
৪০০ কোটি টাকা দামে রাশিয়ার দুই হেলিকপ্টার কিনে বিপাকে বাংলাদেশ
রাশিয়ার কাছ থেকে দুটি হেলিকপ্টার কিনেছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। হেলিকপ্টার দুটির দাম ৪০০ কোটি টাকা, যার ২৯৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন হেলিকপ্টার আনতে পারছে না বাংলাদেশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের জন্য গত ৩১ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরও চুক্তি
২০২১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। অথচ একই বছরের নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি সই করে। প্রশ্ন উঠেছে, নিষেধাজ্ঞার কথা জানার পরও কেন ২৯৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিগত সরকারের করা এই চুক্তির কারণে এখন বিপাকে আছে বর্তমান সরকার। তারা হেলিকপ্টার দুটি আনার উপায় খুঁজছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ অনুবিভাগ) আতাউর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, কূটনৈতিক উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে হেলিকপ্টার দুটি আনা যায় কি না, সে পথ খোঁজা হচ্ছে।
আর্থিক ক্ষতি বাড়তে পারে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টার দুটি এখন রাশিয়ার ওয়্যারহাউসে (গুদাম) রাখা আছে। রক্ষণাবেক্ষণে খরচও হচ্ছে।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী হেলিকপ্টার না নিলে আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। দুই পক্ষের মধ্যে করা চুক্তির একটি ধারায় উল্লেখ আছে, চুক্তি ভাঙলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ব্যয় করা পুরো অর্থ দাবি করতে পারবে। বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তি হবে আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টারে (এসআইএসি)। পুলিশ সদর দপ্তরের আশঙ্কা, বাংলাদেশ হেলিকপ্টার না নিলে প্রতিষ্ঠানটি মামলা করতে পারে।
ব্যাংকার ও মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞ মামুন রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আনা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-সম্পর্ক অনেক গভীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টিকফার (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। দেশটি রাজি হলেই কেবল হেলিকপ্টার আনা উচিত। রাজি না হলে ঠিক হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রেয়াত চেয়ে আবেদন করতে পারে। হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজের জন্য আনা হচ্ছে এবং হেলিকপ্টার না আনলে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে—এমন বাস্তবতা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই বাস্তবতা বুঝে অনুমতি দিতে পারে।