
মিত্র পক্ষের গুলি
২০০১ সালে ‘নেহেরু বক্তৃতা’য় অমর্ত্য সেন ‘মিত্রপক্ষের গুলি’ (ফ্রেন্ডলি ফায়ার) নামে একটা ধারণা প্রবর্তন করেন। সেনাবাহিনী সাধারণত শত্রু দেখলে তাক করে গুলি চালায় সত্য, কিন্তু শত্রু মিত্র ঠাহর করতে না পেরে কোনো কোনো সময় নিজের গুলিতে নিজের লোক মারা যায়। বলা হয়ে থাকে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ২-২০ শতাংশ সৈন্য মিত্রপক্ষের গুলির শিকার হয়। যদি ধরে নেয়া হয় যে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে পাঁচজন করে সৈন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সৈন্য মিত্রপক্ষের আক্রমণের শিকার হয়। অমর্ত্য সেন এই মিত্রপক্ষের হামলা (আমরা বলবো, আত্মঘাতী ব্যয়) বলতে এমন সরকার ব্যয়ের কথা বলছেন যা উপকারে না এসে বরং উল্টো অপকারে আসে। মিত্রপক্ষের গুলির কিছু উদাহরণ নিম্নরূপ-
২০০১ সালে ভারতে খাদ্য মজুতের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি টনের ওপর। যদিও ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের জন্য ২.৫ কোটি টন আপৎকালীন মজুতই যথেষ্ট। এই মজুতের পরিমাণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এক সহকর্মী জঁ ড্রেজ লিখেছেন, ৬ কোটি টন খাদ্যশস্যের বস্তা যদি একটির ওপর একটি সাজানো যেত, তা হলে ১০ লাখ কিলোমিটার ওপরে ওঠা যেত; আর এতটুকু পথ পরিভ্রমণ করা মানে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসা।
২০১২ সালে ভারতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে ৩ কোটি টন মজুত ছিল তা বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদনের প্রায় কাছাকাছি। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে, ভারত সরকারের গুদামে এত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত সত্ত্বেও সেই দেশে অপুষ্টির হার ভয়াবহ । একটা দেশে বিশাল মজুত সত্ত্বেও মানুষ অপুষ্টিতে ভুগতে পারে এমনকি না খেয়েও মারা যেতে পারে এবং দেশটির অতিরিক্ত মজুত অন্যান্য দেশের জন্য মৃত্যুকূপ হতে পারে। আর সম্ভবত এই কারণেই অমর্ত্য সেন ভারতের খাদ্যনীতিকে অনেকটা পাগলামির সাথে তুলনা করেছেন। আমরা বলবো সরকারের খাদ্য মজুত সত্ত্বেও মানুষের মার্সিয়া।
ভারতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়াবার পরও শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ আছে । তার অর্থ, স্বল্প বেতনই যে শিক্ষার মানের অবনতির কারণ হবে এমন কোনো কথা নেই। এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধানের জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো না থাকা এবং (এর সাথে শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নের উপস্থিতি) দায়বদ্ধতার বিচ্যুতি সম্ভবত বেতন ও শিক্ষার মানের বিপরীতমুখী সম্পর্কের জন্য দায়ী।
বাংলাদেশে হস্তচালিত নলকূপের কারণে আর্সেনিক সমস্যা ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গণবিষ প্রয়োগের ঘটনা বলে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, স্বল্প সুদের ঋণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ পেলে শোধ না করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
মানুষের কল্যাণ বা উন্নয়নের জন্য নিবেদিত দেশের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় রাস্তা-ঘাট ও যান-চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনগণের অভিশাপ কুড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারানো।
বাংলাদেশে স্বল্প সুদের ঋণে বিপুল ভর্তুকি সত্ত্বেও অধিকাংশ গরিব মানুষই বেশি সুদেও ঋণ পাচ্ছে না। গরিবের দুঃখ লাঘব করতে গিয়ে দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে মনে হয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ভরতুকি ব্যবস্থা অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে চলেছে- ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এই ভরতুকি ভোগ করে থাকে যদিও ধনীর চাইতে গরিবের ক্ষেত্রে ১ টাকার প্রান্তিক উপযোগ অনেক বেশি।
পুল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে কিন্তু বছরের পর বছর শুধু কয়েকটা স্তম্ভ দাঁড়িয়ে পারাপারের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
টিনের ঘরে পরিচালিত স্কুলের জায়গায় দালান দেয়া এবং তা অচিরেই ধসে পড়ার কারণে টিনের ঘরে পরিচালিত শিক্ষারও পরিসমাপ্তি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অর্থনৈতিক মুক্তি