উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বিপর্যয়: কার দায় কতটা

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৪

উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট হওয়ার পর থেকে ভাবছি এতগুলো ছাত্রছাত্রী যে অকৃতকার্য হলো, তাদের এবং তাদের পরিবারের উপরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দুই বছরের পড়া আবার পড়ে ছাত্রছাত্রীদের পরবর্তী পরীক্ষায় বসতে হবে। এরমধ্যে কতজন টিকবে, আর কতজন ঝরে পড়বে, তা কে জানে। বিশেষ করে ছাত্রীরা ফেল করলেই পরিবার বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আর অধিকাংশ পরিবারের পক্ষে শিক্ষাব্যয় পুনরায় বহণ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।


ছেলেমেয়ে দ্রুত পাস করে বেরিয়ে যাবে, চাকরি বা ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, পরিবারের দায়িত্ব নেবে। মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নিঃসন্দেহে চোখে সরষে ফুল দেখছে। এবছর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে, সংখ্যার হিসেবে যা পাঁচ লাখের বেশি।


দেশে দু’শোরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষায় পাসের হার শূন্য। অবাক হয়ে গেলাম এই ফলাফল শুনে। তাহলে কি এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক লাইনও পড়াশোনা করানো হয়নি? টেস্ট-প্রিটেস্ট পরীক্ষায় কি একজন ছাত্রছাত্রীও পাস নাম্বার পায়নি? শিক্ষকদের ভূমিকা কী ছিল? তারা কেন অভিভাবকদের জানায়নি যে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করছে না, পাশ নাম্বার তুলতে পারছে না। কিভাবে সম্ভব ২০২ টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পাশের হার হওয়া? শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জানতে চাইবে এই ফল বিপর্যয়ের কারণ কী?


বোদা পাইলট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে কেউ পাস করেনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানিয়েছেন ভর্তি হওয়ার পরে সবার বিয়ে হয়ে গেছে, এজন্য কেউ পাস করতে পারেনি। এটা কোন যুক্তি হতে পারে? কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন আগে থেকেই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি? সবকিছু মিলিয়েই বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম। এবছর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় জিপিএ-৫ এর সংখ্যায় বেশ কমেছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ফলাফলের তুলনায় এবছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। সেদিক থেকে অনেকেই এবারের রেজাল্টকে 'বিপর্যয়' মনে করছেন। এই বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাস করতে না পারার বিষয়টি ঘিরে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।


প্রশ্ন উঠেছে এতটা বিপর্যয়ের কারণ কী? আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতায় যতটুকু বা যেরকম লিখেছে, মূল্যালয়ের পর সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে গড় রেজাল্টে। তাহলে গত দুই দশকে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-র সংখ্যা বাড়ার যে ধারা দেখা গিয়েছিল সেখানে ছেদ পড়লো কেন? শুধু উচ্চ মাধ্যমিক নয়, মাধ্যমিকেও একইভাবে ফল বিপর্যয় হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, গ্রেস মার্কিয়ের মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভালো ফলাফল দেখানো হতো। (বিবিসি বাংলা) তাহলে ধরে নিতে হবে এখন সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তাই পাসের হার এত কম হয়েছে। সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষার্থীরা আদতে কী এবং কতটা শিখছে? তারা কি ভালো ফলাফল ও খারাপ ফলাফলে একই জিনিস শিখছে?


প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করছি বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টের কথা। সেখানে বলা হয়েছে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের লার্নিং পোভার্টি ব্রিফ অনুযায়ী, দেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৫১ শতাংশই তাদের বয়স উপযোগী একটি সাধারণ লেখা পড়ে তা বুঝতে পারে না। এ হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও এটি মৌলিক শিক্ষার মানে বড় ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।


বাংলাদেশের শ্রেণিকক্ষে আজ লাখ লাখ শিশু বই খুলে উচ্চারণ করতে বা পড়তে জানে, কিন্তু তাদের অনেকেই আসলে যা পড়ে, তা বোঝে না। দেশে সাক্ষরতার হার বাড়লেও শিক্ষার্থীদের বোঝার ক্ষমতার ক্ষেত্রে গভীর সংকট রয়ে গেছে, যা পাঠ করে তার শাব্দিক ও অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারে না অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী। সাম্প্রতিক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা নিয়ে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে ইউনেস্কো ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও