বাজার নিয়ন্ত্রণে নতুন কমিশন গঠন কেন অযৌক্তিক

www.ajkerpatrika.com আবু তাহের খান প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৫, ০৯:৫৪

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকার ‘জাতীয় বাজার স্থিতিশীলতা কমিশন’ (এনবিএসসি) নামে একটি নতুন স্থায়ী কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে এটিও জানা গেছে, এ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং তারা এ কমিশনের একটি রূপরেখাও তৈরি করে দিয়েছে। উক্ত কমিশন গঠনে আপাতত ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে এবং পরে কার্যক্রম বাড়লে সে অনুপাতে ব্যয়ও বাড়বে। কমিশন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে অনুদান নিতে পারে।


বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমানে কমপক্ষে চারটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি), জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এর বাইরে এ কাজে তাদেরকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। তদুপরি কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বিভিন্ন শিল্প ও বণিক সমিতি এবং অন্য আরও বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠনও এ কাজে নানাভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। মোট কথা ফলাফল যা-ই ঘটুক, অর্থাৎ মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকুক বা না থাকুক, এ কাজের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কোনো অভাব নেই। বরং এতসব মাথাভারী প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে এদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় রক্ষা


করার কাজটিই অধিকতর কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় একই কাজে আরেকটি নতুন কমিশনের প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভূত হলো, তা মোটেও বোধগম্য নয়। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে এটুকু বোঝা যায় যে, তা এ ক্ষেত্রে আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের সমস্যাই শুধু বাড়াবে না, জনগণের কষ্টার্জিত করের পয়সারও অপচয় ঘটাবে।


বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পণ্য-সিন্ডিকেট ভাঙার কথিত উদ্দেশ্যে নতুন আরেকটি স্থায়ী কমিশন গঠনের উদ্যোগটি সত্যি বিস্ময়কর। এবং সে ক্ষেত্রে অধিকতর বিস্ময়ের বিষয় এটি যে এর প্রস্তাবক ও রূপরেখা প্রণেতা হচ্ছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। কিন্তু উক্ত ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পণ্য-সিন্ডিকেট ভাঙাসংক্রান্ত কাজের কী সম্পর্ক, তা একেবারেই বোঝা গেল না। তদুপরি এ কাজের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় অন্তত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এবং এর বাইরেও আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মরত থাকা সত্ত্বেও তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর কথা না ভেবে হঠাৎ করে নতুন আরেকটি স্থায়ী কমিশন গঠনের প্রস্তাবকে কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণ করা যাবে? এত দিন বলা হতো, আমলারাই মূলত নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থে এ ধরনের মাথাভারী প্রতিষ্ঠানের বোঝা অন্যায়ভাবে জনগণের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেন। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে, অ-আমলা অস্থায়ী নীতিনির্ধারকেরাও স্থায়ী আমলাদের লালসাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন!


বাজারের ওপর সরকারের যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণ এ দেশে প্রায় কখনোই ছিল না। কারণটি সহজেই বোধগম্য। যখন যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছেন, তখন তাঁরা বা তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিরাই বাজারকে একচেটিয়া মুনাফা অর্জন কিংবা অন্যবিধ বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বা করতে চেয়েছেন। ফলে মুখে ঢাকঢোল পিটিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথিত সেসব প্রচেষ্টার প্রায় কোনোটিই কখনো কাজে আসেনি এবং সেটি আসার কথাও নয়। তবে তা কাজে না এলেও এ উপলক্ষে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুনতর সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্য ঠিকই সফল হয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বর্তমান কমিশন গঠনের উদ্যোগের পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু যুক্তির বিচারে হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে বর্তমানে এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে আবার একটি নতুন কমিশন গঠনের চিন্তা সংশ্লিষ্টদের মাথায় কেন এল, তা-ও আবার এমন এক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে, যার কাজের সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্পর্ক নেই!


আসলে বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থা এখন আর তার যুক্তিসংগত অংশীজনদের হাতে নেই। এটি এখন চলে গেছে যখন যারা ক্ষমতায়, তখন তাদের সঙ্গে স্বার্থের সূত্রে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে হাতে। ফলে সাধারণ মানুষ যদি এনবিএসসি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকেও সে ধরনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের কোনো উদ্যোগ হিসেবে গণ্য করে, তাহলে তাতে তাদের মোটেও দোষ দেওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় সে দোষ থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে সরকারের উচিত হবে এনবিএসসি গঠনের মতো অযৌক্তিক উদ্যোগ গ্রহণ থেকে পরিপূর্ণভাবে বিরত থাকা এবং এর পরিবর্তে বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর রূপে গড়ে তোলা। উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যে চারটি প্রতিষ্ঠানের কথা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে, তন্মধ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০০৯ সালে এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সময়ই এর উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, এদের কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজারের ওপর সরকারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বাজার পরিস্থিতি জনস্বার্থের অনুগামী হয়ে উঠবে। কিন্তু অত্যন্ত কষ্ট ও হতাশার সঙ্গে বলতে হয় যে গত ৫৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বাজার পরিস্থিতি আর কখনোই অতটা খারাপ হয়নি, যতটা ওই দুটি প্রতিষ্ঠান গঠনের পর হয়েছে। আর এদের প্রতিষ্ঠা-উত্তর সময়েই বাজারগুলোতে পণ্যভিত্তিক সিন্ডিকেট সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও