
মিরিসা
ভ্রমণ মানেই কি শুধু গন্তব্যে পৌঁছানো? আমার কাছে কখনো কখনো সেটা নিজেকে খোঁজার এক নিঃশব্দ যাত্রা। যার ঠিকানা মানচিত্রে না পড়লেও ছাপ পড়ে মনে! অনুভব করতে হয় বাতাসের গন্ধে, ঢেউয়ের শব্দে, সূর্যের আভায়। তেমনই এক মায়াময় জায়গা মিরিসা। এখানে সূর্য ডোবে ধীর লয়ে, যেন ক্লান্ত এক কবির কলম থামে কাগজের কোণে।
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূলের ছোট্ট শহর মিরিসা। ভারত মহাসাগরের কোলঘেঁষা মিরিসা সৈকত পাখির চোখে দেখতে ঠিক চাঁদের ফালির মতো। সেখানকার নীল জলরাশিতে তিমির আনাগোনা দেখা খুবই উচ্ছ্বাসের ব্যাপার। সেখানকার নরম বালু যেন মখমলের মতো কোমল। জোয়ারের ঢেউ সেখানে তেমন জোরালো নয়, তাই আরামে হাঁটা, সাঁতার বা সূর্যস্নান—সবই করা যায় নিরাপদে। পাশে সারি সারি নারকেলগাছ আর সবুজ বনাঞ্চল জায়গাটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম। যাঁরা শান্ত সমুদ্র ও ‘ফটোজেনিক’ সৈকত ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য মিরিসা এক দুর্দান্ত গন্তব্য!
আমার ১০ দিনের শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে মিরিসায় কাটিয়েছি দুই দিন। গল বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে ঘণ্টাখানেকের যাত্রা। শ্রীলঙ্কার লোকাল বাসগুলো মুড়ির টিনের মতো, তবে বেশ চমকপ্রদ। এসব বাসে বিভিন্ন দেবদেবী, প্রাণী, ফুল বা ধর্মীয় চিত্র আঁকা থাকে। রং ব্যবহারেও তারা বেশ সাহসী—লাল, নীল, হলুদ—সব একসঙ্গে! বাসে ওঠার পর প্রথমেই কানে লাগে উচ্চ শব্দে বেজে চলা সিংহলি পপ বা হিন্দি গান। মাত্র ১২০ শ্রীলঙ্কান রুপিতে এমন একটা চলন্ত ‘রোলার কোস্টারে’ বসে সমুদ্র দেখতে দেখতে মিরিসা যাওয়া দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার ক্ষুদ্র এই পাহাড় এমন একটি জায়গা, যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা যেন জীবনের কোনো অলিখিত প্রতিশ্রুতি পূরণের মতো। বুড়ো বিকেলের নরম আলো যখন গাছের পাতায় পড়ে, তখন সেই জায়গা যেন এক রঙিন পোস্টকার্ডে পরিণত হয়। সূর্যাস্তের সময় আকাশ ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। লাল, কমলা ও গোলাপি রঙে যখন রঙিন হয়, তখন ছবি তোলার লোভ কেউই সামলাতে পারে না।
- ট্যাগ:
- লাইফ
- বিদেশ ভ্রমণ