একাত্তরের অবরুদ্ধ ঢাকা: আমিও বিজয় দেখেছি

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৯

আমাদের মুক্তি সংগ্রাম যখন শুরু হলো, তখন আমার বয়স ৬ বছর। এতবড় একটি যুদ্ধ আমি পরিবারের সাথে অবরুদ্ধ ঢাকায় থেকে দেখেছি। অনুভব করেছি একটা যুদ্ধ কীভাবে মানুষের দিনলিপিকে পাল্টে দিতে পারে। বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে আমার মতো শিশুর জীবনও। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমার মতো কত শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কতজন পরিবার হারিয়েছে, হারিয়ে ফেলেছে ঠিকানা। আমি সেই শিশুদের একজন যে অবরুদ্ধ ঢাকায় বা ভ’তুড়ে পাড়ায় মা-বাবার সাথেই ছিলাম - ভয়াবহ গোলাগুলি, চারদিকে থমথমে পরিবেশ, ভয়, পাড়ায় পাড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তল্লাশি উপেক্ষা করে।


কারণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, নৌকায় বা হেঁটে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উপায় ছিল না আমার এ্যাজমা রোগী আব্বার। দেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ ও বিপজ্জনক, তখন তা পুরোটা না বুঝলেও, পরে বুঝেছি আমাদের সবার জীবনের ওপর অনেক গভীর প্রভাব ফেলেছে এই সংগ্রাম। তাই হয়তো ঐ সময়ের এমন অনেক স্মৃতিই মনে তরতাজা রয়েছে। এখন মনেহয় সেসময় অনেককিছুই আমি বুঝতাম। কী জানি মানুষের জীবনে বড় ঘটনাগুলোর স্মৃতিই বোধহয় এরকম, যে-কোনো বয়সের মানুষই যা মনে রাখতে পারে।


আমাদের মানে বাচ্চাদের সারাদিন পাড়ায় ঘোরাঘুরি আর খেলা ছাড়া কোনো কাজ নেই। স্কুল তেমনভাবে চলছিল না। কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি টুংটাং বেল বাজানো বেবি আইসক্রীমওয়ালা আর আসছে না। প্রতি সপ্তাহে পাড়ায় একটা ভাল্লুকভালা আসতো খেলা দেখাতে, একটা বাঁদরনাচওয়ালাও আসতো, একটা সাপুড়েও বাঁশি বাজিয়ে খেলা দেখাতো, সাপের খেলা। কিন্তু পরিস্থিতি কেমন যেন থমথমে হয়ে যাওয়াতে সবাই কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। বাতাসে আনন্দ মুছে গিয়ে শুধু ঠান্ডা, গুমোট একটা অনুভ’তি। ছোট হলেও বুঝতে পারছিলাম কোথায় যেন একটা তাল কেটে গেছে।


২৫ মার্চের কালরাত ছিল ভয়াবহ একটি রাত। যা ভোলা অসম্ভব। সম্ভবত রাতের খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ চারিদিক থেকে গুলি, মেশিন গান এবং আরো অনেক শব্দ ভেসে আসতে থাকলো। কাঁচের জানালা দিয়ে আগুনের আলোও দেখা যাচ্ছিল। আব্বা, আম্মা, আমি লাইট নিভিয়ে খাটের নীচে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের কাছে ছিল কিছু শুকনো বিস্কুট আর একটা ছোট্ট হারিকেন। পরে শুনেছি পাকিস্তানিরা যেন নির্বিঘ্নে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য, ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্ল্যাক আউট চলছিল।


স্পষ্ট মনে আছে আমি আমার ছোট দুইটা পুতুল নিয়ে খাটের নীচে ঢুকেছিলাম। মনে ভেবেছিলাম যদি দুষ্টু লোকেরা আসে, তাহলেতো আমার পুতুল দুটিকে নিয়ে যাবে। সেদিন ভাবিনি ঐ হায়েনারা আমার দেশকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সেই রাতেই বর্বর হামলা চালিয়েছিল। শুধু আমার পুতুল কেন, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে ওরা নির্বিচারে। অগণিত নারী শিশুকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।


গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দে ভয় পেয়ে আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,“আব্বা কী হচ্ছে চারিদিকে? এত গুলির শব্দ, এত আগুনের আলো কেন দেখা যাচ্ছে? ওরা কি আমাদের মেরে ফেলবে?” কী ভয়ংকর ট্রমা হয়েছিল তখন, তা আমি এখনো কল্পনা করতে পারিনা। আমাদের দৈনন্দিন সাদামাটা কিন্তু আনন্দময় জীবনে বড় একটা ঝড় এসেছিল। আব্বা বলেছিল, “মা পশ্চিম পাকিস্তান নামে একটা শয়তান দেশ আছে, ওরা আমাদের দেশকে কেড়ে নিতে চায়। আমাদের সবাইকে যুদ্ধ করতে হবে, যার যা কিছু আছে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আব্বা বলেছিল কাঁদিস না মা। তুই তোর পুতুল সামলা, দেশের মানুষ দেশটাকে সামলাবে।”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও