নুসরাত ফারিয়া এবং দৃশ্যমান ব্যর্থতা

www.ajkerpatrika.com স্বপ্না রেজা প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৫, ০৮:৪০

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে বয়স কত, আর কত অল্প বয়স থেকে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে? সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলার কথা বলা হয়েছে। এইসব অভিযোগেই নাকি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় যখন হত্যাচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এমন সব যুক্তিহীন তথ্য ও অভিযোগ শুনে গোটা দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গেছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এ-ও সম্ভব!


ইতিহাসধর্মী কোনো একটি চলচ্চিত্রে কোনো এক চরিত্রে অভিনয় করাটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে? রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া যাকে বলে! লোকটা আসলেই আইনজীবী তো, নাকি কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি? কারও কারও মনে সংশয় দেখা দিল—এমন যুক্তিতে কখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় কি না, গ্রেপ্তার হয় বা হয়েছে কি না এর আগে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নের জবাব কিন্তু খুঁজতে কমবেশি সবাই নড়েচড়ে বসেছে। সম্ভবত বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্রের কোনো একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কোনো অভিনয়শিল্পীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে।


বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণ বলে তো সর্ববৃহৎ একটা অস্তিত্ব আছে, যে কিনা সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে। ন্যায় ও অন্যায় যারা বেশ ভালো বোঝে। নিরীহ হয়ে জীবনযাপন করলেও সময়মতো তারা প্রচণ্ড আওয়াজ তোলে, সরব হয়। সঠিক জবাব দিতে ভুল করে না।


এই ঘটনায় অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে, মুজিব চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে যদি নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাহলে হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার স্ত্রী তিশাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? যাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তো এই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রয়েছে, কেউ কেউ সেই কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনও লোকে বলে, সখ্যও ছিল। কয়েকটা ছবি ভাইরালও হয়েছে। এসব কিন্তু মোটেও দোষের নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দেশের জনপ্রিয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে তো তাঁদের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে দু-একটা ছবিও। সেটা হোক অতীত বা বর্তমান। তাহলে? তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার স্ত্রী হওয়াতে কি তিশা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন? কঠিন বৈষম্য তো তবে এখানেই থাকছে—ইত্যাদি ইত্যাদিতে মুখরিত উৎসুক জনগণের মন। এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।


যাহোক, অভিনয়ের জন্য গ্রেপ্তার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অফিস-আদালত, চায়ের টেবিলে ঘুরেফিরে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি রকম আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকে। তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও তাঁর মুক্তির পক্ষে দাবি ওঠে। সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেই ফেলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিব্রতকর। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বাইরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। অনেকে মনে করেন যে এসব কারণে জামিনের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিনের আগেই নুসরাত জামিন পেয়ে যান। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই নুসরাতকে তড়িঘড়ি করে জামিনে কারামুক্ত করা হয়েছে।


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে নানান সংস্কারের কথা বলছিল, তাতে জনসাধারণের মনে একধরনের কৌতূহল ও অধীর অপেক্ষা তৈরি হয়েছিল। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তারা উদগ্রীব ছিল। না বললেই নয় যে আজ তাদের অনেকেই বিব্রত, আশাহত। যা হচ্ছে, ঘটছে তাতে সবার মাঝেই কমবেশি নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত থাকছে সাধারণ মানুষ। মব সংস্কৃতি, ভুয়া মামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রায় অচল শিক্ষাঙ্গন, তরুণদের মধ্যে অত্যধিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিপ্রীতি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে, অজুহাতে।


প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা রাজনীতির এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ জনগণ এমন পরিস্থিতি থেকে সব সময়ই পরিত্রাণ চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনার ধরন থেকে আশ্বস্ত ও স্বস্তি পাওয়ার যে আশা রচিত হয়েছিল কারও কারও হৃদয়ে, তা যেন অনেকটা দুরাশার রূপ নিয়ে থমকে গেছে। সবকিছুই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ছে, যা অতীতের দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন বলেই কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও