বধ্যভূমির বাংলাদেশ, জেনোসাইড ১৯৭১

ঢাকা পোষ্ট নজরুল সৈয়দ প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৬

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে আছে হাজার হাজার বধ্যভূমি যেগুলো নীরবে বহন করে চলেছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশে সংগঠিত জেনোসাইডের প্রত্যক্ষ স্মৃতি ও প্রমাণ। রয়েছে হাজার হাজার টর্চার সেল, যেগুলো বহন করছে হত্যা আর নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস। গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলেছে যুদ্ধের ক্ষত।


‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালির সবচেয়ে গর্বের যেমন, তেমনি সবচেয়ে দুঃখেরও। এই দুঃখ শুধু হত্যা, নির্যাতনের না; দুঃখটা এখানেও যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণহত্যা, নির্যাতন এবং জাতিগত নিধনের প্রচেষ্টা আজও ‘জেনোসাইড’ এর স্বীকৃতি পায়নি! এখনো আমরা মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে তর্কে লিপ্ত!


তার আগে একটু করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন ‘জেনোসাইড’ কী?


‘Genocide’ শব্দটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অভিধানে বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন পুরো পৃথিবীতেই বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা এবং ক্রমশ তার পরিধি বাড়ছেই। একদিকে ইউক্রেন বা রাখাইন, অন্যদিকে গাজা গণহত্যা যখন জাতিগত নিধনের সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করছে, যখন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন ফিলিস্তিনি জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করার—তখন ‘জেনোসাইড’ শব্দটি ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে পুরো বিশ্বে।


‘জেনোসাইড’ এর তাত্ত্বিক ভিত্তি নির্মাণ করেন রাফায়েল লেমকিন নামের একজন ব্যক্তি। ১৯৪৪ সালে তার বই Axis Rule in Occupied Europe-এ তিনি প্রথম ‘genocide’ শব্দটি ব্যবহার করেন (Lemkin, 1944)। গ্রিক শব্দ genos (গোষ্ঠী/জাতি) এবং লাতিন-cide (হত্যা) মিলিয়ে তিনি নতুন একটি ধারণা তৈরি করেন যার অর্থ ‘একটি জাতিগোষ্ঠীকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা’।


রাফায়েল লেমকিন ছিলেন একজন আইনজীবী। ১৯০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন পোল্যান্ডে। অনেকদিন ধরেই তিনি আসন্ন যুদ্ধ এবং ইহুদিসহ ইউরোপের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করছিলেন, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। ১৯৩৯ সালে একদিক থেকে জার্মানির নাৎসি বাহিনী আর অন্যদিক থেকে সোভিয়েত আর্মি দখল করে নিলো পোল্যান্ড। পরিবার আর স্বজন হারিয়ে লেমকিন শরণার্থী হলেন। নয়তো উপায় ছিল না।


নাৎসিদের কাছে তিনি শত্রু-ইহুদি বলে আর সোভিয়েত আর্মির কাছে শত্রু কমিউনিজম বিরোধিতার কারণে। কোনো পক্ষই তাকে রক্ষা করবে না, বরঞ্চ হত্যা করতে উদগ্রীব। পরিবারের প্রায় ৪৯ জন স্বজনকে হারিয়ে পালানো ছাড়া লেমকিনের কোনো উপায় ছিল না।


সুইডেন হয়ে নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে জাপান, সেখান থেকে জাহাজে চড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে সম্বল একটি সুটকেস। যাতে আছে নাৎসি অধিকৃত ২২টি দেশে জারিকৃত ফরমান। এগুলো থেকে তিনি একটি প্যাটার্ন তৈরি করলেন যা একটি নতুন অপরাধকে চিহ্নিত করে। শুধু হত্যা বা নির্যাতন না, এই সবকিছুর সমন্বয়ে যে একটি জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলে যুদ্ধের নামে, তাকেই তিনি রূপ দিতে চেষ্টা করলেন আইনি ভাষায়।


লিখলেন বিখ্যাত বই Axis Rule in Occupied Europe. যেখানে তিনি ‘জেনোসাইড’ শব্দটির সঙ্গে পৃথিবীকে পরিচিত করিয়ে দিলেন একটি কাঠামোগত ও পরিকল্পিত অপরাধ হিসেবে, যা অন্য সব অপরাধ ছাড়িয়ে ‘Crime of the Crimes’। তিনি বললেন-


‘Genocide is the coordinated plan to destroy, in whole or in part, a national, ethnic, racial or religious group.’


অর্থাৎ কোনো জাতি, ভাষাগত, ধর্মীয় বা বর্ণগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সংগঠিত অব্যাহত সহিংসতা, দমনপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ, সাংস্কৃতিক দমন—এসবই জেনোসাইডের অন্তর্ভুক্ত।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি সেখানে বিচারকদের বলতে বা বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে এই যুদ্ধের বিচার শুধুমাত্র হত্যাকাণ্ড বা নির্যাতন দিয়ে করলে তা যথেষ্ট হবে না, এই বিচার হওয়া উচিত জেনোসাইড হিসেবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বললেন যে যেহেতু এই যুদ্ধে ইহুদি, জিপসি, স্লাভ, পোলিশ প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সুস্পষ্ট চেষ্টা করেছে জার্মানরা এবং জাতি হিসেবেই জার্মানরা এই প্রচেষ্টাকে গর্বের হিসেবে নিয়েছিল তাই গোটা জার্মান জাতিই ‘জেনোসাইড’ আইনে অপরাধী।


অনেক চেষ্টাতেও তিনি সফল হতে পারলেন না। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে ‘জেনোসাইড’ আইনি ভিত্তি পেল না। কিন্তু তিনি তাই বলে হাল ছেড়েও দিলেন না। ইউরোপে, আমেরিকায় তিনি একই ‘ঘ্যানঘ্যান’ চালিয়ে গেলেন।


তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর নাছোড়বান্দার মতো আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘে আসতে শুরু করলো অসংখ্য চিঠি। সারা বিশ্ব থেকে অসংখ্য ব্যক্তি আর সংগঠন চিঠি পাঠাতে থাকলো জাতিসংঘে। সব চিঠির এক বক্তব্য, এক ভাষা—‘জেনোসাইডকে আন্তর্জাতিক অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিতে হবে।’ ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেদিন জাতিসংঘে গৃহীত হলো জেনোসাইড কনভেনশন বা The Convention on the Prevention and Punishment of the Crimes of Genocide। কোনো রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থা না, জেনোসাইড স্বীকৃত পেলো আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও