সরছে ওভারব্রিজ আন্ডারপাস
রাজধানীর প্রথম মেট্রোরেল রুট উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে থাকা ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস তুলে দেয়া হবে। পথচারী পারাপারে এ সড়কে করা হবে বিকল্প ব্যবস্থা। প্রয়োজনে আন্ডারপাসও করা হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সড়ক পারাপারে ১৬টি স্টেশনে থাকবে আধুনিক ব্যবস্থা । সিঁড়ি, এসকেলেটর এবং লিফ্ট এই তিন মাধ্যমেই সাধারণ পথচারীরা রাস্তা পারাপার হতে পারবেন। দুই স্টেশনের মাঝে কোথাও গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্পট থাকলে সেখানে আন্ডারপাস করার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলের দুই ধাপের কাজ এখন পুরোদমে চলছে। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ শুরুর সময়েই কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ তুলে দেয়া হয় পিয়ার বসানোর সুবিধার্থে। ওই অংশে পাইলিং ও পিয়ার বসানোর কাজ অনেক এগিয়েছে। কোথাও কোথাও পিয়ারের ওপর বসানো হচ্ছে ভায়াডাক্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভায়াডাক্ট বসানো ও স্টেশন নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে অবশিষ্ট ফুটওভার ব্রিজগুলোও তুলে ফেলতে হবে। তবে সাধারণ পথচারীদের অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে শুধু প্রয়োজনের আগেই ফুটওভার ব্রিজ তুলে নেয়া হবে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্পও করে দেয়া হবে। প্রকল্প কর্মকর্তারা এমন পরিকল্পনার কথা জানালেও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন বলছেন, এমনিতে মানুষ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না। এ অবস্থায় তা তুলে দিলে সড়কে এলোমেলো অবস্থায় মানুষ পারাপার হবে। এছাড়া দুই স্টেশনের মাঝে বিকল্প না থাকলেও মানুষের সমস্যা হবে। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এ.এন.ছিদ্দিক মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানান, প্রকল্প এলাকায় অন্তর্ভুক্ত সব ফুটওভার ব্রিজই তুলে দেয়া হবে। বিশেষ করে যেগুলো আমাদের প্রজেক্টের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ফুটওভার ব্রিজে পথচারী পারাপারের বিষয়টি পিক আওয়ার, অব পিক আওয়ার, স্কুল সময়, নন স্কুল সময়গুলোতে কি পরিমাণ মানুষ এটা ব্যবহার করে এর ওপর ২৪ ঘণ্টার একটি ভিডিও সার্ভে করেছি। আমাদের মেট্রোরেল প্রজেক্টের মোট ১৬টি স্টেশন আছে। এই প্রত্যেকটি স্টেশনে আমরা পথচারীদের রাস্তা পারাপারে এপার থেকে ওপারে যাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। এটা তিনটি পদ্ধতিতে রাখা হয়েছে। প্রথমত, বর্তমানে ফুটওভার ব্রিজ যেভাবে আছে সেভাবে সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা পার হতে পারবে। দ্বিতীয়ত, এসকেলেটরে উঠে এপার থেকে ওপার যেতে পারবে। যারা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারই করতে পারে না তাদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে সর্বপ্রথম থাকবে সিঁড়ি পদ্ধতি। এখানে মোট দুটি ফ্লোর থাকবে। স্বাভাবিকভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এপার থেকে ওপার চলে যেতে পারবে যে কেউ। এরপর থাকবে পেইড জোন। ওখানে টাকা ছাড়া যাওয়া যাবে না। আপনি যদি মেট্রোরেল ব্যবহার করেন তাহলে সেখানে যেতে পারবেন। প্রথম যে স্টেজ বা ব্রিজটি থাকবে সেটা কমবেশি আমাদের রেগুলার ফুটওভার ব্রিজের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকবে। অনেকটা এখনকার ফুটওভার ব্রিজের মতোই। আরেকটি হচ্ছে একতলা এক্সেলেটর পদ্ধতি। পথচারী বা যাত্রী যদি স্টেশনে না যান তাহলে এপাস থেকে এক্সেলেটরে ওপাশে গিয়ে নেমে চলে যেতে পারবেন। যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তারা এসব সিঁড়ি ও এক্সেলেটর ব্যবহার করতে পারবেন না। তাদের জন্য বর্তমানে রাস্তা পারাপারে কোনো ব্যবস্থাই নেই। যেমন বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধী। সেখানে তাদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকবে। লিফট দিয়ে ওপরে উঠে আবার এপারে এসে পুনরায় লিফট দিয়ে নিচে নামবে। তিনি বলেন, স্টেশন হবে যেখানে বেশি মানুষ থাকবে সেখানে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে, সেখানে বড় একটি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেই জায়গায় আমরা আন্ডারপাস তৈরি করবো। সংখ্যাটা কেউ বলছে ১, কেউ বলছে ২। তবে আমরা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে আলাদা সার্ভে করছি। যেখানে প্রয়োজন হবে বা বিদ্যমান ফুটওভার ব্রিজ নেই সেখানে আমরা তাদেরকে পার করার ব্যবস্থা করবো। প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা মূলত দুটি উদ্দেশ্যে মেট্রোরেল তৈরি করছি। প্রথমত হচ্ছে, ঢাকা শহরের যানজট নিরসন। দ্বিতীয় হচ্ছে পরিবেশের উন্নয়ন। আমরা যানযট কীভাবে নিরসন করবো। সেটা হচ্ছে মেট্রোরেলের মাধ্যমে প্রতিঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করতে পারবে। উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত লোকাল পরিবহনে যেতে এখন আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়টা আমরা ৩৮ মিনিটে নিয়ে আসতে চাই। এবং ১৬টি স্টেশনে থামবে। এতে করে আমরা ব্যক্তিগত গাড়িটি বের করবো না। অথবা যদি একটি সিএনজি বা উবার ভাড়া করতে চাই এর পরিবর্তে আমরা মেট্রোতে করে চলে আসতে পারবো। এতে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হবে, একই সঙ্গে যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি পরিবেশেরও উপকার করবে। কারণ মেট্রোরেলের ফসিল বাতাসে উড়বে না। যেটা পরিবেশ দূষণে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মেট্রোরেলের শব্দদূষণ ঠেকাতে আমরা সাউন্ড ব্রেকার লাগাবো। ফলে আশপাশ দিয়ে যে মেট্রোরেল চলবে- এটা কেউ বুঝতেই পারবে না। এবং মেট্রোরেল যে আসবে ও যাবে তাও পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা টের পাবে না। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত যে মেট্রোরেলের কাজ আছে এটা আমরা শেষ করে ফেলবো। এবং ডিসেম্বর ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত যে কাজ তাও সমাপ্ত হবে। এদিকে পল্টন, বাংলামটর, মিরপুর-১০ গোল চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে পথচারী পারাপারের সুযোগ না থাকলে তা বিদ্যমান সড়কে যান চলাচলে বড় সমস্যা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন মনে করছেন। মিরপুর গোলচত্বর এলাকার ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বলেন, এখানে স্টেশন হবে এক পাশে। কিন্তু গোলচত্বরের আশেপাশের লোকজন স্টেশন হয়ে পারাপার করতে পারবেন না। এখানে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করে দিতে হবে। কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফুটওভার ব্রিজ তুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে থাকা আরো দুটি ব্রিজ তুলে দেয়া হবে। ওই এলাকায় শুধু দুটি স্টেশনে পারাপারের ব্যবস্থা থাকলে মাঝের লোকজনের সমস্যা হবে। মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে একটি ব্রিজ ছিল যা তুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে কোনো স্টেশন না থাকায় পথচারী পারাপারে কী ব্যবস্থা থাকবে তা সেখানকার বাসিন্দাদের জানা নেই।