মালিঝি, মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও পাহাড়ি দুদুয়ার খাল, দুগংগার পাড় খাল, সুতিয়ার পাড় খালের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত ভারি বৃষ্টির কারণে এই পানি বৃদ্ধি পেয়ে এটি ভাটির দিকে গড়িয়ে এখন পার্শ্ববর্তী নকলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের প্রায় ৬০টিরওঅধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন ফসলের বীজতলা। ভোগাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ও জমাকৃত বৃষ্টির পানি না সরায় এই পানি এখন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এদিকে মরিচপুরান ইউনিয়নে রাজাখালপাড় এলাকায় ভোগাই নদীর তীর ভেঙ্গে ও পাড় গড়িয়ে নদীর পানি মরিচপুরান এলাকার ফকিরপাড়া, মরিচপুরান, দক্ষিন কুন্নগর, উত্তর কুন্নগর, দুগংগারপাড়া, বড়বাড়ী এবং যোগানিয়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া, তালতলা, তালুকপাড়া, গেরামারা যোগানিয়া, বাইটকামারী, কুত্তামারা, ঘোড়ামারা, বাথুয়ারকান্দা, বড়বন্ধ, ভাটি গাং পাড়, এবং রাজনগরের বড়ডুবি, দোহালিয়া, টাকিমারী এবং কলসপাড় ইউনিয়নের নাকশী, পাচগাঁও, তারাকান্দি, গোল্লারপাড়, বালুঘাটা, ঘোঘড়াকান্দি, কলসপাড় গ্রামের ৬০টিরও অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে ভোগাই নদীর পানির তোড়ে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড নামক জায়গায় শহররক্ষা বাঁধ ও ৪ নং ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় থানার সম্মুখে শহর রক্ষাবাধ ২টি হুমকির মধ্যে হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে পৌর শহরের প্রধান সড়ক একই সাথে ২নং ওর্য়াড কাচাড়ী মহল্লা, ৩নং ওয়ার্ড সাহাপাড়া, ৫নং ওয়ার্ড ছিটপাড়া, ৮নং ওয়ার্ডের হ্যালিপ্যাড মহল্লাসহ বৃষ্টির পানি জমে বিভিন্ন মহল্লা প্লাবিত হয়েছে। ড্রেন না থাকায় সেই পানি বের হতে না পারার কারণে এলাকাবাসী দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে এসিল্যান্ড) লুবনা শারমিন জানান, আমরা পরিদর্শন করেছি একই সঙ্গে উপজেলা হল রুমে বন্যা দুর্যোগ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মিটিং চলছে। কুশিয়ারার ভাঙনে ৯ গ্রাম প্লাবিতমৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, ক্ষেপেছে কুশিয়ারা নদী। উজানের পাহাড়ি ঢল আর গেল ক’দিনের ভারি বর্ষণে আগ্রাসী হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে নদী দেখাচ্ছে তার ভয়ঙ্কর রাক্ষুসী স্বভাব। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহান। কিন্তু তা থেকে উত্তরণে কিছুতেই টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বাঁধ নির্মাণের স্থায়ী প্রতিকার চেয়ে নানা স্থানেও ধর্ণা দিয়েও শুধু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই দীর্ঘদিন থেকে বর্ষা এলেই ওই স্থানের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। আকস্মিক বন্যায় সব হারিয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন কয়েক হাজার মানুষ। ক্ষোভের সঙ্গে এমনটি জানালেন আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসী জানান, শনিবার বিকাল থেকেই ভাঙন শুরু হয় কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের। এখন পর্যন্ত সেই ভয়ার্ত উত্তাল স্বরূপ অব্যাহত রেখেছে কুশিয়ারা। শনিবার বিকালে থেকে অল্প অল্প করে ভাঙন শুরু হয় খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায়। ওই দিন মধ্যরাতেই ওই ভাঙন বড় হয়ে প্রায় ৩শ’ ফুট বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে একাধিক গ্রামে। রোববার বিকালে খলিলপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়।বাহুবলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিতবাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাহুবলে টানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে করাঙ্গী নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীতে পানির স্রোতে বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাত জেগে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মৌসুমি ফসলসহ বিভিন্ন ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে, বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল সোমবার দিনভর উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে।সোমবার উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসে। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট উপচে যাচ্ছে পানি। এতে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা হয়েছে। উপজেলার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বয়ে যাওয়া করাঙ্গী নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। নদীর একপাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীর অপর পাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেরও বিভিন্ন স্থান রয়েছে হুমকির মুখে। যেকোনো সময় একাধিক ভাঙন সৃষ্টি হয়ে জনবতিসহ ফসলাদি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বড়গাঁও, শফিয়াবাদ, সাহানগর, গাংপাড়, রশিদপুর, পূর্ব ভাদেশ্বর, কসবাকরিমপুর, ডুমগাঁও, নোয়াগাঁও, পুরান মৌড়ি, জয়নাবাদ, বাহুবল, উত্তরসুর, কবিরপুর, মানিকা প্রভৃতি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও নদীর অপর পাড়ের নিজগাঁও, পশ্চিম ভাদেশ্বর, ইসলামপুর ও দশকাহনিয়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে জনবতিসহ ফসলাদি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।এদিকে, উপজেলা সদরস্থ দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি হাইস্কুল ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করাঙ্গী নদীতে সৃষ্ট বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ ক্লাসরুমে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসগ্রহণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বাহুবল বাজার সংলগ্ন করাঙ্গী নদীর ব্রিজের একপাশের মাঠি ধসে পড়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদরের ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজটি দিয়েই প্রতিদিন শ’ শ’ ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করছে।অপরদিকে, গতকাল দিনভর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হকসহ প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন স্থানে করাঙ্গী নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ, বন্যা কবলিত এলাকা ও রাস্তাঘাট পরিদর্শন করেছেন।জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিজগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়িতে পানি উঠে পড়ায় অনেকেই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের আটটি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেও এসব আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মানুষের আগ্রহ কম রয়েছে। উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মখলিছুর রহমান জানান, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। খানপুরের বেড়িবাঁধ ভেঙে খানপুর, গোতগাঁও, আলীপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ১০ গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। রানীগঞ্জ বাজারের মাছ ও সবজি হাটে পানি উঠে দুর্ভোগে সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গতকাল আড়াইশ মানুষের মধ্যে ১৫ কেজি করে ত্রাণ হিসেবে চাল দেয়া হয়েছে বলে জানান। চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশ মিয়া বলেন, ইউনিয়নের সবকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি আমি সাধ্যমতে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করছি। আশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আবু ঈমানী বলেন, ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় আছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে সুযোগ সুবিধা না থাকায় পানি ঢুকে পড়া লোকজন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ছিলিমপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার জানান, বন্যার পানিতে হবিবনগর এলাকায় তার মালিকানাধীন মাছের খামারের সব মাছ ভেসে গেঝে। এতে তার ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, উপজেলার ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ ও প্রবেশপথে পানি উঠায় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, উপজেলার ৭১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারি কমিশনার ভূমি ইয়াসির আরাফাত বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে জগন্নাথপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৬০ মেট্রিকটন চাল ও সাড়ে ৭০০ শুকনো খাবারের প্যাকেট পাওয়া গেছে। নাগেশ্বরীতে পানি ঢুকছে লোকালয়েনাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যার ভয়াবহতা। উপজেলার গঙ্গাধর, শংকোষ, ধুদকুমর, ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদ নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ লোকালয় পর্যন্ত। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলিয়ানীরপাড় পাকারমাথা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ছে সর্বত্র। এতে করে পুকুরগুলো ডুবে গিয়ে মাছ বের হয়ে যাচ্ছে অনেক মাছচাষীর। এছাড়াও ডুবে যাচ্ছে বসতভিটা ও ভেঙে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও বিজতলা। বন্যার পানিতে ভেসে যাচ্ছে গরু ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ আরো অনেক কিছু। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নারায়ণপুর, বল্লভেরখাস, নুনখাওয়া, কচাকাটা, কেদার, বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ী, কালিগঞ্জ, ভিতরবন্দ ছাড়াও নগেশ্বরী পৌরসভার কয়েকটি অঞ্চলের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। পানিবন্দি মানুষগুলো আশ্রয় হারিয়ে মাথা গুঁজছে উঁচু রাস্তা, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায়। উদ্বোধনের আগেই ব্রিজ ও রাস্তায় ফাটলবান্দরবান প্রতিনিাধ জানান, বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যেতেই বালাঘাটার পুলপাড়ায় নতুন নির্মিত ব্রিজের গাইড ওয়াল ও রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নতুন নির্মিত এই ব্রিজটি চলতি মাসেই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা ছিল। উদ্বোধনের আগেই এমন পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় মানুষের মনে দেখা দিয়েছে সংশয়। ব্রিজটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এটির ভিত্তি দেয়া হয় ২০১৭ সালের ২৬শে মে। এদিকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী ও পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ চরমে। অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাসাবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাদা জমে গেছে। কয়েকটি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ঠ হয়ে গেছে। কৃষকের ক্ষেত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। আন্তঃ উপজেলা সড়ক, বান্দরবান-কেরানীরহাট ও বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কে কয়েকটি জায়গা ভেঙে গেছে। সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো একদিন লাগতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে লোকজন। তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। পানি কমে যাওয়ার পরও বাড়ির ভেতরে কাদামাটি জমে যাওয়াতে আরেক দুর্ভোগে পড়েছে লোকজন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব আহমেদ জানান, বন্যায় পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াতে গাইড ওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ব্রিজের কোনো ক্ষতি হবে না। বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নতুনভাবে মেরামত করা হবে।ঠিকাদার অমল কান্তি দাশ জানান, কাজে কোনো সমস্যা নেই। বান্দরবানে কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াতে এমন ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম জানান, জেলায় ত্রাণসামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণ মজুত রয়েছে। ত্রাণের জন্য কোনো সমস্যা নেই। জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন দপ্তর থেকে রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- পানিবৃদ্ধি
- কুড়িগ্রাম