নুসরাতের ডায়িং ডিক্লারেশন আদালতে উপস্থাপন
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় শেষ সাক্ষ্য হিসেবে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে টানা চার কর্মদিবসে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সাক্ষ্য প্রদানের শেষ দিন মামলার অন্যতম ডকুমেন্ট নুসরাতের দগ্ধ অবস্থায় ভাইয়ের মোবাইলে ধারণকৃত নুসরাতের বক্তব্যের অডিও ও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায় ‘ডায়িং ডিক্লারেশনের’ ভিডিও এবং অন্যতম আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের সঙ্গে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম ও জনৈক জীবনের সঙ্গে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমের কথোপকথনের অডিও আদালতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শুরু হলে আদালত মুলতবি ঘোষণা করে জেরার জন্য বুধবার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে প্রথমবার মামলার কোনো ডকুমেন্ট প্রজেক্টরের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা উপস্থিত সকল আইনজীবী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা শুনতে পেরেছে। প্রদর্শিত অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে আসামিদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও নুসরাতের জবানবন্দি সকলের সামনে উন্মোচিত হয়। যা এ মামলার মূল দলিল হিসেবে নথিতে রয়েছে।’ জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, গত ২৭শে জুন মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর টানা ৩৭ কর্মদিবসে নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে আদালতে বাদীসহ ৮৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। প্রত্যেক সাক্ষীকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এ মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে একজন সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা দুটি জায়গায় সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ হলেও আদালতে তার সাক্ষ্য একবার গণ্য হয়। এ ছাড়া নুসরাতের মৃত্যুর পূর্বে ‘ডায়িং ডিক্লেরেশনের’ পর উপস্থিত ৫ চিকিৎসকের স্বাক্ষর নেয়া হয়। ওই ৫ জনকে মামলায় সাক্ষী করা হলেও তাদের পক্ষে একজন আদালতে সাক্ষ্য দেয়ায় অপর চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। সেক্ষেত্রে ৯২ সাক্ষীর সকলেই সাক্ষ্য দিয়েছে মর্মে গণ্য হয়েছে বলে বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু দাবি করেছেন। চলতি বছরের ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর জের ধরে গত ৬ই এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ই এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।এ ঘটনায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে।