বোমা মেরে সরকার ফেলে দেওয়ার যুগ কেন শেষ?

প্রথম আলো ইয়ান বুরুমা প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৬

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যে বিমান হামলা চালিয়েছে, তাতে আসলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জুনে ন্যাটো সম্মেলনে দাঁড়িয়ে গর্ব করে বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।’


তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান হয়তো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কাজ শুরু করতে পারবে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি।


একটি বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত; তা হলো, এই বিশাল মার্কিন-ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ইরানের জনগণকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উসকে দিতে পারেনি। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই ফলাফলটিই আশা করেছিলেন। এমনকি ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, ‘এই সরকার যদি ইরানকে আবার মহান করতে না পারে, তাহলে সরকার পরিবর্তনই সঠিক সমাধান’। তবে তিনি বলেননি, সেই পরিবর্তনটা দেশীয়ভাবে হবে, নাকি বাইরের থেকে চাপ দিয়ে ঘটানো হবে।


সাধারণ জনগণের ওপর বোমা ফেললে তারা ভয় পেয়ে সরকারবিরোধী হয়ে উঠবে এবং নিজেরা বাঁচতে তারা সরকারকে টেনে নামাবে—এটি বহু পুরোনো একটি চিন্তা। সময়ের পরীক্ষায় এই ধারণা বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে।


১৯৩৭ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধের সময় জার্মানি ও ইতালির বাহিনী যখন গোয়ের্নিকা শহর বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, তখনো জনগণের মনোবল ভাঙেনি।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ব্রিটেনে যে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, কিংবা মিত্রশক্তি নাৎসি জার্মানির শহর ধ্বংস করে দিয়েছিল—তাতেও সাধারণ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি।



একইভাবে, ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে উত্তর ভিয়েতনামে ‘অপারেশন রোলিং থান্ডার’ নামের ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও এই তত্ত্ব ব্যর্থ হয়েছিল। এখন গাজায় ইসরায়েল যে বিমান হামলা চালাচ্ছে, তাতেও একই ফলাফল দেখা যাচ্ছে।


এই ধরনের যুদ্ধনীতিকে বলা হয় স্ট্র্যাটেজিক বোম্বিং বা স্যাচুরেশন বোম্বিং বা টেরর বোম্বিং। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইতালির জেনারেল জুলিও দৌহে এই কৌশলটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই নির্মম বোমা হামলাগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েন দুইজন। একজন হলেন, ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের বোম্বার কমান্ড প্রধান আর্থার ‘বম্বার’ হ্যারিস এবং অন্যজন হলেন, মার্কিন বিমানবাহিনীর জেনারেল কার্টিস এমারসন লে’মে।


জেনারেল লে’মে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে জাপানের বহু শহর একেবারে ধ্বংস করে দেন এবং লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেন। পরে তিনি নিজেই বলেন, ‘যদি আমেরিকা এই যুদ্ধে হারত, তাহলে আমাকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা হতো।’


এই ইতিহাসগুলো দেখায়, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার এবং তাদের সরকারবিরোধী বানানোর পরিকল্পনা যতবারই নেওয়া হয়েছে, ততবারই তা ব্যর্থই হয়েছে। বরং এই ধরনের কৌশল বর্বরতা ও যুদ্ধাপরাধের নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছে।


কৌশলগত বোমাবর্ষণ বা পরিকল্পিতভাবে শহরের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বহু শহরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ব্রিটিশ কমান্ডার আর্থার হ্যারিস অনেক ‘বোচ’ (জার্মানদের জন্য অবজ্ঞাসূচক একটি শব্দ) হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং তা তিনি অনেকাংশে করতে পেরেওছিলেন। কিন্তু এই কৌশল যতই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হোক না কেন, তা কোনো সময়েই জনতার বিদ্রোহ ঘটাতে পারেনি। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলার পর জাপানে আমরা কোনো সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলন দেখিনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও