ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কার, নাকি সংস্কারের জন্য আরেকটি ঐকমত্য?

ডেইলি স্টার মহিউদ্দিন আলমগীর প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৬

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বহু আলোচিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জুলাই সনদে সই করেছে। এটি দেশের গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৈরি একটি ঐতিহাসিক দলিল।


গত বছর ছাত্রনেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান থেকে জন্ম নিয়েছে এই স্বপ্ন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, সেই আন্দোলনের স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও এই সনদে সই করেনি।


ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব ছিল ছয়টি প্রধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা ও গ্রহণ করা। এই কমিশনগুলো ছিল সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংক্রান্ত।


দলগুলো অন্তত ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক বিষয় সরাসরি সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত।


সনদের মূল প্রস্তাবে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে—সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং কেন্দ্রের একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নানা উদ্যোগ।


এই লক্ষ্যগুলো অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সাহসী, যা দেশের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে।


কিন্তু ঠিক এখানে কিছু ঝুঁকিও লুকিয়ে আছে।


যদি সনদ বাস্তবায়নের স্পষ্ট সময়সূচি না থাকে, তাহলে এটি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভুলে যাওয়া প্রতিবেদন ও পূরণ না হওয়া প্রতিশ্রুতির ভাণ্ডারে আরেকটি সংযোজন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।


বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমনটা হতে দেখেছে—পরিকল্পনা তৈরি হয়, ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, কমিশন গঠিত হয়। তারপর শেষমেষ তা তুলে রাখা হয় আলমারিতে—উল্লেখ করা হয় শুধু বক্তৃতায়, আর বাস্তবে থাকে উপেক্ষিত।


এই ধরনের ভাগ্য এড়াতে জুলাই সনদকে একটি সুসংহত রোডম্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এতে জরুরি কাজ এবং দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। ফলে অগ্রগতির মাত্রা পরিমাপ করা সম্ভব হবে।


ইতিহাস আমাদের সুযোগ হারানোর কঠিন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।


১৯৯০ সালের ২১ নভেম্বর—হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় চলছিল। তখন তিনটি বড় জোট—আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট এবং পাঁচদলীয় বামপন্থী জোট মিলে তিন জোটের রূপরেখা স্বাক্ষর করে।


ঘোষণাপত্রে এরশাদ শাসনের অবসান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এতে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, আইন শাসন বজায় রাখার কথা বলা হয়েছিল। এমনকি ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে স্বায়ত্তশাসিত করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি প্রস্তাব ছিল।


কিন্তু এরশাদের পতনের পরে এবং গণতন্ত্র ফিরে আসার পরও এই প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই বিলুপ্ত হয়ে যায়।


এর এক বছর পর ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিকল্পনা উপদেষ্টা রেহমান সোবহানের নেতৃত্বে ২৯টি টাস্কফোর্স গঠন করে। বাংলাদেশের আড়াইশো জনেরও বেশি প্রতিভাবান ব্যক্তি একসঙ্গে কাজ করেন এতে। তারা এমন নীতি সংস্কারের বিস্তারিত সুপারিশ তৈরি করেছিলেন, যা নতুন নির্বাচিত সরকারের জন্য পথনির্দেশক হতে পারতো।


টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনগুলো গভীর ও বাস্তবমুখী হওয়ায় প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সরকার বেশিরভাগ সুপারিশ উপেক্ষা করে।


পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই ধারা ভাঙার চেষ্টা করে। তারা রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন (আরআরসি) গঠন করে দেশের পুরনো শাসন, প্রশাসন এবং অর্থনৈতিক কাঠামো আধুনিকীকরণের জন্য। কমিশনের সভাপতি ছিলেন আকবর আলী খান। ওই কমিশন মোট ১৫৩টি সুপারিশ জমা দেয়।


কিন্তু ২০০৯ সালের অক্টোবর নাগাদ আকবর আলী খান পদত্যাগ করেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের অসহযোগিতা ও কর্মী প্রত্যাহারের কারণে কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। ওই সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশই বাস্তবায়িত হয়েছিল। তখন সরকার শুধু দুটি প্রস্তাবে কাজ করেছে।


আরআরসির ২০০৯ সালে প্রকাশিত ১৩১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি এখনও অপূর্ণ সংস্কারের প্রমাণ। এটি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ, যার অধিকাংশই ব্যবহার হয়নি।


এবার গণঅভ্যুত্থানের পরও এমন একটি সনদ তৈরি হলো, যা বাংলাদেশের দীর্ঘ ও জটিল রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার ব্যর্থ সংলাপের পর অর্জিত। বছরের পর বছর ধরে বড় দলগুলোর মধ্যে একমত হওয়ার প্রচেষ্টা গভীর অবিশ্বাসের কারণে বারবার ভেঙে গেছে।


জুলাই সনদ আগেকার অন্যান্য নথি থেকে আলাদা, কারণ এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা করে তৈরি। এসব আলোচনার মাধ্যমে দলগুলো দীর্ঘদিনের বিতর্কিত সংস্কারের বিষয়গুলোতে একমত হয়েছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও