রাষ্ট্রের চোখে সবাই কি সমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কী বলছেন?

ঢাকা পোষ্ট ড. সুলতান মাহমুদ রানা প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩২

মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন কোনো সমাজের অস্তিত্ব নেই, যেখানে মানুষ সমতা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেনি। গুহা-যুগ থেকে আজকের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পর্যন্ত মানবজাতির সবচেয়ে বড় সামাজিক চাওয়া- ন্যায়, ন্যায্যতা ও আইনের অধীনে সমান আচরণ।


“রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান”—এটি শুধু একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং একটি সভ্যতার মানদণ্ড। যে রাষ্ট্রে আইন ক্ষমতাবানকে ছাড় দেয়, সেখানে রাষ্ট্র নিজেরই নৈতিক ভিত্তি হারায়। আইন তখন শাসনের হাতিয়ার হয়, ন্যায়বিচারের নয়। এই সত্য উপলব্ধি করেই প্রাচীন গ্রিস থেকে আধুনিক ইউরোপ পর্যন্ত সব চিন্তাবিদই বলেছেন, রাষ্ট্রের শক্তি নয়, ন্যায়ের ভিত্তিতেই টিকে থাকে সভ্যতা।


‘Rule of Law’ বা আইনের শাসন ধারণাটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায় ব্রিটিশ দার্শনিক A.V. Dicey-এর কলমে। তিনি বলেন, ‘No man is above the law, and every man, whatever be his rank or condition, is subject to the ordinary law of the land.’


অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি-রাজা হোক বা সাধারণ নাগরিক—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই ধারণাটি আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি। রাষ্ট্র যখন প্রত্যেক নাগরিককে সমান চোখে দেখে, তখনই আইনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র তখন শাসক নয়, বরং ন্যায়বিচারের অভিভাবক। তবে এই ধারণার শেকড় আরও গভীরে। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, ‘Law should rule, and the rulers should be servants of the law.’


অর্থাৎ, শাসক নয়, আইনই হবে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, একটি নৈতিক অবস্থান- যেখানে শাসন ক্ষমতার ওপর নয়, ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত।


মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে রাষ্ট্র নিজের শাসককেও আইনের আওতায় এনেছে। প্রাচীন রোমে, ‘Twelve Tables’ নামক আইন প্রণালীতে প্রথমবারের মতো বলা হয়- আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।


একজন অভিজাত সিনেটর এবং একজন সাধারণ নাগরিক একই অপরাধ করলে, তাদের শাস্তিও হবে একই। মধ্যযুগের ইংল্যান্ডে, ১২১৫ সালের Magna Carta ছিল ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দলিল। সেখানে রাজা জনকে বাধ্য করা হয় এই মর্মে যে, তিনি আর স্বেচ্ছাচারী শাসন করতে পারবেন না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সীমিত থাকবে এবং রাজা নিজেও আইনের অধীন হবেন। এটি ছিল আধুনিক গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রথম ভিত্তি।


আজকের উন্নত বিশ্বে ন্যায়বিচার কেবল তত্ত্ব নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কানাডা এবং জাপান—এই দেশগুলোয় আইন প্রয়োগের নিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গর্বের জায়গা। সেখানে কোনো নাগরিকই, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানও, বিচার থেকে অব্যাহতি পান না।


২০২৩ সালে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লে, সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে তিনি তদন্তে অংশগ্রহণ করেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগে এখনো আদালতে বিচারাধীন। আদালতের নির্দেশে তাকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হয়। তিনি এখনো বিচারাধীন এবং আদালত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। পূর্বে এহুদ ওলমার্ট (২০০৯) দুর্নীতির মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে ১৮ মাস জেল খেটেছেন।


রাষ্ট্রীয় পদে থেকে বিচার প্রক্রিয়া চললেও, কোনো বিশেষ সুবিধা তিনি পাননি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক মামলায় ইতিপূর্বে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। এমনকি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড তাকে ক্ষমা করে দেন।


বিল ক্লিনটনের ‘মনিকা লিউইনস্কি কেলেঙ্কারি’ মামলায় শপথভঙ্গ ও বিচারব্যবস্থায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে Impeachment Trial অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আদালত প্রেসিডেন্ট বা প্রভাবশালীকে নয়, কেবল আইনকেই শ্রদ্ধা করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও