-68af68a0c7e86.jpg)
বৈধ-অবৈধ বিদেশি নাগরিক ও বেকার সমস্যা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন। তাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকই বেশি। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশি নাগরিকদের অনেকেই সরকারকে জরিমানা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করছেন। অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী ৭ হাজারের মধ্যে ৫ হাজার ভারতীয়। আর বৈধভাবে দেশে অবস্থান করা ৮০ হাজার বিদেশি নাগরিকের মধ্যে সাড়ে ১৩ হাজার ভারতীয়। বৈধ-অবৈধ ভারতীয়রা কাজ করছেন রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাস্তা উন্নয়ন, আইটি সেক্টর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি খাত এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্পে (যুগান্তর, ১৬.০৮.২৫)।
এ রিপোর্টকে যদি পুরোপুরি সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ ধরি, তাহলে এটাই মনে হয়, আমরা ভাড়াটিয়া শ্রমিক দিয়ে জাতীয় কাজ করতে উৎসাহী। এটা কেবল বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলেই যে সূচিত হয়েছে তা নয়, এর সূচনা আরও বহু আগে থেকেই। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক ও কারিগরি বিশেষজ্ঞ এনে উৎপাদন বাড়ানো বা এক্সপোর্ট অরিয়েনটেড ইন্ডাস্ট্রিতে বিদেশি লোক নিয়োগের যে প্রবণতা, এর হোতা হচ্ছে বেক্সিমকো। এ গ্রুপটি একবারও এটা ভাবেনি যে, যেসব সেক্টরে বিদেশি দক্ষ লোক নিয়োগ করেছেন তারা, সেসব ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই বিদেশিদের জায়গায় নিয়োগ করা যায় বা যেত। কেন করেনি? কারণ ‘পণ্য আমদানি করো আর বিক্রি করো’-কাঁচা পয়সা আয়ের এ মানসিকতা নিয়েই এদের শিল্প সেক্টরে ঢোকা। ফলে কর্মী দেশের না বিদেশের, তা তাদের বিবেচ্য নয়, তারা সময়মতো পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারল কিনা, সেটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। ফলে তাদের মনে-মননে, চেতনায় দেশপ্রেম নেই। বিদেশি জনবল যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে, তা শিল্প খাতে উন্নয়নের চেয়ে ক্ষতিকেই প্রলম্বিত করছে, এ ভাবনাটি তাদের মধ্যে নেই। দেশপ্রেম থাকলে, ওই রকম ভিশনারি মানুষ হলে তারা নিজেরাই প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল তৈরির আয়োজন করত।
একবার ভাবুন, দেশে বৈধভাবেই শিল্প সেক্টরের বিভিন্ন খাতে ৮০ হাজার বিদেশি কাজ করছে। ওই ৮০ হাজার লোক আমাদের শিক্ষিত বেকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধক। ওই ৮০ হাজার কর্মীর জন্য যদি এক লাখ শ্রমিক এবং দক্ষ কারিগর ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি আমরা তৈরি করতে পারতাম, তাহলে তাদের জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের ব্যয় করতে হচ্ছে, তা দেশেই রাখা যেত। এতে যে অর্থনীতির উপকার হতো, তাতে কোনো ভুল নেই।
আজ যারা বিদেশি জনশক্তি নিয়োগ দিচ্ছে, তাদের মানসিকভাবে দেশের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়টি জোর দিয়ে বলা হয়নি। কেবল কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারি তরফে বলা হলেও মানসিকভাবে তাদের মনন ও মেধা বিকাশের আয়োজন করা হয়নি। কারণ, আমলাতন্ত্র এ ব্যাপারে নিস্পৃহ। তারা সেবা দেওয়ার চেয়ে মানসিকভাবে ক্ষমতাটাকেই বড় করে দেখতে শেখে।
এর কারণ কী? কারণ রাজনৈতিক ও লুটেরা মানসিকতা। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে শিল্পপতিদের ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিয়ে খেলাপি হওয়ার সুযোগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আবার আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় রাতারাতি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়াটাও লুটেরা মানসিকতার উদাহরণ হয়ে রয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও, পণ্য সরবরাহ না করলেও মাসে মাসে তাদের উচ্চমূল্যের বিল পরিশোধ করা হতো। এ নিয়ে বহুবার লেখালেখি হয়েছে, হাসিনার বশংবদগণকে এজন্য কোনো জবাব দিতে হয়নি। ওই খাতে কত লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, তার হিসাবও দেওয়া হয়নি। আবার এ বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে ইন্ডিয়ার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন হাসিনা। আমাদের গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় তেল ও গ্যাস খুঁজে নেওয়ার আয়োজনও সীমিত। পেট্রোবাংলার বাপেক্সকে দিয়ে সামান্যই কূপ খনন করা হয়। সেসব কূপে তেল বা গ্যাস পাওয়া গেলেও তা উৎপাদনে আনার গরজ তেমন একটা নেই। আবার বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অনুসন্ধান কূপ খননের চুক্তি করার আগে তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আছে কী নেই, তা নিরূপণ করে দেখার যোগ্য বিশেষজ্ঞ দেশে কি নেই? কোন সেক্টরে আমাদের বিনিয়োগ জরুরি, সেটা নির্ধারণ করার জন্য খুব বেশি দক্ষ লোকের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু মনমানসিকতায় লোভ ভর করলে তারা অনেক কিছুই করতে পারেন। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন গভর্নর হাসিনার আমলে যে লুটের দরোজা খুলে দিয়েছিলেন, তাদের প্রথমজন ড. আতিয়ার রহমান। এস আলম গ্রুপ এ কারণেই সাতটি ব্যাংক গ্রাস করতে পারে সহজেই। নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা, সব প্রতিবন্ধকতাই উঠিয়ে দেয়, যাতে হাসিনার লোকরা ব্যাংকের টাকা ঋণের নামে লুট করে সেই অর্থ পাচার করতে পারে।