প্রযুক্তির অপব্যবহার : বাড়ছে অপরাধ পারিবারিক সহিংসতা

জাগো নিউজ ২৪ মাহফুজা অনন্যা প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৩

ময়মনসিংহের ত্রিশালের এক নৃশংস ঘটনার সংবাদ সম্প্রতি নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশকে। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত এক ছেলে, টাকা না পেয়ে নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকেই হত্যা করেছে! তারপর নির্মমভাবে তাদের লাশ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রেখেছে। পিতা—মোহাম্মদ আলী (৭০) ও মাতা—রানোয়ারা বেগম (৬০), যাদের শেষ আশ্রয় হওয়ার কথা ছিল সন্তানের হৃদয়ে, সেই সন্তানই পরিণত হয়েছে তাদের কবর খননকারী হিসেবে। এই ঘটনা কেবল এক পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমকালীন সমাজের এক ভয়াবহ সংকেত—একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল নেশার অন্ধকারে।


জানা যায়, প্রথমে মাকে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়, এরপর বাবাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে অন্তত চার ফুট গভীর গর্তে তাদের লাশ পুঁতে রাখা হয়। অভিযুক্ত ছেলে অনলাইন জুয়া খেলায় আসক্ত ছিল বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম উল্লেখ করেছে। সে টাকা চেয়েছিল পিতা-মাতার কাছে, কিন্তু তা না পেয়ে রাগের উত্তরে এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।


কিছুদিন আগে নরসিংদীর শিবপুরে একটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ছেলে তার মাকে হত্যা করেছে। খবর অনুযায়ী ড্রাগ নেশার কারণে ছেলে মার কাছে টাকা চেয়েছিল– কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হবিগঞ্জে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে ঝগড়ার পর, পনের বছর বয়সী মেয়েকে তার বাবার দ্বারা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এছাড়া কক্সবাজারে একটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে বাবা স্ত্রীর সঙ্গে নেশার টাকা নিয়ে ঝগড়ার সময় চার বছরের মেয়েকে একটি হাতুড়ির আঘাতে হত্যা করেন।


অনেক ঘটনাই ঘটছে পারিবারিক সহিংসতার সীমায়। “Violence against women & children” সংক্রান্ত পুলিশ রিপোর্ট এবং খবরে দেখা যাচ্ছে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে।“Intimate Partner Violence Survey 2024” বলছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন—তবে শিশু বা সন্তান দ্বারা অভিভাবক হত্যার তথ্য তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নরসিংদীতে মে ২০২৫ সালে এক ছেলে তার মাকে হত্যা করেছে। বাড়িতে বাগ্বিতণ্ডার পর ছেলে কাঠের ভারসাম্যহীন বস্তু গলায় ধরে হত্যা করেছে।


এপ্রিল ২০২৪ সালে ছেলের হাতে মা খুন হয়েছেন—চাঁদপুর, ইছাপুর গ্রামে, ছেলের বয়স প্রায় ২২ বছর। খাগড়াছড়ি, আগস্ট ২০২৫: দুই বছরের সন্তানকে মায়ের হাতে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।


দুই.


পারিবারিক সহিংসতার সামগ্রিক চিত্র খেয়াল করলে দেখা যায় জাতিসংঘের ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত এক বছরে এই সহিংসতার হার ৪১ শতাংশ। শুধু শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৪ শতাংশ নারী, যার মধ্যে ১৬ শতাংশ সহিংসতা ঘটেছে গত এক বছরে।


পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার পেছনে বিশেষ করে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে একাধিক কারণ কাজ করছে। এসব কারণ সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও আইনগত পর্যায়ের হতে পারে। নিচে কিছু মূল কারণ, প্রেক্ষাপট, কিছু গবেষণা ও


সারাদেশের তথ্যসহ দেওয়া হলো-


পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও লিঙ্গ অসমতা অনেক সমাজে পুরুষকে পরিবারের ‘প্রধান আধিপত্য’ ধরা হয়, যেখানে নারী ও মেয়েদের অধিকার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা কম থাকে। এই লিঙ্গভিত্তিক গণ্ডি ও প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই সহিংসতার সুযোগ তৈরি করে। অর্থনৈতিক চাপ ও কর্মসংস্থানের ঘাটতি বেকারত্ব, আয় খর্ব হাওয়া, ব্যবসার ক্ষতি— এসব মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে, পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে এবং সহিংসতার প্রবণতা বাড়ে। COVID-19 প্যান্ডেমিকের সময় এই বিষয়টি আরও প্রকট ছিল। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার সময় মানসিক অবস্থা খারাপ হতে পারে, ক্রোধ, হতাশা, উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে। সহিংসতার রিলিজ হিসেবে এসব সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া মাদক বা অন্য কোনো আসক্তি থাকলে পারিবারিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ে। একটানা ঘরে অবস্থান, বেকারত্ব, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময়, বাইরের কোনো সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের ঘাটতি—ফলে ঘরের ভেতরে ঝামেলা, বিবাদ বাড়তে পারে। সহিংসতার মামলা ও হেল্পলাইন কলের পরিমাণও ইদানীং ব্যাপকহারে বেড়েছে।


যদিও বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতা ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে (Domestic Violence Prevention and Protection Act 2010 ইত্যাদি), আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, অপরাধীদের প্রতি সহনশীল মনোভাব, শাস্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা ইত্যাদির কারণে অনেক ঘটনা অপ্রকাশিত থাকে বা ভুক্তভোগী পার পায় না। সহিংসতা অনেক ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক’ বা ‘পরিবারের ব্যাপার’ হিসেবে দেখা হয়। বাড়িতে এমন ঘটনা দেখার অভ্যাস থাকলে, শিশুরা ও অন্য সদস্যরা উপেক্ষা করে বা সহ্য করে যেতে শেখে এবং এটি পরবর্তী প্রজন্মেও বিরূপভাবে প্রভাব ফেলে। যত বেশি মানুষ শিক্ষা ও তথ্য পাবে— তাদের অধিকারে সচেতন হবে, সহিংসতা কি কি ধরনের হয়, কখন আইনগতভাবে সহায়তা পাওয়া যায় ইত্যাদি— সেই অনুযায়ী সহিংসতার ঘটনা কমতে পারে। কিন্তু শিক্ষার অভাব ও সামাজিক রীতি-বিরুদ্ধ সচেতনতার ঘাটতি এখনো প্রকট রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও