আমেজহীন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নির্বাচন

মানবজমিন প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

সাধারণ নির্বাচনের মতো ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর নির্বাচনেও এখন প্রতিযোগিতা নেই। সমঝোতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কমিটি। ফলে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। দেশের ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভোট কার্যত লোক দেখানো অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সংগঠনে নির্বাচন আমেজহীন হয়ে পড়েছে। হারিয়েছে জৌলুস। অন্যবারের মতো নির্বাচনী আমেজ এবার তেমন দেখা যাচ্ছে না। জেলা পর্যায়ের জেলা চেম্বারগুলোতেও একই অবস্থা। গতবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কমিটিও হয়েছে আংশিক ভোটাভুটির মাধ্যমে।সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাণিজ্য সংগঠনগুলো নামে ব্যবসায়ীদের সংগঠন হলেও তারা রাজনৈতিক অঙ্গনের ছায়া হিসেবে কাজ করছে। এভাবে চলতে থাকলে নেতৃত্বের বিকাশ হবে না বলে জানান তারা। এফবিসিসিআই নির্বাচন: জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ব্যবসায়ীদের ফাদার সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের ২০১৯-২০২১ মেয়াদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭শে এপ্রিল। গতবার অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবার শীর্ষ এই পদে নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপের একজন। এবার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে। আর সহসভাপতি নির্বাচন হবে চেম্বার গ্রুপ থেকে। সেই হিসেবে এবার শীর্ষ এই ব্যবসায়ী সংগঠনটির সভাপতি পদে চেম্বার গ্রুপের শেখ ফাহিমের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। তাকে সভাপতি পদে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে দেশের সব জেলা, বিভাগ, মেট্রোপলিটন এবং মহিলা চেম্বারগুলোর প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি দেশের সব জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিবৃন্দের সংগঠন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টসের সভায় এ সমর্থন জানানো হয়। শেখ ফজলে ফাহিম আওয়াামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। গতবার অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এফবিসিসিআই হলো পণ্যভিত্তিক ৩৮০টি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ৮১টি চেম্বারের যৌথ সংগঠন। এসব ব্যবসায়ী সংগঠনের মনোনীত সদস্যরা ভোট দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নির্বাচন করেন। অবশ্য ১২টি করে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত পরিচালক হন। পরিচালকরা ভোট দিয়ে সভাপতি ও দুই সহসভাপতি নির্বাচন করেন। চেম্বারে ও অ্যাসোসিয়েশন মিলে ভোটার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এফবিসিসিআই বেশিরভাগ ভোটারই মনে করছেন, অন্যবারের মতো এবারও সরকার সমর্থিত প্যানেলই বিজয়ী হবে। অন্য বছর এই নির্বাচনকে ঘিরে যেমন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে এবার সেখানে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ প্যানেল থেকে আগেই প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে আমেজ না থাকারই কথা। এ ছাড়া আগের চেয়ে এখন এফবিসিসিআই নির্বাচন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এখন আর সভাপতি নির্বাচন হয় না। সভাপতি পদে নির্বাচন হলে নির্বাচন আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো। এখন তো নির্বাচনের আগেই ফলাফল জানা যায়। তাই নির্বাচনে আর আমেজ থাকে না। বাংলাদেশ চাল রপ্তানিকারক সমিতির নেতা মোহা. ইসহাকুল হোসেন সুইট বলেন, একটা গতিশীল এফবিসিসিআই চাই। প্রতি বছর একই ব্যক্তি সংগঠনের পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। নতুন কোনো ব্যক্তি নেতা হতে পারছেন না। এভাবে সমোঝতা আর আংশিক ভোট হলে নেতৃত্বের বিকাশ হবে না বলে মনে করেন তিনি। আলী জামান বলেন, নির্বাচন করবো কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে চাপ দেয়া হচ্ছে। আসলে এফবিসিসিআইয়ে নির্বাচন একটা খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিজিএমইএ নির্বাচনও না হওয়ার পথে: তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন সিডিউল অনুযায়ী, আগামী ৬ই এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম অফিসে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। গত মেয়াদ ছাড়া বিজিএমইএ’র সব মেয়াদেই ‘সম্মিলিত পরিষদ’ ও ‘ফোরাম’ নামে দুটি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়। তবে ২০১৫ সালে নির্বাচনের আগে সংগঠনের সাবেক সভাপতিদের সংগঠন ‘এক্স বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফোরাম’-এর পরামর্শে উভয় প্যানেলের সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব সিলেকশন করা হয়। দুই মেয়াদের জন্য সেই সমঝোতা অনুযায়ী এবার সভাপতি হওয়ার কথা ফোরাম থেকে। প্রথমবার সম্মিলিত পরিষদ থেকে মনোনীত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের কমিটি এখন সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সমঝোতা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচন সামনে রেখে সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে যে প্যানেল জমা দিয়েছে তাতে দলনেতা করা হয়েছে ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হককে। তাই নিশ্চিত করে বলা যায়, বিজিএমইএতে আগামী দুই বছর নেতৃত্ব দেবেন রুবানা হক। বিকেএমইএতেও নির্বাচন নেই: ৮ বছর ধরে বিকেএমইএ’র সভাপতির পদে আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ২০১২ সালের পর থেকে ব্যবসায়িক সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হচ্ছে না। বিকেএমইএ’র কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর। পরে নারায়ণগঞ্জে সংগঠনের প্রধান কার্যালয় বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণের অজুহাত দেখিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কমিটির মেয়াদ ছয় মাস করে দুই দফা বাড়িয়ে নেন সেলিম ওসমান। এরপর ২০১৭ সালে নতুন করে দুই বছরের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়েছেন সেলিম ওসমান।রিহ্যাব: আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবে আগে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সাল থেকে রিহ্যাবে ভোটাভুটি হয় না। সমঝোতার মাধ্যমেই দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি পদে আছেন আলমগীর শামসুল আলামিন। নতুন করে গত বছর আবার আগের কমিটিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও