বাবার স্বীকৃতি মেলেনি, শুটিংয়ে নিপীড়নের শিকার—হার মানেননি ‘উমরাও জান’

প্রথম আলো প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১২

‘রেখা মানে এক রহস্য, এক ব্যথা, আর এক নারী—যিনি নিজের ছাই থেকে নিজেই জেগে উঠেছেন।’ ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক ইয়াসির ওসমান তাঁর জীবনীগ্রন্থ ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে রেখাকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। রূপ, রটনা, রহস্য আর প্রতিরোধে গড়া এই বলিউড তারকার জীবন নিয়ে লিখেছিলেন তিনি। 


বরাবরই সাহসী রেখা। সময়ের সঙ্গে নয়, বরং এগিয়েই ছিলেন। নিয়ম ভেঙেছেন, গতানুগতিক সমীকরণ থেকে বেরিয়ে নিজের ছন্দেই বেশি সাবলীল। তিনি রেখা। আসল নাম ভানুরেখা গণেশন। আজ ‘সিলসিলা’, ‘উমরাও জান’–অভিনয়শিল্পী রেখার জন্মদিন। আজ শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ৭১ বছর পূর্ণ করলেন বলিউডের এই ‘চিরসবুজ’ অভিনেত্রী।


গতকাল রাত থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে নতুন করে ফিরে এসেছেন রেখা। যেন শুভেচ্ছার বৃষ্টি ঝরেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। সত্তর পেরিয়েও রেখা যেন ফিরে এলেন নেট–দুনিয়ায়। অবশ্য ‘ফিরে এলেন’ বললে ভুল হবে। রেখা ছিলেন না কবে? রেখা তো বছরের পর বছর আছেনই—আছেন গল্পগুজবে, আছেন আলোঝলমল কোনো তারকাবহুল সন্ধ্যায় উজ্জ্বল তারকা হয়ে। রেখা নিজেই যেন সব সময় নতুন। তাঁর নামের পাশে ‘চিরসবুজ’ লিখলে একবিন্দুও বাড়াবাড়ি হয় না। যিনি চিত্তহরণ করেন কিশোর, তরুণ, যুবক, প্রৌঢ়, এমনকি বৃদ্ধেরও।


‘রেখা কে আসলে?’—জন্মদিনে ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র সূত্র ধরে সেই অচেনা রেখার গল্পে আরেকবার ফিরে যাওয়া যাক।


গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়। তামিল অভিনেতা জেমিনি গণেশন ও তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যালির ঘরে জন্ম ভানুরেখা গণেশনের। তবে তাঁর মা পুষ্পাভ্যালি ছিলেন জেমিনি গণেশনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সঙ্গিনী। সে কারণেই রেখার জন্মের পর বাবার স্বীকৃতি মেলেনি।


পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সে কারণে রেখাকে শুনতে হয়েছে নানা কটুকথা। বাবা জেমিনিও শিশুকালে তাঁকে সন্তান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। পিতৃপরিচয়ের সংকট নিয়ে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে আসেন রেখা। হার মানেননি; বরং স্বপ্ন দেখতেন বিমানবালা হওয়ার। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্য।


নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে রেখা হয়ে ওঠেন তাঁর ছয় সদস্যের পরিবারের কান্ডারি। কিশোরী রেখা পরিবারের হাল ধরেন। নিজের দায়িত্ব নিয়ে রেখা পরে বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় আমি ছিলাম আমার ভাইবোনদের মা, এমনকি আমার মায়েরও মা।’


কিশোরী রেখা ঠিক করেন, বলিউডে গিয়ে পরিবারের অভাব দূর করবেন। অডিশন দিতে শুরু করেন। কিন্তু প্রযোজক–পরিচালকেরা বারবার ফিরিয়ে দিতে থাকেন তাঁকে। তাঁর জীবনের প্রথম অধ্যায় তাই কোনো গ্ল্যামার নয়—এটি ছিল নিখাদ বেঁচে থাকার গল্প।


যৌন নিপীড়নের শিকার


১৯৬৯ সালে ‘গোয়াদাল্লি সিআইডি ৯৯৯’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় রেখার ভ্রমণ শুরু। এর আগে ১৯৬৬ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র ‘রাঙ্গুলা রত্নম’–এ বেবি ভানুরেখা নামে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৭০ সালে বলিউডের ছবি ‘আনজানা সফর’–এ অভিনয়ের সুযোগ মেলে। কিন্তু সেই ছবিই পরিণত হয় তাঁর জীবনের এক দুঃস্বপ্নে। ইয়াসির ওসমানের বইয়ে জানা যায়, জীবনের প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিনি। সেবার মেহবুব স্টুডিওতে ‘আনজানা সফর’ চলচ্চিত্রের শুটিং চলছিল। সেদিন রেখা ও বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রেমের দৃশ্য চিত্রায়ণের কথা ছিল। পরিচালক ‘অ্যাকশন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শুটিং। কিন্তু পরিচালক যেভাবে দৃশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সেভাবে হচ্ছিল না; বরং নায়ক বিশ্বজিৎ রেখাকে নিজের বাহুতে জোরে আটকে ধরে চুমু দিতে শুরু করেন। চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়ে নায়কের এমন আচরণে রেখা হতবাক হয়ে যান; কিন্তু তাঁর কিছুই করার ছিল না। নায়ক তাঁকে ছাড়ছেন না, পরিচালকও ‘কাট’ বলছেন না। শুটিং ইউনিটের লোকজন এই দৃশ্য দেখে মজা পেয়েছেন আর সিটি বাজিয়েছেন।’ ইয়াসির ওসমান লেখেন, ‘মেহবুব স্টুডিওর সেই দিনটি ছিল বলিউডের নির্মম মুখ দেখার দিন।’ সেদিন এ ঘটনায় হতবাক হয়ে যান এবং শুটিং সেটে কান্নায় ভেঙে পড়েন রেখা। পরে এক সাক্ষাৎকারে রেখা বলেন, ‘সেদিনই বুঝেছিলাম, মেয়েদের জন্য পৃথিবী কোনো নিরাপদ স্থান নয়।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও