এই দুষ্টচক্রকে থামিয়ে দিন

যুগান্তর জিয়া আহমদ প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৪

দেশের কোনো একটা স্থানে কোনো একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটল, তারপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় একশ্রেণির মানুষ, যারা ওই বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার পথটা বেছে নিল। এরপর ঘটল নীতিহীন ও সুযোগসন্ধানী মানুষের একজোট হওয়ার পালা। তারা দেশের রাজধানী তো বটেই, দেশের বিভিন্ন স্থানেও জোটবদ্ধ হয়ে হামলে পড়ল কোনো মানুষের বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি দেশের প্রশাসনের মূলকেন্দ্র সচিবালয়েও। তারা ভাঙচুর, হামলার মাধ্যমে অফিস-আদালতের কাজকর্ম স্তব্ধ করে ফেলে, সবাইকে জিম্মি করে তাদের অনৈতিক দাবি আদায় করে নিল। গত বছরের আগস্টের সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যেমন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ ও পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি, পেয়েছি কথা বলা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, একই সঙ্গে পেয়েছি এ কুৎসিত ‘মব কালচার’। এ ‘মব সংস্কৃতি’ আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সব শুভ রীতিনীতিকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।


২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভেঙে পড়ল ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠে উত্তরা মডেল টাউনে অবস্থিত ‘মাইলস্টোন’ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর। স্কুলটি ছুটি হওয়ার সময়ে যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে তখন স্কুলে উপস্থিত প্রায় সব ছাত্রছাত্রী স্কুল কম্পাউন্ডেই ছিল। আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিশুদের বাসায় নিতে আসা অভিভাবকরাও। ফলে এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত ও নিহত হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম, যা বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। আর আকস্মিক এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না হওয়ার কারণে এসব ঘটনায় প্রাণহানি রোধ করাও সম্ভব নয়। দ্রুত উদ্ধার কাজ করা এবং অতিদ্রুত আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা গেলে প্রাণহানি কিছুটা কমানো সম্ভব। কিন্তু গত সাড়ে পনেরো বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনে রিক্ত এ দেশের সরকারের পক্ষে রাতারাতি চিকিৎসাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় আমরা এ পর্যন্ত ৩৫ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অন্য অনেককে হারিয়েছি; যে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।



দেশে সংঘটিত আরও বিভিন্ন ঘটনার মতো এ হৃদয়বিদারক ঘটনাও এ মব সৃষ্টিকারীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারা দেশ যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার। প্রথমত, দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের গুম করা লাশ ফেরত দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, তারা দুর্ঘটনা-পরবর্তী দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত কেন গভীর রাতে দেওয়া হলো, সে কারণে ‘মব’ সৃষ্টি করে সচিবালয় ঘেরাও করে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে এবং নানা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। বস্তুত, তাদের এ ঘেরাওয়ের কারণে দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার পর সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত উপস্থিত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে সচিবালয় থেকে বের করে দেয় এবং এ ভাঙচুরে নেতৃত্বদানকারী দু-একজনকে গ্রেফতার করে। এই যে ‘মব’ সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যায় প্রতিবাদ এবং অন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা, তা ঢাকা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে নগরীকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।


২১ জুলাইয়ের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র প্রথম মুহূর্ত থেকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। ওই স্কুল বা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় তাদের অনভিজ্ঞ চোখে যা দেখেছে, অর্থাৎ ১০০-২০০ মানুষ অকুস্থলে নিহত হয়েছে, সেই ভিত্তিহীন কথাকে কেন্দ্র করে তারা শিক্ষার্থীদের লাশ গুমের অভিযোগে সরকারকে দায়ী করে প্রচারণা চালাতে থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মৃত শিক্ষার্থীদের ‘হাড়-হাড্ডি’কে বিমানবাহিনীর সদস্যদের বস্তায় করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। বস্তুত বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাদের দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিধ্বস্ত বিমানের খণ্ডিত অংশগুলোকে বস্তায় ভরে তাদের ঘাঁটিতে নিয়ে গেছেন। আর নিহত ছাত্রছাত্রীদের দেহের অংশগুলোকে তারা ওই ক্লাসের ‘রোল নম্বর’ অনুযায়ী, সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তাদের শনাক্তকরণে সুবিধা হয় এবং শিশুদের দেহের ওই অংশগুলোকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ ও পরবর্তীকালে দাফনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যায়। এসবই আমরা জেনেছি সংবাদমাধ্যম, ফেসবুক ও ইউটিউবের নানা ভিডিও থেকে; কিন্তু দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা যাদের লক্ষ্য, তারা এ সংবাদগুলোর খণ্ডিত অংশকে ব্যবহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের স্কুল-কলেজে যারা পড়াশোনা করে, তারা সমাজের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মানুষ, যাদের পরিবার থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর করা হয় মোটামুটি প্রতি ঘণ্টায়। এ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা সন্তানদের লাশ গুম করার কোনো সুযোগই নেই। তারপরও কুচক্রীমহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা পর্যন্ত বলে বসলেন, প্রায় ১০০ জন মানুষ এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে! কিন্তু কোন সূত্র থেকে এ তথ্যটা তিনি পেলেন, তা বললেন না। কথাটা বলার আগে তার কথার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা-ও তিনি ভাবলেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও