আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নারকীয় তাণ্ডব

যুগান্তর গোপালগঞ্জ মোবায়েদুর রহমান প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৪:৩৪

আইনশৃঙ্খলা এবং শাসনের দড়ি যদি বেশি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তার ফল যে কতখানি বিষময় হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো গত ১৬ আগস্ট বুধবারের গোপালগঞ্জের ঘটনা। আমি ঠিক করেছিলাম, আজকের কলামে সংবিধান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সম্পর্কে লিখব। কিন্তু বেলা সাড়ে ১০টায় আমার কম্পিউটার ওপেন করে যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে শুরু করলাম, তখন হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটি বাংলা জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, আজ (বুধবার) দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ আসবেন। তাদের আগমন ঠেকানোর জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তখনো এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ সদরে পৌঁছাননি। তাদের আসার পথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছে। পুলিশ দেখেও দেখেনি। ওইদিকে এনসিপির জনসভার জন্য যে মঞ্চ নির্মিত হয়েছিল, সেটিও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা ঘিরে ফেলেছে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী অদূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। দুপুর ১২টার দিকে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ দেখলাম। প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে লেখা হয়েছে, পুলিশ নির্বিকার। নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রথমে গাছপালার ব্যারিকেডের সম্মুখীন হন। তাদের সমর্থকরা বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন। অতঃপর পুলিশ এবং এনসিপি কর্মীদের সহযোগিতায় গাছপালা সরানো হয়। এনসিপি নেতারা বেলা ৩টার দিকে মঞ্চে আসেন। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই জনতা তাদের বক্তব্য শোনেন। ওদিকে পেছনে এবং দুই প্রান্তে প্রায় ৩শ আওয়ামী ক্যাডার লাঠি হাতে ঘোরাফেরা করছিল।


এনসিপি নেতারা মঞ্চ থেকে নামামাত্র ওই ৩শ লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রধারী আওয়ামী পাণ্ডারা মঞ্চ আক্রমণ করে। তারা মঞ্চ ভেঙে ফেলে। এছাড়া অনেক চেয়ারও ভাঙচুর করে। এনসিপি নেতাদের একটি অংশ একদিক দিয়ে বেরোতে সক্ষম হলেও অপর অংশ আওয়ামী মাস্তানদের দ্বারা অবরুদ্ধ হন। তখন পুলিশ এবং আর্মির সহযোগিতায় তারা এসপি অফিসে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে আওয়ামী-ছাত্রলীগ মাস্তানরা গোপালগঞ্জ শহরে তাণ্ডব সৃষ্টি করে। তারা ডিসি অফিস অর্থাৎ জেলা প্রশাসককে ঘেরাও করে। তাকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ২শ জনের একটি দল গোপালগঞ্জ কারাগার আক্রমণ করে। তারা কারাগারে ভাঙচুর করে এবং কারারক্ষীদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।



দুপুরে আমি যমুনা টেলিভিশনের ঘণ্টাব্যাপী লাইভ অনুষ্ঠান দেখি। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করি, শহরের একস্থানে শতাধিক আওয়ামী মাস্তান বৃষ্টির মতো পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) বা সাঁজোয়া যানের প্রতিও বিরামহীনভাবে ইস্টক বর্ষণ করতে থাকে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ইস্টক বর্ষণের পালটা পুলিশও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। যমুনা টেলিভিশনের ওই লাইভে বলা হয়, তখন সেখানে প্রায় ১শ পুলিশ ছিল। আর তাদের বিপরীতে শদুয়েক আওয়ামী পাণ্ডারা ছিল। পুলিশ যদি সক্রিয়ভাবে ধাওয়া দিত, তাহলে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে নিষিদ্ধ দলগুলোর ক্যাডাররা কেটে পড়ত। সেই ধাওয়া পুলিশ দিল, কিন্তু অন্তত দেড় ঘণ্টা পর।


এনসিপি নেতারা যখন এসপির অফিসে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রংবাজরা শহরে নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কোনো পত্রিকাই এ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির চিত্র সঠিকভাবে দিতে পারছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি যে কত ভয়াবহ, সেটি প্রথম টের পাওয়া যায়, যখন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ খবর দেয়, এনসিপি নেতাদেরও আঘাত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকার।


সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যায়, বিকালের পর থেকে। প্রথমে খবর আসে, এ সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তারা ৩টি মৃতদেহ পেয়েছে। সন্ধ্যার দিকে জানা যায়, এ সংঘর্ষে ৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা গড়ানোর পর জানা যায়, ১৪৪ ধারার পর গোপালগঞ্জে বুধবার রাত ৮টা থেকে পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্থাৎ টানা বিরতিহীন ২২ ঘণ্টা কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও