
দেশে বছরে ৩৪ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়, রোধ করা কি সম্ভব?
বাংলাদেশে বছরে কৃষকের খামার থেকে শুরু করে ভোক্তার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাবার নষ্ট ও অপচয় হয়। সিপিডি ‘খাদ্যের অপচয় রোধের মাধ্যমে টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এই তথ্য জানান।
খামার থেকে বাজার, রান্নাঘর, খাবার টেবিল, প্রতিটি ধাপে খাদ্য নষ্ট হচ্ছে কিন্তু এখনো সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। বাংলাদেশে ফল ও সবজিতে ৩২ শতাংশ, ছোট মাছে ২৫ শতাংশ এবং ধান-গমে ১৭ শতাংশের বেশি পরবর্তী ধাপে ক্ষয় হয়ে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্বল সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এ সমস্যাকে আরও তীব্র করছে। স্মার্টভাবে খাদ্য সংরক্ষণ, বাজারে প্রবেশাধিকার, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং উন্নত তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও কার্যকর, জলবায়ুবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
শূন্য খাদ্য অপচয়ের পথে:
‘শূন্য খাদ্য অপচয়ের পথে’ বলতে বোঝানো হয় এমন একটি লক্ষ্য বা প্রচেষ্টা, যেখানে সমাজ, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ে খাদ্যের অপচয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ বা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যর ২৭ শতাংশই খাবার টেবিলে আসে না।
সংরক্ষণে ঘাটতি, হিমাগারের স্বল্পতা ও পরিবহনজনিত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এ কারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। মোট আবাদ হওয়া জমির মধ্যে ২৭ শতাংশ বা ৩৪ হাজার বর্গকিলোমিটারে উৎপাদিত খাদ্য শেষ পর্যন্ত অপচয় হচ্ছে প্রতি বছরে।
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি রোধ করতে হবে। একদিকে অনেক মানুষ খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকছে, অন্যদিকে উৎপাদিত বিপুল খাদ্যের একটি বড় অংশ অপচয় হচ্ছে- যা দুঃখজনক।
বাংলাদেশে খাদ্যের অপচয়:
২০২৫ সালের বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দেশে বছরে ৩৪ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়! অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার পায় না। অব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা ও পরিবহনজনিত কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্য পণ্যর মধ্যে গড়ে ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য আরও বলছে, নষ্ট বা অপচয় হওয়া এই খাদ্যপণ্যের আর্থিক মূল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশ।
অন্যদিকে কয়েকটি ফসলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে World Bank / Bangladesh Food Loss & Waste Diagnostic & FAO-এর রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, প্রতিবছর ২৩ শতাংশ চাল, ২৭ শতাংশ মসুর ডাল, ৩৬ শতাংশ মাছ এবং ২৯ শতাংশ আম নষ্ট বা অপচয় হয়। এছাড়া ধানের ২৩-২৮ শতাংশ, ফসল কাটার পরে গমের সাড়ে ১৭ শতাংশ, উদ্যানজাত ফসলের মধ্যে কলার ২০ শতাংশ, আলুর ২২ শতাংশ, গাজরের ২৭ শতাংশ, টমেটোর ১০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে।
ব্যক্তি পর্যায়ে খাবার গ্রহণের সময়ে বাংলাদেশে একজন বছরে গড়ে ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি বা ইউনেপের ২০২২ সালের প্রতিবেদন এই তথ্য দিচ্ছে। খাবার নষ্ট করার এ হার যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে বেশিরভাগ খাদ্য অপচয় হয় উৎপাদন, পরিবহন, পরিচালনা, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং খাবার সময়ে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- খাদ্য অপচয়