কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ

www.ajkerpatrika.com আসিফ প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৫, ১০:৩৩

বিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীজুড়ে বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছেন। খুঁজেছেন কার্বনভিত্তিক, সিলিকনভিত্তিক বা অ্যামোনিয়া যৌগনির্ভর প্রাণ। এটা আমাদের জানা জরুরি যে প্রাণের প্রকৃতি, আর অন্য জায়গায় প্রাণ আছে কি না, তা আসলে একই প্রশ্নের দুটো দিক। তা হলো, ‘কেন আমরা এখানে?’ বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে সিলিকনভিত্তিক প্রাণ মানুষ বহির্জগতে খুঁজেছে, সেটা কৃত্রিমভাবে পৃথিবীতে প্রায় তৈরি করে ফেলেছে মানুষ, যা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটির দিকে। অর্থাৎ বহির্জগতে সেই অতি বুদ্ধিমান প্রাণ (যদি থেকেও থাকে) আবিষ্কারের আগেই মানুষ দেখা পেয়ে যেতে পারে নিজের আবিষ্কৃত সিলিকননির্ভর প্রাণের। তবে খোদ কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিবিষয়ক গবেষকেরা দুশ্চিন্তায় আছেন—বাস্তবের সিলিকন সত্তা দেখার আগেই পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে কার্বনভিত্তিক সভ্যতার।


টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি বা প্রাযুক্তিক একতা হচ্ছে এমন এক প্রাযুক্তিক বিশ্বব্যবস্থা, যেখান থেকে আর পেছনে ফেরার সুযোগ থাকবে না আমাদের। এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে আরও দ্রুত হারে স্ব-উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরি করবে, যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কি না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। প্রাযুক্তিক সিঙ্গুলারিটি ধারণার প্রবর্তক রে কার্জউইল তাঁর ‘সিঙ্গুলারিটি ইজ নিয়ার’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলেছেন। তিনি মানবতার ভবিষ্যৎ চিত্রিত করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জৈবিক বুদ্ধিমত্তার সম্মিলিত অস্তিত্বের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে। কার্জউইল দীর্ঘকাল ধরে যুক্তি দিয়ে আসছিলেন যে এজিআই (কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা) শুধু সম্ভব নয়, বরং অনিবার্য। ২০২৯ সালে তা আবির্ভূত হবে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন।


মহাকাশ সংস্থা স্পেস এক্স ও অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি টেসলার উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। তাঁর সবগুলো প্রকল্পই ভবিষ্যৎ পৃথিবী বিনির্মাণের সঙ্গে জড়িত। এগুলোর মূলে কাজ করছে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি। এজিআইয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কার্জউইলের মতো তিনিও এমন একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করেন, যেখানে এআই ব্যবস্থা সব রকম কাজ সম্পাদন করতে পারবে, যেগুলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এজিআই ২০৩০ সালের মধ্যে মানব বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার এটি অনিয়ন্ত্রিত হলে মানবতাকে শেষ করে দিতে পারে।



চ্যাটজিপিটি খ্যাত ওপেন এআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সিইও স্যাম অল্টম্যান। তিনিই প্রথম সাধারণের কাছে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের (এলএলএম) অভাবিত কর্মক্ষমতা তুলে ধরেন, যাকে আমরা চ্যাটজিপিটি নামে চিনি। এজিআইয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্যাম অল্টম্যান বলেন, এআইয়ের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষ উল্লেখযোগ্য উৎপাদনশীলতা লাভে চ্যাটজিপিটির মতো টুলগুলো ব্যবহারের উপায় খুঁজে পেয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা শেষ পর্যন্ত এজিআইয়ের দিকে নিয়ে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি আরও বলেন, ওপেন এআই এমন এজিআই পরবর্তী বিশ্বের জন্য কল্পনা করছে, যেখানে মানুষ ও এজিআইয়ের মধ্যে একটি সিম্বাওটিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে এজিআই মানবতার তৈরি সেরা হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। অল্টম্যান এমন একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করেন, যেখানে একাধিক এজিআই, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার দ্বারা বিকশিত হবে এবং সহাবস্থান করবে। এই বৈচিত্র্য বিভিন্ন দৃষ্টিকোণকে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে এর ব্যবহারিক ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।


তবে এআইসংক্রান্ত গবেষণা পদ্ধতির ব্যাপারে নোয়াম চমস্কি এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জায়গা থেকে রজার পেনরোজ বিরোধিতা করেছেন। উল্লেখ্য, নোয়াম চমস্কি তাঁর কর্মজীবনের বেশির ভাগই ভাষাতত্ত্ব এবং কগনিটিভ বা চৈতন্যবিজ্ঞানের সুসংজ্ঞায়িত ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে ব্যয় করেছেন। গবেষণার পদ্ধতিগত দিকের প্রতি দৃষ্টিপাত করে চমস্কি বলেছেন, শুধু অসংখ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ডিডাকটিভ পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চেতনার জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না। এটা একটা বিপজ্জনক বাণিজ্যিক প্রবণতার প্রকৌশলজাত অভিঘাত। পদার্থবিজ্ঞানের জায়গা থেকে চমস্কি বলেছেন, যদি সাফল্য বলতে বিপুল পরিমাণ অবিশ্লেষিত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মোটামুটি সঠিক একটা অনুমানে আসতে পারাকে বোঝানো হয়, তাহলে চিরকাল বিজ্ঞান সবকিছুকে যেভাবে উপলব্ধি করতে চেয়েছে, সেই ধরনের উপলব্ধি অর্জন সম্ভব নয়—আমরা যা পাব তা হচ্ছে বিভিন্ন ঘটনাবলির একটা ভাসা ভাসা অনুমান।


রজার পেনরোজ মানুষের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে সন্দেহ পোষণ করে আসছেন। তিনি যুক্তি দেন যে কম্পিউটার নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শী হতে পারে, তবে তাদের সচেতন চিন্তার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর অভাব রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, গাণিতিক কিংবা অ্যালগরিদমিক উপায়ে মানুষের চেতনা এবং উপলব্ধি সম্পূর্ণরূপে প্রতিলিপি করা যায় না। এটা পদার্থবিজ্ঞানের সেই মৌলিক নীতি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাতে গেলেও মেনে চলতে হবে। অনিশ্চয়তার নীতি, ১৯২৭ সালে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের আবিষ্কার, এটি ২০২০ সালেও সত্যি। অনিশ্চয়তার নীতি হলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দীর্ঘ ছায়া—আপনি নিজের ছায়া থেকে পালাতে পারবেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও