একটি যোগ্য নেতৃত্ব একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করে দিতে পারে

জাগো নিউজ ২৪ সাইফুল হোসেন প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২১

একটি প্রতিষ্ঠান যখন ধীরে ধীরে ক্ষয়ের দিকে এগোয়, তখন অনেকেই ধরে নেন এটি তার স্বাভাবিক পরিণতি। তারা ভাবে, হয়তো বাজার পরিস্থিতি খারাপ, হয়তো কর্মীরা দক্ষ নয়, অথবা প্রতিষ্ঠানটির সময় শেষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো— অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার মূল জায়গাটি থাকে নেতৃত্বে। যোগ্য নেতৃত্বই পারে একটি রুগ্নকারণে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত অসংখ্য গবেষণা বলছে, নেতৃত্ব শুধু একটি প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা প্রতিষ্ঠানকে একটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেয়। ২০১৫ সালে Harvard Business Review-এর একটি গবেষণায় ১৯৭টি সংস্থার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মী উৎপাদনশীলতা এবং লাভ দুই-ই ছিল প্রায় ৩৭% বেশি। নেতৃত্ব মানেই শুধু দিকনির্দেশনা নয়, এটি হচ্ছে অনুপ্রেরণার উৎস, সংস্কৃতির রূপকার এবং স্থায়িত্বের গ্যারান্টি।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এখানে বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর দুর্নীতি, অপারদর্শিতা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা যায়— নতুন একজন সাহসী, সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানকে বদলে দেয় রাতারাতি না হলেও ধারাবাহিকভাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু যোগ্য নেতার কারণে ঘুরে - যেমন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দীর্ঘদিন ধরে লোকসান, সেবার মানহানি, দুর্নীতি এবং অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিনি সামরিক বাহিনী থেকে আগত, তিনি কাঠামোগত পরিবর্তন, স্বচ্ছতা, এবং টিমভিত্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে আবার কার্যকর ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার চেষ্টায় আছেন। যদিও পুরোপুরি পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ, তবু দেখা যাচ্ছে— নেতৃত্বে দৃঢ়তা আসলেই প্রতিষ্ঠান দিশা খুঁজে পায়।


McKinsey & Company এর একটি রিপোর্টে বলা হয়, “Transformational leadership is the most significant predictor of organizational turnaround.” এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে— প্রতিষ্ঠান যত বড়ই হোক না কেন, যদি শীর্ষ নেতৃত্বে থাকে একদল সাহসী, দূরদর্শী এবং পারদর্শী মানুষ, তবে সেই প্রতিষ্ঠান তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে, এমনকি আগের তুলনায় দ্বিগুণ কার্যকরী হতে পারে।


এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা দেখতে পাই— অ্যাপল, যেটি ১৯৯৭ সালে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল, সেটিকে ফিরে এনে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত করেন স্টিভ জবস। তিনি ফিরে এসেই শুধু প্রোডাক্ট পরিবর্তন করেননি, বরং বদলে দেন কোম্পানির কৌশল, সংস্কৃতি এবং লক্ষ্য। তিনি প্রতিষ্ঠানে ‘ইনোভেশন’কে কেন্দ্র করে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেন।


লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যোগ্য নেতৃত্ব মানে শুধু একজন হেভিওয়েট CEO নয়। এটি এমন একজন যিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, বাস্তবতার সঙ্গে সৎ থাকতে পারেন এবং অন্যদের ভেতরে নেতৃত্ব সঞ্চার করতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক নতুন প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যেই এই মনোভাব গড়ে উঠছে। যেমন Pathao বা ShopUp — তাদের প্রতিষ্ঠাতারা শুধু একটি আইডিয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠান শুরু করেননি, তারা নেতৃত্বের জায়গায় থেকে দল গঠন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন এবং বিনিয়োগ আনয়ন— সবকিছুতে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছেন। ফলে অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতায় নেমেছে।


যোগ্য নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভিশন বা দূরদৃষ্টির ক্ষমতা। একজন নেতা যদি ভবিষ্যতের রূপরেখা আঁকতে না পারেন, তবে তিনি কেবল একটি মেকানিক্যাল ম্যানেজার হয়ে থাকবেন, নেতা নয়। এমন নেতৃত্ব যে প্রতিষ্ঠানে থাকে না, সেখানে লক্ষ্য নির্ধারণ হয় না, অগ্রগতি হয় না, এবং কর্মীরা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তারা কেবল আদেশ পালনকারী হয়ে দাঁড়ায়, উদ্ভাবন বা সৃজনশীলতার জায়গা থাকে না।


সুইজারল্যান্ডের লিডারশিপ একাডেমি ২০২২ সালের এক গবেষণায় জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বে থাকে “empathy, decisiveness and transparency” — সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। করোনাকালেই এই বিষয়টি আবারও প্রমাণ হয়। যখন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান হিমশিম খাচ্ছিল, তখন কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নেতৃত্বের গুণে নিজেদের অভিযোজিত করতে পেরেছিল— যেমন দূরবর্তী কাজ, ডিজিটাল রূপান্তর, এবং মানবকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও