জুলাই সনদ: ঐক্যসূত্র নাকি বিভাজনের রূপরেখা

জাগো নিউজ ২৪ মোস্তফা হোসেইন প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬

দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার একটি অধ্যায় শেষ হলো ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে ২৪টি দলের স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে এই দালিলিক প্রমাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বসহ আমলে এনেছিল শুরুতেই। সেই লক্ষ্যেই সংস্কার কমিশনসমূহ গঠন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।যাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো অভ্যুত্থানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটা ঐক্যসূত্র তৈরি করা।যাতে অংশীজনদের স্বর্বস্বীকৃতি-সমর্থন থাকবে। মূল বিষয় ছিলো অভ্যুত্থানের মতোই আরেকটি ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা তৈরি করা,যার মাধ্যমে আগামী বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। সেই সুবাদেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে,তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী তারা সমন্বিত একটি চুক্তিপত্র তৈরি করে যা জুলাই সনদ নামে আখ্যায়িত।


সবসময়ই বলা হয়েছে,এই সনদ মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যসূত্র তৈরি হবে-যার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিশ্চিত হবে। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যেও তাই বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন,‘সমস্ত জাতি একসঙ্গে হয়ে,সমস্ত রাজনৈতিক নেতা একসঙ্গে হয়ে তাঁরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন।এরকম ঘটনা ঘটবে,এরকম কেউ আমরা চিন্তাও করতে পারিনি’। তিনি বক্তৃতার আরেক অংশে বলেছেন,‘ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে।’


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো সবসময়ই ঐক্যের কথা বলেছেন।তারা আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন,রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের কল্যাণে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। নিজেদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধে তারা জাতীয় স্বার্থকে স্থান দেবে।জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এমন আশাবাদ পোষণ স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু গত ১৩/১৪ মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং সর্বশেষ জুলাই সনদ উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক ক্রিয়া-কর্ম এই ঐক্যসূত্র কতটা কার্যকর হবে তা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।


বাংলাদেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল আছে।তাদের মধ্যে ৩৩টি দলকে ডাকা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্বের আলোচনায়। অর্থাৎ এই দলগুলোর বুদ্ধি-পরামর্শ গ্রহণকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যৌক্তিক মনে করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে আরও শ’খানেক দলের দোষ কি? বলা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারীদের মতামত প্রদানের সুযোগ নেই। তাইলে ধরে নিতে হবে প্রায় ১শত দল জুলাই অভ্যুত্থানে বিরোধিতা করেছিল? যদি বলা হয় জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতে নিয়োজিত দলগুলোকেই ডাকা হয়েছে। সেটাও কি হয়েছে? ৫২টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনপ্রাপ্ত। এই দলগুলোর মধ্যে কি শুধু ১৮টি দলই জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলো? এই ১৮টি দলের বাইরে একমাত্র আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ।বাকি দলগুলো কি সবাই আওয়ামী লীগের সহযোগী? এমন কিছু দল আছে যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলো নিবন্ধিতও বটে। কিন্তু তারা ডাকই পায়নি ঐকমত্য কমিশনে। একটি দল ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেও প্রত্যাখাত হয়েছে।


অন্যদিকে মোটামুটি বড় দল জাতীয় পার্টি ৮ আগস্ট এ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানসহ শুরুর দিকে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নিয়েছিল।পরবর্তীকালে তাদের ডাকা হয়নি।


সর্বশেষ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৩০টি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হয়েছে যাদের অধিকাংশই নাম সর্বস্ব। ডাকের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া বাকিগুলোও তেমনি। কিন্তু দলীয় সংখ্যা বিবেচনা করলে বাইরে থাকা দলগুলোর সংখ্যা বিশাল। সবচেয়ে বড় কথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অধিকাংশ তরুণদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শেষ মুহূর্তে এসে জুলাই সনদে সই না করে আমন্ত্রণ বহির্ভুত দলগুলোর কাতারে চলে গেছে কিনা এমন সন্দেহও অমূলক নয়।তর্কের খাতিরে মনে করা যাক এনসিপি সনদে সই করবে। তাইলে স্বাক্ষর না করা কিংবা আমন্ত্রণের বাইরে থাকা দলগুলো অধিক নয়?


প্রশ্ন হচ্ছে-তারা কি জুলাই সনদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করবে?তারা বলতেই পারে এই সনদ আমাদের নয়।অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বাইরে রাখা হলেও তাদের বৃহৎ সমর্থক গোষ্ঠী কিন্তু প্রকাশ্যেই আছে।অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সরব উপস্থিতি বলে দেয়,একটু সুযোগ পেলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিতে তাদের নামেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হবে। এই লুপ্ত শক্তি যদি আমন্ত্রণ বহির্ভূত দলগুলোর সঙ্গে সুর মিলায় তখন রাজনৈতিক পরিবেশ কি শান্ত থাকবে বলে মনে হয়?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও