’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ভারতের হাজার বছরের প্রতিশোধ!

যুগান্তর মোবায়েদুর রহমান প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:১৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা উঠলেই, একশ্রেণির অন্ধ ভারতপ্রেমী ভারতপ্রেমে গদগদ হয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা দেখে ভারতকে মহান দেশ হিসাবে ভক্তিতে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা কোনো দিন অস্বীকার করি না; কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত কি স্বীকার করে? জানি, অনেকে আমার এ প্রশ্নে চমকে উঠবেন। চমকে উঠলেও আমি নাছাড়। কারণ, ভারত তার হৃদয়ে বাংলাদেশকেও স্বীকার করে না, আবার মুক্তিযুদ্ধকেও স্বীকার করে না। যারা এতদিন ধরে আমার লেখা যুগান্তরে পড়ছেন, তারা জানেন, যখন আমি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলি, তখন ডকুমেন্ট ছাড়া কোনো কথা বলি না। আজকেও যা বলছি, সেটাও ওই ডকুমেন্টের ভিত্তিতেই।


১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপিত হলো। ভারতেও একইদিন বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে; কিন্তু সেটি কাদের বিজয়? ভারত বলছে, সেটি ভারতের বিজয়। তারা মনে করেছে, এটি ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয়। তারা এটিকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বলে কোনো উক্তি করেনি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভারতবাসীর উদ্দেশে যে বাণী দিয়েছেন, তার বাংলা অনুবাদ:


‘বিজয় দিবসে আমরা স্মরণ করি সেসব সাহসী সৈন্যদের। যাদের সাহস এবং ত্যাগ ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়কে নিশ্চিত করেছিল। তাদের দৃঢ় মনোবল এবং নিঃস্বার্থ সার্ভিস আমাদের জাতিকে সুরক্ষা দিয়েছে এবং ইতিহাসে আমাদের গর্বকে খোদাই করেছে। আজকের এ দিন তাদের সাহসিকতার প্রতি আমাদের স্যালুট এবং তাদের তুলনাহীন স্পিরিটের স্মরণ। তাদের বীরত্ব ভারতীয়দের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুপ্রেরণা দেবে।’


ইংরেজিতে ৬৪ শব্দ এবং বাংলাতে ৫৯ শব্দের এ বাণী আপনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। দেখুন তো এ বাণীর ৬৪ শব্দের মধ্যে একটি শব্দও কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে? বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যুদ্ধটি কি কেবল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কেও একটি শব্দও নেই কেন? নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রতি বছরই ১৬ ডিসেম্বরের ওপর বাণী দেন এবং গত বছরও ঠিক একই ধরনের বাণী দিয়েছিলেন। সেখানেও বাংলাদেশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে একটি শব্দও নেই।


আর থাকবে কোত্থেকে? ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে তো তারা শুধু ভারতের বিজয় বলেই আখ্যায়িত করেনি, বরং হাজার বছরের প্রতিশোধ বলেই অভিহিত করেছে। যুগান্তরের সম্মানিত পাঠক ভাইয়েরা, এটিও আমার নিজস্ব কোনো উক্তি নয়। এটি খোদ ভারতের পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাণী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে ঢাকার তথা পূর্ব পাকিস্তানের পতনের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের লোকসভায় সোল্লাসে ঘোষণা করেন,“Today we have avenged a thousand years of history.”


বাংলা অনুবাদ: ‘আজ আমরা ইতিহাসের হাজার বছরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছি।’ তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? তারা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল? নাকি ভারতবর্ষের বিগত ১ হাজার বছর হিন্দুরা যে মুসলমানদের অধীনে ছিল তার প্রতিশোধ নিয়েছে? প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন, ভারতের ১৭শ বছরের ইতিহাসে মুসলমান শাসকরা ভারত শাসন করেছেন ১ হাজার বছর। তার পর ২শ বছর শাসন করেছে ইংরেজরা। এ ১২শ বছর আগের ৫শ বছর হিন্দুরা শাসন করেছিল। তাদের ৫শ বছরের শাসনের পর মুসলমানরা একনাগাড়ে ১ হাজার বছর ভারত শাসন করেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লোকসভায় যে ১ হাজার বছরের প্রতিশোধের কথা বলেছেন, সেটি ওই ১ হাজার বছরের মুসলমানদের শাসন।


সুতরাং, এই কথা যদি বলি যে, ভারত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামে, তখন আমরা বাংলাদেশিরা যাই ধারণা করি না কেন, ভারতীয়রা কিন্তু ওই হাজার বছরের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছিল।


দুই


এটি শুধু ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরলোকগত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অথবা এ বছর ২০২৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যই নয়, এটি ১২০ কোটি ভারতবাসীর ধারণা। এখানে উল্লেখ্য, ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪৪ কোটি। এর মধ্যে মুসলমান ২৪ কোটি।


যেটি বলছিলাম, ভারতের সর্বশ্রেণির মানুষের মন ও মানসিকতা ইন্দিরা গান্ধী বা নরেন্দ্র মোদির মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি। এ বক্তব্য রাজনৈতিক নেতারা তো বটেই, ভারতের সিনেমাতেও সবসময় বলা হয়। নিচে এ ধরনের কতগুলো সিনেমার উল্লেখ করছি।


১. গুন্ডে-ভারতের ‘গুন্ডে’ ছবিতে দেখানো হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধটি হয়েছে পাক-ভারত যুদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিবাহিনী বলে কোনো কথা নেই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম, যেখানে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিজয়ী হয়েছিল। এ যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্রে এ ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত করে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু একটি ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে।


‘গুন্ডে’ ছবি ছাড়াও আরও কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্রে একই রকমের বিকৃতি দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ:


২. হিন্দুস্তান কি কসম-১৯৭৩ সালে নির্মিত এ সিনেমা মূলত Operation Cactus Lily-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম সীমান্তে সংঘটিত যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এখানে মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই।


৩. বর্ডার-J. P. Dutta পরিচালিত এ সিনেমা Battle of Longewala (1971)-এর ঘটনাকে তুলে ধরে, এবং এটিও ‘ইন্দো-পাক যুদ্ধ’ হিসাবে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশ বা সেই সময়কার মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায়নের প্রসঙ্গ থেকে দূরে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও