সার ব্যবস্থাপনায় করণীয় কী?

ঢাকা পোষ্ট সমীরণ বিশ্বাস প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৯

বাংলাদেশের সার ব্যবস্থাপনা কৃষি উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দেশে প্রতি মৌসুমে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, ডিএপি ও জিপসামসহ বিভিন্ন সারের বিশাল চাহিদা থাকে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে সার বিতরণ করে এবং বিএডিসি ও বেসরকারি খাত সরবরাহ চেইন পরিচালনা করে।


তবে অনেক সময় আমদানি বিলম্ব, পরিবহন সংকট, গুদামজাত ব্যবস্থার ত্রুটি, মাঠপর্যায়ে চাহিদা—সরবরাহের অসামঞ্জস্য এবং অসাধু মজুতদারির কারণে সংকট দেখা দেয়। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত হলে সার ব্যবস্থাপনা আরও স্থিতিশীল ও কৃষকবান্ধব হতে পারে।


বাংলাদেশের সার ব্যবস্থাপনা:


বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন নির্ভর করে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের প্রাপ্যতার ওপর। বর্তমানে দেশে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, ডিএপি ও জিপসামসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রধানত আমদানি ও রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোয় উৎপাদনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।


সরকার কৃষকদের সহায়তার জন্য ভর্তুকি প্রদান করে সারের দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখছে। তবে বাস্তবে সার ব্যবস্থাপনায় এখনো কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়ে গেছে, যা কৃষকদের মৌসুমভিত্তিক সংকটে ফেলছে।


সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা, আমদানি নির্ভরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ওঠানামা এবং পরিবহন জটিলতার কারণে কখনো কখনো মাঠ পর্যায়ে সার পৌঁছাতে দেরি হয়। তাছাড়া ডিলার, উপ-ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্বচ্ছ মজুতদারি ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার প্রবণতা অনেক সময় সংকটকে তীব্র করে। সরকারি নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় কিছু এলাকায় ইউরিয়া না হলেও TSP, MOP ও DAP সারের দাম বাড়তি দেখা যায়।


বর্তমান সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (DAE) সার বিতরণ তদারকি, তথ্যভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ডিজিটাল সারের চাহিদা নিরূপণ, মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বৃদ্ধি, হটলাইন চালু এবং অনিয়ম প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এসব উদ্যোগ সার ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করছে। পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে জৈব সার, কম্পোস্ট এবং সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা (IPNS) ব্যবহার বাড়ানোর প্রচারণা চলছে।


সার সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা:


বাংলাদেশের ফসল চাষে সার অন্যতম প্রধান উপাদান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সারের, যেমন TSP, MOP, DAP, জিপসাম সরবরাহ ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি কৃষকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে প্রথমেই উঠে আসে সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা।


আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য ওঠানামা, আমদানিতে দেরি, প্রয়োজনীয় সারের বিপণন চক্রে সমন্বয়হীনতা, এই সবকিছু মিলেই বাজারে সময়মতো সার পৌঁছায় না। ফলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে ঘাটতি দেখা দেয়।


আরেকটি কারণ হলো চাহিদা বৃদ্ধি। রবি মৌসুমে আলুর আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা একযোগে সার কিনতে ছুটে যান, কিন্তু সরবরাহ সেই অনুপাতে বাড়ে না। এতে বাজারে চাপ তৈরি হয় এবং দাম বেড়ে যায়। সেই সুযোগে মজুতদারি ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি, এই অনৈতিক কার্যক্রম আরও পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। অনেক সময় ডিলার পর্যায়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যার ক্ষতি হয় মাঠের কৃষকের।


এছাড়া মাঠ পর্যায়ে পরিকল্পনার অভাব একটি বড় সমস্যা। সারের প্রয়োজনের সঠিক পূর্বাভাস, বণ্টন ব্যবস্থাপনা, ডিলার নির্বাচন ও মনিটরিংয়ে ত্রুটি থাকলে সারের ঘাটতি আরও তীব্র হয়। মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৃষকদের সমন্বয় না থাকায় প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।


সার সিন্ডিকেট ও মজুতদারের দৌরাত্ম্য:


বাংলাদেশের কৃষিখাতে সার সরবরাহে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের দৌরাত্ম্য বহুদিন ধরেই একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে সার দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে অনেক এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ী, ডিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।


মৌসুমের শুরুতে চাহিদা বাড়লে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সার মজুত করে রাখে, ফলে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মূল উৎপাদনকারী কৃষকরা, বিশেষত আলু, ধান, গম, ডাল ও সবজি চাষিরা। সার সিন্ডিকেট সাধারণত কয়েকজন ডিলার ও গুদাম মালিককে কেন্দ্র করে তৈরি হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও