অধঃপতনে আঞ্চলিক দলে পরিণত আওয়ামী লীগ

যুগান্তর মনজুর কাদের প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫

‘আমার ফাঁসি চাই’ বইটি মতিয়ুর রহমান রেন্টু লিখেছিলেন ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। লেখক খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে লেখা বইটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রের বিভিন্ন ভয়াবহ দিক ফুটে উঠেছে। আলোড়ন সৃষ্টি করা বইটি হাসিনা সরকার নিষিদ্ধ করেছিল, পাশাপাশি মতিয়ুর রহমান রেন্টু সস্ত্রীক অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছিল এবং খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে নাগেশ্বরী নদীর ফেরির সারেংকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে বইটিতে দাবি করা হয়। আরও বলা হয়, মিটিং-মিছিলে লাশ পড়ার খবর শুনলে খুশি হয়ে উঠতেন খুনি হাসিনা।


শেখ হাসিনা অনেক বদগুণ রপ্ত করেন পারিবারিক সূত্রে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে যিনি কোনো প্রকার স্বাধীনতা ঘোষণা না দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাস রণাঙ্গনে অনুপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতা হয়ে যান। অপরদিকে ১৯৬৯ সালে যেসব বাম রাজনৈতিক দল (পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এবং সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন পরবর্তীকালে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি) সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ ও জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের ঘোষণা দেয় এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা স্বাধীনতাকামী নিউক্লিয়াস (পরবর্তীকালে জাসদ)-সবাই শেখ মুজিবুর রহমানের রোষানলে পড়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই মুজিব মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহীর মুক্তাঞ্চলে অবস্থানরত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যার আদেশ দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এরপর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা জাসদ (নিউক্লিয়াস) নিধন শুরু করেন।


‘নকশাল দেখামাত্র গুলি করো’


এরপর শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি নির্দেশে সমগ্র বাংলাদেশে হাজার হাজার প্রগতিশীল (জাসদসহ) নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। খুলনার এক জনসভায় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেন: ‘নকশাল দেখামাত্র গুলি করো’।



‘নকশাল কি কারও কপালে লেখা থাকে?’


ন্যাপের সভাপতি (আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রমাদ গুনলেন। নেতাকর্মীদের পল্টনে জনসভা আয়োজনের নির্দেশ দিলেন তিনি। লাখো মানুষের সভায় শেখ মুজিবকে উদ্দেশ করে মওলানা বললেন, ‘মুজিব, নকশাল কি কারও কপালে লেখা থাকে যে পুলিশ তাকে দেখে দেখে গুলি করবে?’


স্বাধীন দেশে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা


রাজনৈতিক সমাবেশে পাখির মতো গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যা করা আওয়ামী লীগের পুরোনো স্বভাব। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবসংলগ্ন এলাকায় ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিস (ইউএসআইএস)-এর সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে গুলি করে ছাত্রনেতা কাদের ও মতিউরকে হত্যা করা হয়। এ সময় অসংখ্য ছাত্র আহত হয়। একই কায়দায় ১৯৭৪ সালের এক সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জাসদের সমাবেশে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয় মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের।


সিরাজ সিকদার হত্যা


১৯৭৫ সালের ইংরেজি নববর্ষের দ্বিতীয় দিনটিতে ‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি’র প্রধান নেতা সিরাজ সিকদার মুজিব সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দম্ভের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’। এ হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর শেখ মুজিবুর রহমান সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করে নিজে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফ্যাসিস্ট হিসাবে আবির্ভূত হন। এরপর শেখ মুজিবের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নামটি সম্পর্কে এক ভীতিকর অনুভূতি হতে থাকে মানুষের মনে। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারসহ নিহত হলে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পালটে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানের সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন এবং দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ ছিল। এ কারণেই দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের ভুলের কারণে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা জাতীয় পার্টির সমর্থনে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়।


বিডিআর হত্যাকাণ্ড


আধিপত্যবাদী শক্তির মদদপুষ্ট হয়ে ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে অজনপ্রিয় আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার পরপরই, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) দরবার হলে হামলা করে ৫৭ নিরস্ত্র সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এরপর হত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ব্যাংক ডাকাতি, আধিপত্যবাদী শক্তির গোলামি করা এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে মানুষের ঘৃণার পাত্র হয় দলটি। এর ধারাবাহিকতায়, ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মুসল্লিদের গুলি করে হত্যা করার পর পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে আওয়ামী লীগ। তাদের হত্যাকাণ্ড এবং উল্লাস চলতে থাকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও