বয়স ৩০ বছর পেরোলেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারপরও এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা চালু আছে। এসব ভুল ধারণার জন্য অনেকে সমস্যাটিকে এড়িয়ে চলতে চান, অনেক সময় যার পরিণাম হয় মর্মান্তিক।
১. বয়স বাড়লে রক্তচাপ একটু বাড়বেই
অনেকের ধারণা, বয়স বাড়ছে, এখন তো রক্তচাপ একটু বাড়ন্তই পাওয়া যাবে। তাই বলে ওষুধ খেতে হবে কেন? কথাটা আংশিক সত্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তনালিগুলো স্থিতিস্থাপকতা হারায়, ফলে রক্তচাপ বাড়তে থাকে। বলা হয়, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ থাকার কথা। এখন চিকিৎসা কেন নেবেন? কারণ, আগেই বলেছি উচ্চ রক্তচাপ হলো নীরব ঘাতক। সবার জন্য আদর্শ রক্তচাপ হলো সিস্টোলিক ১২০ মিমি আর ডায়াস্টোলিক ৭০ মিমি পারদ। তবে বেশির ভাগ উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য ভালো টার্গেট বা কাঙ্ক্ষিত রক্তচাপ হলো সিস্টোলিক ১৩০ ও ডায়াস্টোলিক ৭০ মিমি পারদের মধ্যে রাখা। কেন? যদি এই মাত্রায় রক্তচাপ রাখতে পারেন, তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ৫০ শতাংশ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে ২৫ শতাংশ, হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি কমে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আর কিডনি অকার্যকারিতার ঝুঁকিও কমে ৫০ শতাংশের মতো। একই সঙ্গে কমে গ্যাংগ্রিন, অন্ধত্ব ও স্মৃতিভ্রষ্টতার ঝুঁকি। অর্থাৎ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি একই সঙ্গে এতগুলো রোগকে প্রতিহত করতে পারছেন। ঠিক এ জন্যই যেকোনো বয়সেই উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা জরুরি।
২. চিকিৎসা মানেই কি ওষুধ
আমাদের আরেকটি ভুল হলো আমরা ধরেই নিই যে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা মানে সারা জীবন একটি কি দুটি ওষুধ খেতে থাকা। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার একটি বড় অংশ যে লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন, তা আমরা ভুলে যাই। এমনও হতে পারে যে প্রথম প্রথম বেশ কয়েক বছর কারও শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আবার ভালোভাবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন বজায় রাখতে পারলে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনাও সম্ভব। কেমন হওয়া উচিত একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জীবনাচরণ?
৩. ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে
উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীর দুঃখ এটাই যে ওষুধ শুরু করলে তো সারা জীবন খেতে হবে!
এ কী যন্ত্রণা! সব সময় কথাটা সত্য নয়। যেমন নারীদের গর্ভাবস্থায় একধরনের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় যা সাধারণত সন্তান প্রসবের ছয় সপ্তাহ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সেরে যায়। আবার যাঁরা স্টেরয়েড বা এনএসএআইডি গোত্রের ওষুধ সেবন করছেন, তাঁদের হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে যা ওই ওষুধ বন্ধ করার পর স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। কিছু হরমোনজনিত রোগে, যেমন থাইরয়েডের রোগ বা কুশিং সিনড্রোম, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যায় রক্তচাপ বাড়তে পারে যা ওই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবার কমে যায়। কিডনির রোগ যেমন কিডনির প্রদাহে রক্তচাপ বাড়ে, পরে রোগ সেরে গেলে কমে আসতে পারে।
৪. অল্প বয়সে কি উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে
উচ্চ রক্তচাপ কেবল বয়স্কদের রোগ নয়। অল্প বয়সে, এমনকি শিশু-কিশোরদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সের আগেই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ স্থূলতা। আবার যাঁরা স্থূলতা বা ওবেসিটিতে ভুগছেন, তাঁরা একই সঙ্গে স্লিপ এপনিয়াতেও ভোগেন। এই রোগে রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসের সমস্যা হয় ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসে। এদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। ওজন কমানোর মাধ্যমে এই রোগেরও সমাধান সম্ভব। অল্প বয়সে হরমোনজনিত রোগ ও কিডনি রোগ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। অনেক কিডনি রোগ জিনগত থাকতে পারে। তাই অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা উচিত।