
প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক: বিরোধিতা নয়, শিশুর বিকাশই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার
প্রাথমিকপর্যায়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ হতে পারে সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ার প্রথম পদক্ষেপ। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা থেকে সংগীত শিক্ষকের পদটি বাতিল হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। কেননা, এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যারা মাঠে নেমে পড়েছেন, তারা ক্ষমতায় না থাকলেও ক্ষমতাসীনদের ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখেন।
সংগীত শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি বাতিল হলেও মানুষের জীবন থেকে সুর সংগীতকে বিদায় করা অসম্ভব। সব দেশে, সব কালে শিশুর কথা শুরু হয় আসলে স্বরের সংগীতে। পৃথিবীর সব শিশুই প্রথমে স্পষ্ট শব্দ বা অর্থপূর্ণ বাক্য বলে না—ওরা যা বলে তা এক প্রকার ‘অবোধ্য সংগীত’, যা একইসঙ্গে হাসির মতো, কান্নার মতো, আবার মন্ত্রপাঠের মতো শোনায়। এটিই মানুষের ভাষার প্রথম ধাপ। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশুর এই বকবকানি বা বাবলিং হলো ভাষার সার্বজনীন সুর। এটিই প্রমাণ করে, ভাষা শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, এটি ছন্দ এবং সংগীতেরও আরেক রূপ। ভাষার জন্ম সংগীতের গর্ভে।
সংগীত মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে মিশে থাকা এক অপূর্ব অনুষঙ্গ। মানুষের আবেগ, বোধ ও চিন্তাকে ছুঁয়ে যায় সংগীতের সুর। আধুনিক গবেষণা বারবার প্রমাণ করেছে যে, শিশুকে শৈশব থেকেই সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করানো হলে তার মস্তিষ্কে নতুন স্নায়বিক সংযোগ তৈরি হয়, যা তাকে করে তোলে মনোযোগী, সৃজনশীল ও আত্মবিশ্বাসী।
শিশুর বেড়ে ওঠার পথে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা যেভাবে নিবিড়ভাবে জড়িত, সংগীতও তেমনি সেই পরিবেশকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কেবল চার দেয়ালের ভেতরে সীমাবদ্ধ পাঠ্যসূচি শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে না। প্রয়োজন সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, যেখানে গান, নাচ, নাটক, খেলাধুলা, বিতর্কের মতো সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিশুর চিন্তাশক্তিকে প্রসারিত করে। শিশুকে সংগীতের জগতে প্রবেশ করানো মানে তাকে কেবল বিনোদন দেওয়া নয়, বরং তাকে শেখার নতুন পথ দেখানো।
তাই যখন আমরা স্কুলের পাঠ্যক্রমে সংগীত রাখি, তখন শিশুদের মন, শরীর আর আত্মাকে এক রেখায় টেনে আনে। এভাবেই শিশুর কৌতূহল শেখায় রূপ নেয়, শেখা আনন্দে বদলায়, আর আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী দক্ষতায় পরিণত হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিক্ষক
- প্রাথমিক বিদ্যালয়
- সংগীত
- শিশুর বিকাশ