খালেদা জিয়া : বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহীয়সী এক নারী। নীতির প্রশ্নে দৃঢ়তা, গণমানুষের অধিকার আদায়ে আপসহীনতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অবিচল, কথাবার্তায় শালীনতাবোধ, মার্জিত আচরণ, অনমনীয়তা এবং বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আত্মত্যাগের সংমিশ্রণে শক্তিশালী রাজনৈতিক চরিত্রের অধিকারী অনন্য নেত্রী তিনি। কর্মগুণে তিনি পরিণত হন বাংলাদেশের মানুষের ভরসাস্থলে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে জননন্দিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অত্যন্ত সফল চেয়ারপারসন। শত ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের মধ্যেও তিনি দলটির জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন। তিনি নিজেও পরিণত হয়েছেন মানুষের আস্থার প্রতীকে। খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান।
১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর, তিনি ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। খালেদা জিয়া ১৯৮৩ সালে গঠিত সাত দলীয় জোট গঠনের স্থপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। বেগম খালেদা জিয়া এক মুহূর্তের জন্যও স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেননি। তার দৃঢ় সংকল্পের কারণে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার আটক করা হয় তাকে। এ সময় দেশের জনগণ তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি দেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার মেয়াদে বেশ কিছু অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। কর্মসংস্থানের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এ সময় এবং শুধু তৈরি পোশাকশিল্প খাতেই পাঁচ বছরে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি ছিল ২৯ শতাংশ। প্রায় দুই লাখ নারী এ সময় তৈরি পোশাকশিল্প খাতে যোগ দেয়। তিনি জাতিসংঘে গঙ্গার পানিবণ্টনের সমস্যা উত্থাপন করেন যাতে বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য অংশ পায়। ১৯৯২ সালে তাকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানো হলে সেখানে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সমস্যা উত্থাপন করেন এবং পরে মিয়ানমার সরকার ১৯৯০ দশকের প্রথমদিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে।
খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য স্বৈরাচারী এরশাদ, হাসিনা ও মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দীন সরকার এমন কোনো চক্রান্ত নেই যা করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্রপ্রহরী বেগম খালেদা জিয়া টানা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি নিখাত ভালোবাসা খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে আপনজনে পরিণত করেছে। তিনি সশস্ত্র হুমকিতেও দেশ ছেড়ে যাননি শুধু বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য। কর্মগুণে, আন্তরিকতায় ও সততায় হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন রাজনীতিবিদ যে পরিশীলিত ভাষায় কথা বলে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, তার প্রমাণ বেগম খালেদা জিয়া। এ কারণেই বাংলাদেশের ইতিবাচক রাজনীতিতে এখন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। জীবনের ৮০টি বছর পার হলেও সাধারণ জনগণের মধ্যে এখনো রয়েছে তার বিপুল জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে বর্তমান সময় যখন রাজনীতিতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের চরিত্র হননের জন্য অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে, সেই সময় খালেদা জিয়ার মতো সাহসী ও মহীয়সী নারী রাজনীতিবিদ যেন জাতির জন্য এক সূর্যসম আলোকবর্তিকা।