আইন-শৃঙ্খলার অবনতিই ব্যবসায় ক্ষতির অন্যতম কারণ

জাগো নিউজ ২৪ সাইফুল হোসেন প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:১৩

একটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মেরুদণ্ড। যেখানে নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, হঠাৎ হরতাল-অবরোধ, ডাকাতি কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশি, সেখানে কোনো টেকসই ও লাভজনক ব্যবসা গড়ে ওঠে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘাটতি আজ বড় এক সংকটে পরিণত হয়েছে।


ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (DCCI)-এর ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র নিরাপত্তা-সংকট, অনিয়ন্ত্রিত বিক্ষোভ ও জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বছরে গড়ে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব ঘটনা শুধু ক্ষতি করে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস করে দেয়, যার ফলে নতুন বিনিয়োগও বন্ধ হয়ে যায়।


বিশেষত ঢাকার বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করা উদ্যোক্তাদের জন্য এই সমস্যা আরও প্রকট। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে অনেক উদ্যোক্তাই মাঝেমধ্যে স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা চাঁদাবাজ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কাছ থেকে চাপের মুখে পড়েন। উৎপাদনের গতি, পণ্যের গুণগত মান এবং সময়মত ডেলিভারি সবই ব্যাহত হয়।


নারায়ণগঞ্জের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নাম না উল্লেখ করার শর্তে বলেন, “আমরা ব্যবসা করতে চাই, কিন্তু প্রতিদিনই কোনো না কোনো ‘সংগঠনের’ নামে চাঁদা দিতে হয়। দিতে না চাইলে ভয় দেখানো হয়, মালামালের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়।” তিনি আরও বলেন, “নতুন পুঁজি বিনিয়োগ করতে সাহস পাই না, কারণ জানি না পরদিন আরেকটা ঝামেলা আসবে কিনা।”



বাংলাদেশে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হঠাৎ রাস্তা অবরোধ, পিকেটিং, আগুন দেওয়া, গাড়ি ভাঙচুর—এসব ঘটনা প্রতিদিনের ব্যবসার সময়সূচি নষ্ট করে দেয়। এতে পণ্য পরিবহন, সরবরাহ চেইন, কাঁচামাল সংগ্রহ সবই ব্যাহত হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা (SME) এসব অস্থিরতা সামাল দিতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দেন।


বিশিষ্ট একজন ব্যবসায়ী একবার মন্তব্য করেছিলেন, "ব্যবসায়ীদের বড় চ্যালেঞ্জ এখন আর বাজার নয়, বরং বাজারে পৌঁছানো। রাজনৈতিক নিরাপত্তা না থাকলে ব্যবসায়ীরা একধরনের ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র মধ্যে পড়ে যায়।” এই বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতারই প্রতিফলন।


দেশে অনেক উদ্যোক্তা আছে যারা ছোট ও মাঝারি শিল্প স্থাপন করতে চান, কিন্তু স্থানীয় দখলবাজদের কারণে জমি কিনতে পারেন না। আবার যদি জমি কিনতেও পারেন, তবে সেই জমিতে ‘স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের’ অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না। এমন ঘটনা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। উদ্যোক্তারা অনেক সময় পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চাইলেও তারা নানা কারণে নিরুত্তর থাকেন।


আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ থাকলে শুধু ব্যবসা না, দেশের সার্বিক অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বব্যাংক এবং IFC-এর Doing Business Report অনুযায়ী, ২০২0 সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে Ease of Doing Business Index-এ ছিল ১৬৮তম। যার একটি বড় কারণ ছিল আইনগত সুরক্ষা ও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা। এছাড়া বাংলাদেশে কোনো ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গড়ে সময় লাগে ১৪৪২ দিন—প্রায় চার বছর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানির অর্থনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে।


দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন FBCCI বারবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে যে, দেশের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে হলে প্রথমেই স্থানীয় স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল হতে হবে যাতে ব্যবসায়ীরা নিঃসঙ্কোচে বিনিয়োগ করতে পারেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও