সরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে একটি নদীকে ‘নিখুঁতভাবে হত্যা’ করল

প্রথম আলো নাহিদ হাসান প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৪১

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর একটি শাখা শালডাঙ্গা ইউনিয়ন দিয়ে প্রবেশ করে সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণী/মল্লিকাদহ গ্রামে উজানে তিস্তা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিশেষত মহালয়ার সময় স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সেখানকার পানি দিয়ে পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে পিতৃপক্ষ, তর্পণ, শ্রাদ্ধসহ নানা ধর্মীয় আচার পালন করতেন। এদিকে বুড়িতিস্তার স্রোতও উজান বায়। এখন পূজা হয় না, দখল হয়। এটি সেই উদাহরণ, যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানই একটি নদীকে ‘নিখুঁতভাবে হত্যা’ করেছে।


উনিশ শতকে ভূ-আন্দোলন ও বন্যার কারণে তিস্তা যখন পদ্মা ছেড়ে ব্রহ্মপুত্রমুখী হয়, তার আগেই সৃষ্টি হয় আজকের বুড়িতিস্তা। এই বুড়িতিস্তা বর্তমান মূল তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গার বুড়িরহাট থেকে শুরু হয়ে নাজিম খান ইউনিয়নের ঠুটা পাইকর হয়ে উলিপুর উপজেলার থেতরাইতে এসে আবারও দুই ভাগে ভাগ হয়। তার একটি অংশ একই উপজেলার বজরা-কাশিম বাজার হয়ে মূল তিস্তায় যুক্ত আছে। আরেকটি উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়ন থেকে উলিপুর হয়ে চিলমারীর কাঁচকোলে পতিত হয়েছে। ১৭৮৭ সালের পর মানাস নদটি একাকার হয়ে তিস্তা নাম নিয়ে ব্রহ্মপুত্রে পতিত হয়।


১৯৪০ সালের ‘বাংলায় ভ্রমণ’ ও রংপুর গেজেটিয়ার বলছে, উলিপুরের থেতরাইয়ে তিস্তা থেকে মানাস নামে উৎপত্তি হয়ে একটি শাখানদী বজরা-কাশিমবাজার হয়ে গাইবান্ধা জেলার পীরগাছার তাম্বুলপুর গ্রাম হয়ে কামারজানিতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রে পড়েছে। কথিত আছে, ভবানী পাঠকের বজরা মানাস নদের এই স্থানে ডুবে যাওয়া থেকে ‘বজরা’ নামটি এসেছে।


আরেকটি অংশ থেতরাই থেকে উলিপুর পৌরসভা হয়ে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল ওয়ারীতে মানিক চন্দ্র রাজার ভিটাসংলগ্ন এলাকায় আরেকটি নদীসহ ব্রহ্মপুত্রে পতিত হয়। এই বুড়িতিস্তাই উলিপুরকে চিলমারী বন্দরের সমৃদ্ধ পশ্চাদ্ভূমি হিসেবে গড়ে তুলেছিল এবং তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের সংগমস্থলে রানীগঞ্জকে অন্যতম বড় শহরে পরিণত করেছিল। মন্টেগোমারি মার্টিন ১৮৩৮ সালে লিখেছেন, তিস্তার তীরের রানীগঞ্জ হলো ছোট্ট শহর, এখানে ১৫০টি বাড়ি (তখন কুড়িগ্রামে ২০০টি বাড়ি)। মানাসতীরের নবাবগঞ্জ এর চেয়ে ছোট শহর।


স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড বুড়িতিস্তার দুই মুখে দুটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে। ফলে পানির অবাধ প্রবাহ ও নৌপরিবহনব্যবস্থা স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়।


দুই.


পরে ১৯৮৮ সালের বন্যায় উলিপুরের থেতরাইয়ে বুড়িতিস্তার উৎপত্তিমুখের স্লুইসগেটটি ভেসে যায়। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ীভাবে উৎপত্তিমুখ বাঁধ দিয়ে সিলগালা করে দেয়। এ কারণে নদীটি পরিণত হয় দীর্ঘ বিলে। বর্তমানে নদীটি খণ্ড খণ্ড পুকুরে পরিণত হয়েছে ব্যক্তিমালিকানায় চলে গিয়েছে। জনগণ আর এক ঘটি জল নিতে পারবে না। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার নদীটির প্রশস্ততা কম দেখিয়ে প্রায় ৪০টি ছোট সেতু নির্মাণ করে। আর এই প্রশস্ততাকে মানদণ্ড ধরে ভূমি দখলের পর্বটি শুরু হয়। বর্তমানের এই চতুর্মুখী দখল উৎসবের প্রতিরোধে রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ ২ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন এবং ২১ মার্চ সাইকেল র‍্যালি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূমি ম্যাজিস্ট্রেটকে নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণ ও দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও