নুসরাত হত্যা: কোর্ট হাজতে ২১ আসামি
দৈনিকসিলেটডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়েয়ে হত্যার মামলায় আজ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকাল ১০টার দিকে আটক ২১ আসামীকে প্রিজন ভ্যানে করে কোর্ট হাজতে আনা হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট এম. শাহজাহান সাজু বলেন, বুধবার দুপুরে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ফেনীর জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ওসি শাহ আলম। আজ ওই চার্জশীট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে পাঠানো হবে। বাদী যদি চার্জশীটে নারাজি না দেন তাহলে বিচারক পুন:তদন্ত দিতে পারেন। আর নারাজি না দিলে চার্জশীট গ্রহণ করা হতে পারে। এর আগে তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজকে ১৬জনকে রেখে ৫ জনকে নট সেন্ট আপ করেছে। নট সেন্ট আপকৃত আসামী যাদেরকে পিবিআই বাদ দিয়েছে নুর হোসেন হোনা মিয়া, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল এবং আরিফুল ইসলাম এই পাঁচজনকে নিয়ে যদি এজহারকারীর আপত্তি থাকে এবং এদের মধ্যে অপরাধী আছেন তবে আমরা বাদীর সাথে কথা বলে নারাজি দেব। না হয় পিবিআই প্রদন্ত চার্জশীট গ্রহণ করতে আদালতকে বলবো। পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষে বুধবার আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছে। পিবিআই'র ৮২২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এরমধ্যে এজহারনামীয় আটজন, এজহার বহিভূত তদন্তে প্রাপ্ত আসামী আটজন। আমরা সকল আসামীর মৃত্যুদন্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি। এই মামলাটি গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই মামলায় সর্বমোট ৯২ জন স্বাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন অন্যান্য হলেন বিশেষজ্ঞ, বাদি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিষ্টের স্বাক্ষী। মামলায় ৭ জন স্বাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২জন আসামী নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপ ও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেফতাররা হলেন- অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নুসরাতের মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন। এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।