
শিক্ষা খাতে বাজেট, আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
০২ জুন ২০২৫ উত্থাপিত হলো বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট। যেখানে অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষা খাতের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উত্থাপিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৭ শতাংশ। বর্তমান উপস্থাপিত বাজেট দেখা যায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দুটি মন্ত্রণালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের চেয়ে টাকার অংকে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শিক্ষা খাতে মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা সংশোধনে ৯৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। খরচ করা ওই টাকার পরিমাণ ছিল সংশোধিত বাজেটের ১৩.৩২ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৮ শতাংশ।
অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের শিক্ষা খাত জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ পেলে তা আদর্শ ধরা হয়। নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে শিক্ষাখাতে টাকার অংকের হিসেবে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও এই খাতে বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে অনেকটাই কমেছে। এই বাজেট নিয়ে নানা মহলে নানা ধরনের আলোচনা চলমান রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির জন্য ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সংশোধিত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের সরবরাহের জন্য পাঠ্যপুস্তকে বরাদ্দ ১ হাজার ৬২৬ কোটি রাখা, মাদ্রাসা শিক্ষায় এবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদ্রাসাগুলোর এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন।
এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ধরেই বাজেট বরাদ্দে টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পেলেও যা খরচের খাত হিসেবে বেতন ভাতা প্রদান আর ভৌত অবকাঠামো সংস্কার ও নির্মাণ খাতেই বর্তমান কার্যক্রম চলমান রাখাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং আগামী অর্থ বছরেও এসব বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমলেও গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গুটিকয়েক বিষয়ে আশার বাণী দেখা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে ততটা সমন্বয় ঘটেনি।
বিশ্বের সর্বত্রই শিক্ষা মানের দিকে যখন সবাই জোর দিচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে জিডিপির অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমা যাওয়াটা দুঃখজনক। যে কোনো শুভ উদ্যোগের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ও নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম নিয়ামক হলো ফাইন্যান্স বা অর্থবরাদ্দ।
বরাদ্দ না থাকলে শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্যোগ আমরা কীভাবে আশা করতে পারি? শিক্ষা খাতের বাজেটে টাকার অঙ্কে যতটুকু বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে ততটা আশানুরূপ নয়, আবার তার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কমে যাওয়া অনেকটাই হতাশার। অথচ বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের আশা ছিল শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।
সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকায় শিক্ষায় আশানুরূপ বরাদ্দ হয়তোবা আসেনি। রাজস্ব আদায়ের হার আশানুরূপ থাকলে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়তোবা আরও অগ্রাধিকার পেত বলে আমরা ধারণা করতে পারি। কিন্তু আমাদের ধারণায় কিছু আসে যায় না যখন প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি খাতার ব্যবধান যখন বেশি হয় তখনই হতাশা জেঁকে ধরে।