নির্বাচনের অপেক্ষায় দেশের অর্থনীতি

যুগান্তর মুস্তফা কে মুজেরী প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৩

দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল গত ১৭ অক্টোবর বহুল প্রত্যাশিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক ছোট ছোট কিছু সমস্যা থাকলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী মাসগুলোতে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো কোন পর্যায়ে যাবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।


বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিগত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে না পারাটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই সমস্যায় রয়েছে। বিশেষ করে যারা নিম্নবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, তাদের দুর্দশার কোনো সীমা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু তারপরও খুব একটা সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি না কমার কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আরও বেড়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেন। এ অর্থ কোনো না কোনোভাবে বাজারে চলে আসবে। ফলে আগামী কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি কমার পরিবর্তে বরং আরও বেড়ে যেতে পারে। অনেক দিন ধরেই দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন উত্তরণের পথে ছিল, সেই সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা দেখা দেয়। নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকাংশ দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারলেও আমরা এ ক্ষেত্রে তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আমাদের দেশে নির্বাচনের আগে কিছু পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যারা নির্বাচনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন, আইনগতভাবে তাদের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার কথা, প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। নির্বাচনকালে যেসব খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়, তা অনুৎপাদনশীল খাত। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে মূল্যস্ফীতি আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা সাধ্যমতো বিভিন্ন কাজে অর্থ ব্যয় করবেন। এ সময় বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ কমে যেতে পারে।


ব্যক্তি খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ না হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে না। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ অনেক দিন ধরেই মন্থর হয়ে আছে। বিনিয়োগের হার জিডিপির ২২/২৩ শতাংশে আটকে আছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেটা অর্জিত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিনিয়োগ বাড়ানোর বেশকিছু উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। কিন্তু সেভাবে সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। কারণ স্থানীয় ও বিদেশি উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চান। তারা নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত বড় ধরনের বিনিয়োগ করবেন বলে মনে হয় না। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ করেছেন। কোনো দেশে ব্যক্তি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহী হন না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেই দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারপরই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমরা এখনো দেশে বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সবার দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে থাকবে। এ অবস্থায় দেশে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় ও বিদেশে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।


দেশে ব্যক্তি খাতে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় না হলে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে না। প্রত্যাশিত মাত্রায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ২ শতাংশ। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশে যে শুধু দারিদ্র্যের হার বাড়ছে তাই নয়, একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধনী-দরিদ্র্যের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য। গিনি সহগ মোতাবেক, বাংলাদেশের বৈষম্যসূচক এখন দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট। এটা দশমিক ৫০০ পয়েন্টে পৌঁছলে বাংলাদেশ অতি বৈষম্যের দেশ হিসাবে চিহ্নিত হবে। ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল মোট জাতীয় আয়ের ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেসময় সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল মোট জাতীয় আয়ের পৌনে ৩ শতাংশ। ২০২২ সালের হিসাব মোতাবেক, শীর্ষ ১০ শতাংশ বিত্তবান মানুষের হাতে চলে যায় মোট জাতীয় আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের অধিকারে ছিল মোট আয়ের ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ বিত্তবান ও বিত্তহীনের মাঝে ব্যবধান দিনদিন বাড়ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও