
সরকারি কলেজে শিক্ষার হযবরল অবস্থা
গত সরকারের আমলে দেশের অনেক বেসরকারি কলেজ সরকারীকরণ করা হয়। তবে ২০১৮ সালে সরকারি হওয়ার আদেশ জারির পর থেকে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে এক নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই তো সরকারীকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সর্বশেষ সরকারি হওয়া কলেজগুলোতে শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশটিও বর্তমান আছে বলে মনে হয় না। সময়ের নিরিখে একেবারে কম নয়, ২০১৮ থেকে ২০২৫—একে একে সাত বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। সবকিছু মিলিয়ে লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে কলেজ স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা।
সর্বশেষ সরকারি হওয়া কলেজগুলোতে ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তখন থেকেই সম্পূর্ণরূপে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে সাত বছরে (২০১৮-২৫) নিয়মবিধি অনুসারে একে একে অবসরে যেতে যেতে বিষয়ভিত্তিক কয়েক হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। কলেজগুলোতে একে তো নিয়োগ বন্ধ, অন্যদিকে দেওয়া হচ্ছে না সরকারিভাবে কোনো শিক্ষক। এসব কলেজে এখন উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি, ডিগ্রি (পাস) স্তরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ (অনার্স কোর্স চালু থাকলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ) পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। উপজেলা স্তরে হলেও নতুন সরকারি হওয়া অনেক কলেজে মাস্টার্স কোর্সও চালু রয়েছে। এমনই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান; এমনকি আবশ্যিক বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক মাত্র একজন করে আছেন। ওই একজন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোরকমে চলছে একেকটি বিভাগ বা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম। একটি-দুটি নয়; প্রতিষ্ঠানভেদে পাঁচ-সাত, কিংবা আরও বেশিসংখ্যক বিষয়ে বছরের পর বছর শিক্ষকের পদ শূন্য। এমনও নজির আছে, বিষয়ভিত্তিক নিয়মিত শিক্ষক একজনও নেই। দিন যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি তত তীব্রতর হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক বা খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের নামে প্রতিষ্ঠানে এত দিন কী চলেছে, তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। প্রশ্নটি খুবই সংগত, সরকারি কলেজই যদি হবে তাহলে বছরের পর বছর এভাবে জোড়াতালি দিয়ে ‘কোনোরকমে কাজ চালিয়ে যাওয়া’ কেন?
- ট্যাগ:
- মতামত
- সরকারি কলেজ
- সরকারি কলেজ শিক্ষক