রাজনৈতিক দলগুলোর নড়াচড়া দেখে মনে হয় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া বিষয়ে তাদের দ্বিধা-দন্দ্ব কাটতে শুরু করেছে।জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বিষয়ে তাদের যোজন যোজন দূরত্ব থাকার পরও তারা যে নির্বাচনে আশাবাদী হয়ে উঠেছে অনুমান করা যায়।মাঠের আন্দোলনগুলোকে মনে হতে পারে নির্বাচনী ওয়ার্ম আপ হিসেবে।
যখনই নির্বাচনী রাজনীতি শুরু হয় তখন মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা হয়,তার পছন্দের দলটির অবস্থান কি তা জানার আগ্রহ জন্মায়। সেই জনচাহিদার কথা বিবেচনা করে জরিপও হয়। এটা সবদেশেই হয়। কোথাও কোথাও জরিপের সঙ্গে নির্বাচনের ফল কাছাকাছি মিলে যায়।আবার কোথাও জরিপের ফল চাপা পড়ে নির্বাচনী ফলের নিচে।তারপরও ভোটারদের কাছে জরিপ নিয়ে কৌতূহল থাকে।
সেই কৌতূহলের কথা বিবেচনা করে হয়তো ইনোভিশন কনসাল্টিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। বিষয়টি যে ভোটার চাহিদার অংশ তাও প্রমাণিত হয়েছে,জরিপের সংবাদ প্রকাশের আধিক্য দেখে।প্রতিটি পত্রিকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুরুত্বসহ সংবাদটি প্রকাশ করে। এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তাদের টকশোতে স্থান দেয় জরিপের বিষয়টি।
পর্যালোচনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। কারো প্রশ্ন হচ্ছে-দ্বিতীয় বৃহৎ দল বিষয়ে। যেহেতু আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসা এখনও নিশ্চিত নয় তাই মানুষ ধরেই নিয়েছে দ্বিতীয় বৃহৎ দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এককভাবে কিংবা জোটগতভাবে আগামী সংসদে স্থান করে নিতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচন হলে এটা অনেকেরই মনে হতে পারে।জরিপের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে।কিন্তু আলোচনায় আসছে জরিপে প্রদর্শিত ভোট পাওয়ার পরিসংখ্যানের বিষয়টি। জরিপে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ।যেখানে বিএনপিকে ভোট দেবে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
দুটি দলের অতীতের রেকর্ড এবং বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় যদি এই ফলকে মূল্যায়ণ করা হয় তখন জরিপের স্যাম্পল ,স্থানিক প্রশ্ন অবশ্যই করতে হবে।বিএনপির অতীত রেকর্ড ৪৭% পর্যন্ত ভোট প্রাপ্তির কথা বলে।প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে থাকার পরও যেখানে ৩৬%-৩৭% ভোট পাওয়ার রেকর্ড আছে এখন তাদের ভোট ৪১ শতাংশ হয় কী করে। কথা হতে পারে, আওয়ামী লীগের ভোট নিয়ে। যদি আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে না আসতে পারে এবং এমন সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট কি বিএনপি না পেয়ে জামায়াতের বাক্সে পড়বে?
ব্যতিক্রম ছাড়া আওয়ামী লীগের ভোটারদের সবাই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে ভোট দিয়ে থাকে।তাছাড়া যতই আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হোক না কেন, এই সময় এসে প্রমাণ হয়ে গেছে, আসলে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা দল হিসেবে প্রথম নামটি আওয়ামী লীগ। কথা হচ্ছে-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভোটাররা কি তাহলে বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে দ্বিতীয় পছন্দের দল হিসেবে বাছাই করবে না?
এখানে কেউ হয়তো ২৪ অভ্যুত্থানের পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রশ্নটি আনতে পারেন।আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার দুই তৃতীয়াংশই যে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাদির তালিকায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।ফলে আওয়ামী লীগের ভোট বিএনপি সেই হারে পাবে না। এই বিশ্লেষণটি আমলে নিলে প্রশ্ন আসবে তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটাররা কি জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবে? যারা হ্যাঁ জবাব দেবেন,তাদের যুক্তি হতে পারে,বিভিন্ন থানায় বন্দী হওয়া অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে জামায়াতের লোকজন গিয়ে তদবির করে ছাড়িয়ে এনেছে। তাই তারা বিএনপির চেয়ে জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দের মনে করতে পারে। কিন্তু সংখ্যা বিবেচনা করলে এরা খুব একটা বেশি হওয়ার কথা নয়।যাতে ভোটের হিসাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।