শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা
বাংলাদেশ ও ভুটান পারস্পরিক স্বার্থে দেশীয় বাজারে উভয় দেশের বেশকিছু পণ্যের শুল্ক ও কোটা মুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছে। দুই দেশের মধ্যে গতকাল আনুষ্ঠানিক আলোচনায় ভুটান বাংলাদেশের বাজারে দেশটির ১৬টি পণ্যের শুল্ক এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে আর বাংলাদেশ চেয়েছে তাদের বাজারে ১০টি বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে এবং সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের ১৬টি পণ্যের বাংলাদেশের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। শহীদুল হক বলেন, আজকের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাটি খুবই ইতিবাচক হয়েছে এবং আলোচ্য বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এগুলো কার্যকর হবে বলেও আশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুটান সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের ১০টি পণ্যের কোটা ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, দু’দেশই এটি কার্যকরের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে এখন এটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে কাজ করতে হবে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য দেয়া হয়। ট্রানজিটের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) সড়ক এবং রেল যোগাযোগের বিষয়টি একটি বড় উদ্যোগ। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যদিও সকল দেশই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তথাপি ভুটানের সংসদে এটি অনুসমর্থিত হয়নি। তবে, ভুটানের নতুন সরকার বলেছে এই উদ্যোগ সংক্রান্ত বিলটি তাদের সিনেটের উচ্চকক্ষে আলোচনার জন্য পুনরুত্থাপিত হবে এবং তারা এটি পাশের বিষয়ে আশাবাদী। ভুটানের সংসদে বিলটি অনুমোদিত হলে আলোচ্য চারটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরো শক্তিশালী হবে, বলে তিনি উল্লেখ করেন। ৫ চুক্তি সই: স্বাস্থ্য, কৃষি, জাহাজ চলাচল, পর্যটন ও জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে ঢাকা ও থিম্পুর মধ্যে পাঁচটি চুক্ত সই হয়েছে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পরিবহন এবং ট্রানজিট কার্গো চলাচলে অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহারের বিষয়ে দি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। নৌ পরিবহন সচিব আবদুস সামাদ এবং ভুটানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশো ইয়েসি ভাংদি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রাজকীয় ভুটান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা চুক্তিতে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম এবং ভুটানের স্বাস্থ্য সচিব উগানদা দফু। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এবং ভুটানের কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিভাগের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএআরসি’র নির্বাহী পরিচালক কবির ইকরামুল হক ও ঢাকায় ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি। বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এবং ভুটানের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (আরআইএম) মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিপিএটিসি’র রেক্টর ড. এম আসলাম আলম এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি। পাশাপাশি, দু’দেশের মধ্যে পর্যটন খাতে সহযোগিতা বিষয়ে ভুটানের পর্যটন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোপদেন রাবগি নিজ নিজ দেশের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।