সংস্কারবিহীন নির্বাচন আবার সেই অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করল। সংলাপে আপনি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কী?
আবদুল্লাহ মো. তাহের: বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সংস্কার কমিশনের ৩০-৩২টি দলের সম্মিলিত মিটিং এটি প্রথম এবং একটি যুগান্তকারী ঘটনা। যেখানে ডান, বাম, মধ্যমপন্থী এবং ইসলামপন্থী লোকদের খুব বেশি ইন্টারেকশন হতো না, আমরা একে অন্যকে জানতাম না। কমিশনের এই উদ্যোগটা এদিক থেকে সফল হয়েছে। নানা মতের-পথের লোকদের জানার সুযোগ হয়েছে, একধরনের রিলেশন তৈরি হয়েছে। এদিক থেকে এটাকে আমি খুবই ইতিবাচক মনে করি। তবে (আলোচনার জন্য) দল সিলেকশনের ক্ষেত্রে কিছুটা অপরিপক্বতা ছিল বলে আমি মনে করি। যে কারণে কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
এর ফলাফলটা কী?
আবদুল্লাহ মো. তাহের: ফলাফলের ক্ষেত্রে একটা পর্যায় আমরা সফলভাবে পেরিয়ে এসেছি। মৌলিক অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের মধ্যে হাজারো মতাদর্শগত পার্থক্যের পরও এক জায়গায় আসতে পারছি। সুতরাং এই পর্বটাকে আমি সফল মনে করি।
কিন্তু সেখানে তো অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) এসেছে। বিশেষ করে চারটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকা না থাকার বিধান—এ ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট আছে। তাহলে এগুলোর ভবিষ্যৎ কী?
আবদুল্লাহ মো. তাহের: আমরা পুরো ডিসকাশনে (আলোচনায়) একটা বিষয় লক্ষ করেছি, বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কারের প্রশ্নে কিছুটা অনীহা ভাব দেখেছি। তারপরও আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শুরুতে যতটুকু অনীহা ছিল, সেটা পরিহার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে অনেক বিষয়ে তারা কিছুটা লিনিয়েন্সি শো (উদারতা প্রদর্শন) করেছে। তারা মেজরিটি অপিনিয়নকে অ্যাকসেপ্ট করেছে উইথ নোট অব ডিসেন্ট। এটা আমি মনে করি একধরনের পজিটিভ স্ট্যান্ড। কারণ, নোট অব ডিসেন্ট আপনি দিতে পারেন, কিন্তু মূল বিষয়ে ঐকমত্যের ক্ষেত্রে আপনি একমত ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া হয়েছে, এগুলোর বাস্তবায়নে কী হবে? আমি ল ইয়ারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন, মেজরিটি পিপল যেটাকে অ্যাকসেপ্ট করে, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নোট অব ডিসেন্ট ইজ ফর রেকর্ড। এটা কিন্তু আইনি ভিত্তি বা ওই ধরনের কোনো গুরুত্ব বহন করে না। যেমন হাইকোর্টে তিন বিচারকের বেঞ্চ আছে। সেখানে দুই বিচারক এক বিষয়ে একমত, আরেকজন দ্বিমত পোষণ করেন। দুজনের ভিত্তিতে রায়টা হয়। আরেকজনেরটা শুধু তাঁর ডিফারেন্ট অপিনিয়ন হিসেবে রাখা হয় রেকর্ডে।
মেজরিটির বিষয়ে বিএনপির দিক থেকে একটা কথা এসেছে। সেটা হচ্ছে, এখানে দলের সংখ্যা বিষয় না। কোন দল কত বেশি প্রতিনিধিত্ব করে জনগণকে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
আবদুল্লাহ মো. তাহের: এই কথাটা আমি একেবারে উড়িয়ে দিতে চাই না। কিন্তু আপনি যখন একটা মিটিংয়ে বসবেন, সেখানে সবাই যদি ইকুয়াল মেম্বার হয়, তাহলে ডিসিশনের ক্ষেত্রে তো সংখ্যাগরিষ্ঠতাই প্রাধান্য পাবে। হোয়েন ইউ সিট ইন ওয়ান মিটিং, ইউর পজিশন অ্যান্ড মাই পজিশন, অ্যান্ড আদারস পজিশন ইজ ইকুয়াল। অ্যান্ড এভরি পার্টিসিপেটরি পার্টি হ্যাজ গট হিজ ওয়ান সিঙ্গেল ভোটস অর অপিনিয়ন ইকুয়াল টু এভরিওয়ান। সুতরাং এখানে জনপ্রিয়তা কার বেশি, কার কম, কে কত ভোট প্রতিনিধিত্ব করে না করে—এটার কোনো ইন্ডিকেশন তো ওই মিটিংয়ের ভেতরে ছিল না। সুতরাং এ কথাটা থিওরিটিক্যালি অথবা প্র্যাকটিক্যালি হলেও অফিশিয়ালি ইউ ক্যান নট সে লাইক দিস।
আপনি সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপির অনীহার কথা বলেছেন। কিন্তু এটা তো সত্যি যে দুই বছর আগে বিএনপিই প্রথমে ২৭ দফা, পরে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করে।
আবদুল্লাহ মো. তাহের: বিস্ময় তো সেখানেই। সংস্কার যেখানে বিএনপির প্রস্তাব ছিল দুই বছর আগেই, কিন্তু যখন সংস্কার করার বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে তারা আগের ঘোষণা থেকে নিজেরাই সরে গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- রাজনৈতিক জোট