
সংঘাতের শিকার শিশুদের স্মরণ করার দিন আজ
‘জাবিরের কথা বলতে আমার অনেক কষ্ট হয়। ওকে হারানোর অসহনীয় বেদনা নিয়ে দিন কাটে। এরপরও বারবার বলতে চাই, মানুষ যেন তার কথা মনে রাখে।’ কথাগুলো বলার সময় কাঁদছিলেন জাবির ইব্রাহিমের (৬) মা রোকেয়া বেগম। গত বছরের ৫ আগস্ট মা–বাবার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে আনন্দমিছিলে থাকার সময় গুলিতে প্রাণ হারায় শিশুটি। দক্ষিণখান এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন ও রোকেয়া বেগমের এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে জাবির ছিল সবার ছোট।
শুধু জাবির নয়, রিয়া গোপ, আবদুল মোতালেব, আবদুল আহাদ, সাফকাত সামির ও নাঈমা সুলতানার মতো অনেক শিশু প্রাণ হারিয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। সেসব শিশু-কিশোরকে স্মরণ করার দিন আজ। আজ আগ্রাসনের শিকার নিরপরাধ শিশুদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস (দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডে অব ইনোসেন্ট চিলড্রেন ভিকটিমস অব অ্যাগ্রেসন)। জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ৪ জুন বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত ৮৩৪ জন শহীদ এবং ১২ হাজার ৪৪ জন আহত তালিকাভুক্ত হয়েছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত মানুষের মধ্যে ১৩২ জনই শিশু-কিশোর।
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আবদুল মোতালেব (১৪)। ট্যানারিকর্মী আবদুল মতিন ও জেসমিন বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। মা জেসমিন বেগম বলেন, ছেলে আন্দোলনে যায় দেখে চোখে চোখে রেখেছিলেন। সেদিন তাঁকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে ছেলেটা বের হয়ে যায়, তিনি বুঝতে পারেননি।
একইভাবে সন্তান হারিয়েছেন দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ। তাঁদের একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া গোপ (৬)। ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় চারতলা বাসার ছাদে খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২৪ জুলাই মারা যায় সে। মা বিউটি ঘোষের কথায়, ‘কতটা যন্ত্রণা হয়, কাউকে বোঝাতে পারব না।’