গণমাধ্যম কি ভিকটিমের সুরক্ষা দেয়?

ঢাকা পোষ্ট রাহাত মিনহাজ প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৮

সাংবাদিকতা একটি অতি সংবেদনশীল পেশা। দায়িত্ব পালনে সামান্য ভুল ও শিথিলতা যেকোনো মানুষের জীবনে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একজন ভিকটিম বা অভিযুক্তের জীবনকে রূপান্তর করতে পারে সাক্ষাৎ নরকে। তাই এ বিষয়ে সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল পেশাদার আচরণ সবারই কাম্য। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।


বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ফয়েজ আহমদ। ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ নামে পরিচিত এই গুণী সাংবাদিক বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নিয়ে নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছেন। মধ্যরাতের অশ্বারোহী নামেই তার একটি অনবদ্য আত্মজীবনী গ্রন্থ রয়েছে। এই গ্রন্থে সত্যবাবু মারা গেছেন নামের একটি নিবন্ধে তিনি অপসাংবাদিকতা, অসংবেদনশীল সাংবাদিকতা কীভাবে একজন মানুষের জীবন একটি পরিবার ধ্বংস করে দিতে পারে তার একটি করুণ জীবনকাহিনী বর্ণনা করেছেন। এই মর্মান্তিক কাহিনীর প্রধান চরিত্র বরিশালের সিনিয়র সাব-জজ মি. সান্যাল।


ঘটনাটি ১৯৬৯ সালের। ওই বছর যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারত যাওয়ার পথে এক সম্ভ্রান্ত নারী আটক হন। তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় ছয় হাজার পাকিস্তানি টাকার নোট ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার। এই টাকা ও অলংকার তিনি বহন করছিলেন মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে। শুল্ক বিভাগ দাবি করে ওই টাকা ও অলংকার যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া হয়নি। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


আর এই গ্রেফতারকে বিশাল অর্জন দাবি করে পুরো ঘটনা, আটককৃত ওই নারীর স্বামীর নাম পরিচয়সহ সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয় শুল্ক বিভাগ। সাংবাদিকও কোনো কিছু বিবেচনা না করে ওই নারীর স্বামীর নাম পরিচয়সহ সংবাদ পাঠিয়ে দেন ঢাকা অফিসে। পরের দিন খবরও প্রকাশিত হয়। সকালে সংবাদপত্রের পাতায় সেই খবর পড়ে আদালতে আসেন সাব-জজ মি. সান্যাল। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে তার সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেন।



আদালতের সহকর্মীরা তাকে আশ্বস্ত করেন, এরসাথে তো আর তিনি জড়িত নন। এটা একটা ভুল। কিন্তু সারাদিকের বিচারিক কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিচারক সান্যাল তার সহকর্মীদের বলে যান, সব বিচার বিভাগের ওপর কলঙ্ক এসে পড়েছে। যেজন্য মানুষ বাঁচে তাই আমি হারিয়েছি। কলঙ্কময় এ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অর্থ নেই। পরের দিন সকালে বরিশাল শহরে একটি শোকের খবর ছড়িয়ে পড়লো- জজ সান্যাল বাবু আত্মহত্যা করেছেন। (সত্যবাবু মারা গেছেন, মধ্যরাতের অশ্বারোহী, ট্রিলজির দ্বিতীয় পর্ব, পৃষ্ঠা ৬৪-৬৫)  


যেকোনো অপরাধ বা সহিংসতামূলক সংবাদে সংবেদনশীলতা অপরিহার্য। যদি নারী বা শিশু কোনো চরিত্র হন তাহলে আরও অধিক সতর্কতা অপরিহার্য। একটু অসতর্কতা, এক মুহূর্তের ভুল কারও জীবনের সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধন করতে পারে। সামাজিক জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। যার উদাহরণ এখন মাঝেমধ্যেই আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে নেতিবাচক সাংবাদিকতাকে।


ক্লিকবেইট, লাইক, শেয়ার আর অনলাইন থেকে রাজস্ব আদায়ের অশুভ প্রতিযোগিতার এই যুগে ভিকটিম বা অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্তের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার সাংবাদিক নন এমন অনেক অনলাইন প্রচারকারীও এ রকম সংবেদনশীল ঘটনার ক্ষেত্রে ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে অনলাইন বিশেষ করে মেটা প্ল্যাটফর্মসহ (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ম্যাজেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, থ্রেডস) নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।


যে আধেয় বা কনটেন্টগুলো আবার দেদারসে শেয়ার করছেন স্বল্প গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিকেরা। যা পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলছে। এখানে বলে রাখা ভালো, বর্তমানে বাংলাদেশে পেশাদার সাংবাদিকের অনলাইন আধেয় বা কনটেন্ট এবং অপেশাদার অনলাইন প্রচারকারীদের আধেয় বা কনটেন্ট আলাদা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।


সমাজের বড় একটি অংশের মানুষ এই দুই ধরনের আধেয় বা কনটেন্টের পার্থক্যই করতে পারেন না। অনেকেই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীর আধেয় বা কনটেন্ট (ইউজিসি: ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট) ও সংবাদ আধেয় বা কনটেন্টর মধ্যে নূন্যতম ফারাক খুঁজে পান না। এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিসরকে অত্যন্ত জটিল ও দূষণীয় করে তুলেছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সাংবাদিকতার মান। লঙ্ঘিত হচ্ছে ভিকটিম এবং অভিযুক্ত অপরাধীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও