You have reached your daily news limit

Please log in to continue


বাঙালির কোয়ারেন্টিন ও শরৎচন্দ্রের গল্প

বিগত করোনাকালে, যাকে বলা হয় কোভিড ১৯ (২০২০ সাল) কোয়ারেন্টিন শব্দটি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, গ্রাম কিংবা শহরে, প্রচুর প্রসিদ্ধি পায়। তার আগে অন্তত বর্তমান প্রজন্ম এই প্রতিকৃতির সাথে পরিচিত ছিল কি-না সন্দেহ আছে।

দুই.
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বিনায়ক সেনের মতে, এই শব্দ সম্ভবত বাঙালি প্রথম শুনতে পায় বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চার পর্বের ‘মাস্টারপিস’ বলে খ্যাত “শ্রীকান্ত” উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বের তৃতীয় অধ্যায়ে। সেখানে শ্রীকান্তর বার্মা ভ্রমণের বর্ণনা থেকে শব্দটির সাথে পাঠকের পরিচয় ঘটে। তখনকার বার্মায় চারিদিকে শোরগোল ও সরকারি সতর্কতা কেন্দ্রীভূত ছিল শুধু প্লেগের বিস্তার রোধে, যদিও এই ভয়াবহ রোগটি তখনও সে দেশে যায়নি। কলকাতার জাহাজঘাটে পৌঁছে শরৎবাবু দেখেন “চোদ্দ –পনর শ’ লোক ‘ভেড়ার পালের মত’ সারবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে, ডাক্তার পরীক্ষা করিয়া পাশ করিলে তবেই সে জাহাজে উঠিতে পাইবে …তাহারা প্লেগের রোগী কি না, তাহা প্রথমে যাচাই হওয়া দরকার ...।”

পরের দিন দুপুর নাগাদ জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছার কথা। কিন্তু ভোর থেকেই যাত্রীদের মুখচোখে ভীতি আর ধড়ফড় ভাব লক্ষ করা গেল - “চারিদিকে হইতে একটা অস্ফুট শব্দ কানে আসতে লাগিল, কেরেন্টিন । খবর লইয়া জানিলাম , কথাটা quarantine ...শহর হইতে আট–দশ মাইল দূরে একটা চড়া কাঁটাতারের বেড়া দিয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারি করা হইয়াছে; ইহার মধ্যে সমস্ত যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেয়া হয় । দশদিন বাস করিবার পর , তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পারিবে …তবে যদি কাহারও কোনো আত্মীয় শহরে থাকে , এবং সে Port Health Office – এর নিকট হইতে কোনো কৌশলে ছাড়পত্র জোগাড় করিতে পারে, তাহা হইলে অবশ্য আলাদা কথা।”

পাঠকের জানার জন্য বলা যে পায়ে হেঁটে, নিজের বোঝা নিজে টেনে কোয়ারেন্টিন নামক কষ্টের ওটা ছিল শুরু, শেষ নয়। একই জাহাজে শ্রীকান্তর সহযাত্রী এবং পরিচিত ডাক্তারবাবু শ্রীকান্তকে একটু বিরক্ত হয়েই বললেন-
“শ্রীকান্তবাবু, একখানা চিঠি জোগাড় না ক’রে আপনার আসা উচিৎ ছিল না; Quarantine –এ নিয়ে যেতে এরা মানুষকে এত কষ্ট দেয় যে কসাইখানার গরু-ছাগল- ভেড়াকেও এত কষ্ট সইতে হয় না। তবে ছোটলোকেরা কোনোভাবে রকমে সইতে পারে, শুধু ভদ্র–লোকদেরই মর্মান্তিক ব্যাপার। একে ত মুটে নেই, নিজের সমস্ত জিনিস নিজে কাঁধে করে একটা সরু সিঁড়ি দিয়ে নামাতে ওঠাতে হয় –তত দূর বয়ে নিয়ে যেতে হয় ; তার পরে সমস্ত জিনিসপত্র সেখানে খুলে ছাড়িয়ে স্টিমে ফুটিয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলে–মশাই এই রোদের মধ্যে কষ্টের আর অবধি থাকে না।”

তিন.
বুঝতে বাকি থাকে না যে কোয়ারেন্টিনের সাথে বাঙালির প্রথম পরিচয় ছিল অত্যন্ত ভীতিপ্রদ এবং গায়ে কাঁটা দেবার মতো এক অভিজ্ঞতা– ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ধরনের অবস্থা। লেখক বলছেন, সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আধুনিক কালের সরকার কোয়ারেন্টিনের বদলে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা জাতীয় মৃদু শব্দ সম্বলিত বিকল্প আবিষ্কার করেছেন। “ভারতে মোদি তার ভাষণে লকডাউন বোঝাতে ঘরের চারিদিকে ‘লক্ষণরেখা’ এঁকে দিয়েছিলেন। রামায়নের প্রসঙ্গ টেনে সবাইকে ঘরের বাইরে যেতে মানা করেছিলেন। এক অর্থে, সীতাই ছিলেন লকডাউনে আবদ্ধ প্রথম পৌরাণিক নারী। এবং একজন নারীকেই যে প্রথম লকডাউনে আবদ্ধ হতে হল সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি।”

চার.
মহামারি যে বৈষম্যের বাহক তা আজকের গবেষণা নয়; স্পষ্টত বেড়িয়ে আসে ১৯১৭-১৯৩৩ সালে লিখা ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে শ্রীকান্তর বিবরণী থেকে। মহামারি ‘ছোটলোক’ ও ‘ভদ্রলোকে’র ব্যবধান কমায় না বরং তাকে আরও প্রকট করে তোলে। আমরা পাই ইন্দ্রনাথ নামে অসম সাহসী এক কিশোরের কথা যে ছয়–সাত বছরের শিশুর মৃতদেহটি ডিঙিতে তুলে দূরের চরের ঝাউবনের মধ্যে ফেলে রেখে আসা মাত্রই জাত-পাতের প্রশ্ন উঠলো-
“কুণ্ঠিত হইয়া যেই জিজ্ঞাসা করিলাম কি জাতের মড়া–তুমি ছোঁবে? ইন্দ্র সরিয়া আসিয়া একহাত তাহার ঘাড়ের তলায় এবং অন্যহাত হাঁটুর নিচে দিয়া একটা শুষ্ক তৃণ খণ্ডের মত স্বচ্ছন্দে তুলিয়া লইয়া কহিল …মড়ার কি জাত থাকে রে?”
আমি তর্ক করিলাম, কেন থাকবে না?
ইন্দ্র কহিল, আরে এ যে মড়া। মড়ার আবার জাত কি? এই যেমন আমাদের ডিঙিটা– এর কি জাত আছে? আমগাছ, জামগাছ যে কাঠেরই তৈরি হোক– এখন ডিঙি ছাড়া একে কেউ বলবে না–আমগাছ, জামগাছ– বুঝলি না? এও তেমনি।”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন