বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জমানায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে সময়ের মানুষ ছিল মোশরেক। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আরব ছিল একটি পরস্পর বিরোধী জাতি। তাদের মধ্যে বহু মারাত্মক পাপের প্রচলন ছিল। মদের প্রতি সাংঘাতিকভাবে আসক্ত ছিল আরবরা। মদের নেশায় বেহুঁশ হওয়া কিংবা মাতলামি করা তাদের নিকটে কোনো দূষণীয় ব্যাপারই ছিল না বরং তা প্রশংসার ব্যাপার ছিল। কোনো অভিজাত ব্যক্তির আভিজাত্যের চিত্রসমূহের মধ্যে এই চিত্র থাকারও প্রয়োজন ছিল যে, তিনি তার বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে জোর করে মদ খাওয়াবেন।
ধনী ব্যক্তিদের জন্য জরুরি ছিল, দিনে পাঁচবার মদের আসর বসানো এবং এই ধরনের আসর ছিল তাদের জাতীয় ক্রীড়া। জুয়া খেলাকে তারা বদান্যতা ও গৌরবের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। যুদ্ধের সময় তারা জুয়ার মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা সংগ্রহ করতো। সেই যুগে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। কোনো কোনো জাতির মধ্যে পিতা কর্তৃক আপন কন্যাকে হত্যা করাটা সম্মানের বিষয় ছিল। সেই যুগে দাস প্রথা একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল। তারা আশ-পাশের গোত্রের লোকজন ধরে এনে গোলাম বানিয়ে রাখতো। গোলামদের কোনো হক বা অধিকার ছিল না। প্রত্যেক মালিক তার গোলামের সাথে যেমন খুশী ব্যবহার করতো। এতে কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা ছিল না। এমনকি হত্যা করলেও কেউ কোনো অভিযোগের সম্মুখীন হতো না। দাসীদের সাথে যৌনাচার মালিকদের জন্য বৈধ বলে স্বীকার করা হতো। দাসীদের সন্তানরাও গোলামরূপে গণ্য হতো। নিজের ঔরসজাত সন্তানের মা হলেও দাসী দাসীই থাকতো।
‘রাসুল করিম (সা.) গোলামদের সাথে আহার করতেন এবং গম ভাঙানোর সময় গোলামরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি তাদের সাহায্য করতেন। বাজার হতে জিনিসপত্র ঘরে বহন করে নিয়ে যাওয়াকে তিনি হেয় মনে করতেন না। ধনী দরিদ্রের সঙ্গে একইভাবে মুসাফাহা (করমর্দন) করতেন। সর্বপ্রথম সালাম করতেন। তিনি কোনো নিমন্ত্রণকে অবজ্ঞা করতেন না যদিও বা সেই নিমন্ত্রণ শুধু খেজুরের হতো। তিনি দুঃখীদের পরিত্রাণ দান করতেন। তিনি কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও দয়ালু ছিলেন। তার আচার-ব্যবহার উত্তম ছিল’
উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে জন্মগ্রহণ করেন মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বাল্যকাল থেকেই তার প্রকৃতিতে মানবের কল্যাণ করার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হতো। মানুষের লড়াই ঝগড়ার মধ্যে তিনি কখনও নিজেকে জড়াতেন না। বরং লড়াই ও কলহ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টাই করতেন।
আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে তিনি (সা.) প্রথম কুরআনি ওহি যখন লাভ করেন, তখন তিনি হজরত খাদীজার (রা.) কাছে এলেন। তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। হজরত খাদীজা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে’? তিনি পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলেন এবং বললেন, ‘আমার মতো দুর্বল মানুষ এত বড়ো বোঝা কেমন করে বইবে?’ হজরত খাদীজা (রা.) তখন তাকে বলেছিলেন, ‘খোদার কসম!’ এই বাণী আল্লাহতায়ালা আপনার ওপর এ জন্য নাজিল করেননি যে, তিনি আপনাকে অযোগ্য ও অকৃতকার্য প্রমাণিত করবেন এবং আপনার সঙ্গ ছেড়ে দেবেন। খোদা কি কখনও এমন করতে পারেন?
আপনি তো সেই ব্যক্তি, যিনি আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেন, গরীব ও অসহায় ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করেন, তাদের বোঝা নিজে বহন করেন। যে চরিত্র গুণ এদেশ থেকে উঠে গেছে তা সবই আপনার মাধ্যমে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আপনি অতিথির সেবাকারী, দুঃখী মানুষের সহায়তাকারী। এই রকম মানুষকে কি আল্লাহতায়ালা কখনও পরীক্ষার মধ্যে ফেলে রাখতে পারেন?