
সেনা প্রহরায় এনসিপির সমাবেশ কী বার্তা দিচ্ছে?
গোপালগঞ্জে সমাবেশ করতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হামলার মুখে সেনাবাহিনীর প্রহরায় শহর ছাড়েন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এটি ধারণা করা অমূলক নয় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কঠোর না হলে সেখানে হয়তো আরও বেশি প্রাণহানি হতো এবং এনসিপির অনেক নেতার জীবনই হয়তো বিপন্ন হতো।
একই ঘটনা ঘটে শনিবার কক্সবাজারের চকরিয়ায়ও। এদিন এক সমাবেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে কটূক্তি করার জেরে এনসিপির সভামঞ্চ ভাঙচুর করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিকালে সেনাবাহিনীর বিশেষ পাহারায় কক্সবাজার ত্যাগ করেন এনসিপির নেতারা।
নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান চৌধুরী বলেন, ‘সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সরকারের সকল সংস্থার নিরাপত্তা বলয়ে এনসিপির সমাবেশ উদ্দেশ্যপূর্ণ, রহস্যজনক ও উসকানিমূলক।’ তিনি সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ ও ‘বেয়াদবি’ বলেও মন্তব্য করেন।
বিগত সরকারের আমলে সরকারবিরোধীদের পক্ষ থেকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর ব্যাপারে বলা হতো, ‘তারা পারলে পুলিশ ছাড়া মাঠে নামুক।’ এ সময় দেখা যেত, সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, তার মাঝখানে মিছিল করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, অনেকে পুলিশ বাহিনীকে ‘পুলিশ লীগ’ বলে অভিহিত করতেন।
এরকম বাস্তবতায় গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত এনসিপির ব্যাপারেও এখন প্রশ্ন উঠছে যে, তাদের কেন সেনা প্রহরায় সমাবেশ করতে হচ্ছে? বস্তুত জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নেতৃত্বে এই দলটি গঠনের আগে থেকেই অনেকে এই দলটিকে ‘কিংস পার্টি’ বলে অভিহিত করছেন, যা এখন নানান ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরা ব্যতিরেকে এনসিপি কি সারাদেশে বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারবে? যদি না পারে তাহলে সেখানে দুটি প্রশ্ন সামনে আসবে। ১. অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ‘নির্দলীয়’ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কেন একটি রাজনৈতিক দল নিরাপদে সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন করতে পারবে না? কেন তাদের পুলিশি বা সেনা প্রহরা দিতে হবে?; ২. অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দলটিকেও কেন এই ধরনের সুরক্ষাবলয় নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে? জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠছে না কেন? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে কেন?
গণমাধ্যমের খবর বলছে, রোববার চট্টগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ কেন্দ্র করে সমাবেশস্থল ও হোটেল নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়। সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার বিকালে ডগ স্কোয়াড দিয়ে পুরো মোটেল সৈকত তল্লাশি চালায় সিএমপির নগর পুলিশের একটি দল। যে তিনটি ফ্লোরে নেতারা থাকবেন, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছাড়া আর কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার রাতে বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে এনসিপির সমাবেশ হয়। সেখানেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।