
বছরে মরুকরণ হচ্ছে বিশ্বের ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকায়
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বোরো খেতে সেচ দেওয়ার জন্য পানি পাচ্ছিলেন না। গভীর নলকূপের অপারেটর তাদের পানি না দিয়ে উল্টো ঘোরাচ্ছিলেন। এমন করতে করতে চোখের সামনেই বোরো খেত ফেটে চৌচির হতে দেখেন তারা।
একপর্যায়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘটু গ্রামের এই দুই কৃষক নলকূপ অপারেটরের সামনেই বিষ খেলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
তিন বছরেরও বেশি সময় আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে সেচের পানি না পেয়ে ওই দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাটি আলোচিত হয় দেশজুড়ে।
অথচ ৪০ বছর আগেও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ পাঁচ জেলার ২১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি ছিল সহজলভ্য।
সর্বশেষ সরকারের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ওয়ারপোর জরিপে দেখা যায়—এই ২১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭টি ইউনিয়নই পানির চরম সংকটে রয়েছে। গত শতকের নব্বয়ের দশকের তুলনায় পানিসংকটাপন্ন এলাকার সংখ্যাও ক্রমাগত বেড়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাতেও বরেন্দ্র এলাকায় পানির গড় নিম্নস্তর নামতে দেখা গেছে। বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে বরেন্দ্র এলাকায় মাটির নিচে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৩৫ ফুট। ২০২১ সালে তা ৭০ ফুটে নেমে আসে। এ সময়কালে কোনো কোনো এলাকায় ২০০ ফুট নিচেও পানির স্তর পাওয়া যায়নি।
অতি সম্প্রতি চলতি বছরের ১০ এপ্রিল বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য আলাদা খরা তহবিল ও জাতীয় খরা নীতিমালা তৈরির দাবিতে রাজশাহীতে 'জলবায়ু ধর্মঘট' অনুষ্ঠিত হয়। বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ওইদিন নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে পাঁচ মিনিটের জন্য প্রতীকী সড়ক অবরোধ করে খরা ধর্মঘট পালন করে একটি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।