জটিলতার জট খুলতে হবে

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৫

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ৭ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।


গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। কারও কারও মতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই একমাত্র সিদ্ধান্ত, যা এ সরকার শিরদাঁড়া ঋজু করে নিয়েছে। অবশ্য আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন ‘আমরা কোনো আলটিমেটাম দেইনি, আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার সরকারের মতো পদক্ষেপ নেবে।’


এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিক প্রলম্বিত আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নের ওপর দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারেনি। সনদে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি নিয়েও রয়েছে তীব্র মতপার্থক্য ও নোট অব ডিসেন্টের ব্যবহার। বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামীর মতপার্থক্য আরও তীব্রভাবে সামনে এসেছে। এমন যখন অবস্থা, তখন আমরা কি আশা করতে পারি বিবদমান দলগুলো সুবোধ বালকের মতো এক টেবিলে বসে নিজেরা একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে?


গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ২টি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর একটি হলো, সনদের সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাশ হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসাবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ে সংসদ এটি করতে ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। অন্য বিকল্প সুপারিশটিও প্রায় একই। সেই সুপারিশে বলা হয়েছে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করা হবে। না হলে কী হবে তার উল্লেখ নেই। গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকারই ঠিক করবে গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।


ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে ৩টি স্তরে, যথাক্রমে-আদেশ জারি, গণভোট এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা দেওয়া। সবকিছুর পর, অর্থাৎ অনেক তর্কবিতর্কের পর মূল মতবিরোধ এখন গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা, না রাখা নিয়ে।


বিএনপির মতে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, আযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ ৮টি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ ৫টি দাবিতে আন্দোলন করছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।


গণভোট নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত কিংবা নির্বাচনের সঙ্গে যুগপৎ হওয়া উচিত-এমন বিতর্ক বালখিল্যতারই নামান্তর। কারণ, নির্বাচনের আগে হোক অথবা নির্বাচনের সময়ই হোক, সংবিধান সংস্কারের ওপর এর প্রভাব একই রকমের হবে। তা ছাড়া নভেম্বরে গণভোট করতে হলে গণভোটের ইস্যুগুলো জনগণের কাছে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে না। তদুপরি যে বিষয়টি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো সংবিধান সংস্কারবিষয়ক কয়েক ডজন প্রস্তাব কী করে গণভোটের জন্য মাত্র একটি প্রশ্নে সন্নিবেশিত করা যাবে! এ বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো কথাবার্তা হচ্ছে না, অথচ হওয়া উচিত।


বিএনপি মনে করে, জুলাই সনদ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায়, তার ভিত্তিতে একটি নতুন অধ্যাদেশ করে গণভোট হবে। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করার পক্ষে। বিএনপি আরও মনে করে, কোন কোন প্রস্তাবে কোন কোন দলের ভিন্নমত আছে; সেগুলো জুলাই সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতিহারে উল্লেখ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সুতরাং গণভোটে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে হ্যাঁ জয়মুক্ত হলে যারা জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হবে, তারা ভিন্নমত অনুসারী সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, গণভোটের রায়ের সঙ্গে নির্বাচনি রায়ের বিরোধ দেখা দিলে কোনটি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে? আমরা সংবাদপত্রে যতটুকু দেখেছি তাতে দেখা গেছে, বিএনপি বেশকটি ব্যাপারে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। বিএনপি কেন বিভিন্ন প্রশ্নে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিল, তার ব্যাখ্যা জনগণের কাছে আদৌ স্পষ্ট করা হয়নি। এগুলো স্পষ্ট হওয়া উচিত। যতটুকু বুঝি, সংবিধান সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। এর জন্য বিদ্যমান সংবিধানে যেসব ক্ষেত্রে একজনের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার মতো অবস্থান রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, দেশ চালাতে গিয়ে ক্ষমতার অতি বিকেন্দ্রীকরণ যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা বাস্তবানুগ হবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও