পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো প্রকল্প শর্তারোপ করেও অনুমোদন দেয়া যাবে না

বণিক বার্তা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৫, ১১:৫৮

কৃষি, মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য হলো মানুষকে খাদ্যনিরাপত্তা দেয়া, পরিবেশকে সংরক্ষণ ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা। প্রায় সময়ই পরিবেশের বিতর্কটা যদি, তবে এবং কিন্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। আমাদের উন্নয়ন ও পরিবেশ—উভয়ই লাগবে। যদি উন্নয়ন করতে পরিবেশের কিছুটা ক্ষতি হয়ে যায়, সেটি গ্রহণযোগ্য। আমাদের এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে বের হতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি এমন ‘যদি বা কিন্তু’ থেকে বেরিয়ে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মূলধারায় যুক্ত করা জরুরি। ব্যক্তি হিসেবে নিজেদের ভোগ-বিলাস ও জীবনধারণের দিকেও তাকানো দরকার।


উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা একদিকে বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অভিযোগ করি, অন্যদিকে অহেতুক এসি-লাইট ব্যবহার করি। আমাদের নিজস্ব গ্যাসের মজুদ প্রায় ফুরিয়ে আসছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে আমাদের আমদানিনির্ভরই হতে হচ্ছে। সেজন্য আমাদের ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ভোগের ধরন ও পরিবেশের বিষয়টি যদি-কিন্তু থেকে বেরিয়ে মূল আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে।


এবার প্রাণ-প্রকৃতি প্রসঙ্গে বলা যাক। আমাদের টেবিলে খাবার পৌঁছানোই তো মূল কথা নয়, এর গুণমানও আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা নানা ধরনের দূষণের কথা জানি। কিন্তু পরিবেশ দূষণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ও বিভিন্ন নোটিস থাকলেও তা বন্ধ করতে গেলে তখন প্রচণ্ড বিতর্ক সামনে নিয়ে আসা হবে, গণমাধ্যমই তা করবে। গণমাধ্যম লিখতে পারে, অমুক প্রতিষ্ঠানের এক হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ছে। অর্থাৎ আবারো সেই ‘কিন্তু’তে গিয়ে আটকে যাওয়া।


আমরা জানি যে বড় বড় কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমাদের নদীগুলোকে দূষণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও বিষয়গুলোকে সমাধান করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মসংস্থানের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত নদীপারের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে কেউ ভাবে না। আমাদের ঢাকা শহরের মানুষকে পানি খাওয়ানোর জন্য মেঘনা নদীতে যাচ্ছি। আবার মেঘনা নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে আলাদা করে টাস্কফোর্স গঠন করতে হচ্ছে। কারণ সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হয়েছে। সেজন্য রাষ্ট্র ও ব্যক্তিপর্যায়ে পরিবেশকে মূল পর্যায়ে আনতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে না বলার অধিকার দিতে হবে এবং না শোনার মানসিকতাও সবার মধ্যে গড়ে ওঠা জরুরি। পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো প্রকল্প শর্তারোপ করেও অনুমোদন দেয়া যাবে না।



পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছি। নানা সময় বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে মাটি কাটা থেকে শুরু করে ইটভাটা নিয়েও। সম্প্রতি ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষিজমির ওপর থেকে মাটি সরিয়ে নেয়ার প্রচুর অভিযোগ আসছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ৪০ ফুট গভীর করে কৃষিজমির মাটি কাটা হয়েছে ইটভাটায় সরবরাহ করার জন্য। এ দস্যুপনা এত বেশি সংগঠিত হয়ে গেছে যে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ আমরা যদি দিনের বেলায় এনফোর্সমেন্ট ক্ষমতা প্রয়োগ করি, তারা রাতের বেলায় পুনরায় সেসব কাজ করে।


এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আমাদের ইটের বিকল্প কিছু দিতে হবে। এ ইটের বিকল্প নিয়ে কথা বলা হচ্ছে ২০১২ সাল থেকে। সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হলো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন বেসরকারি খাতে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ও সরকারি খাতে শতভাগ ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার একটা পরিকল্পনা করছি। আমরা চাইলেই তৎক্ষণাৎ ইটের উৎপাদন বন্ধ করতে পারি না। কারণ বাজারে ইটের চাহিদা আছে। তাই ইটের উৎপাদন বন্ধে এর বিকল্প প্রয়োজন।


ইটভাটার আগ্রাসন থেকে কৃষিজমিকে বাঁচাতে হবে। ইটভাটার বিষয়ে কথা এলে আমরা বায়ুদূষণের কথা বলি, কিন্তু এগুলো আরো বেশি পরিমাণে কৃষিজমিকে ধ্বংস করছে। কারণ জমির উপরিভাগের মাটি একবার নষ্ট হয়ে গেলে ৭০-১০০ বছরেও তা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিজমির বর্তমান অকৃষি ব্যবহারের ধারা চলতে থাকলে ২০৭০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে আর কোনো কৃষিজমি থাকবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের মত অনুযায়ী, এ সময়সীমা ২০৫০ সাল। এসআরডিআইয়ের আরেকটা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের জমির প্রায় ৭৮ ভাগ মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে বা বিষাক্ত হয়ে গেছে। গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জমিগুলোয় প্রতি হেক্টরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সার ও পেস্টিসাইড (কীটনাশক) ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ সরকারের জৈব কৃষি নীতিমালা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা আমরা শুনিনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশী বহুজাতিক ও দেশী কোম্পানিগুলোর স্বার্থে জৈব কৃষির ব্যবহার করা হয় না। সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে কৃষকের মাধ্যমে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো যায় এবং কীটনাশকের ব্যবহার থেকে কৃষককে সরিয়ে আনা যায়।


গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় একটি কারণ আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা। তার অর্থ এই নয় যে সবাইকে একদম আদি যুগে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আদি অনুশীলনগুলোরও তো একটা জ্ঞানগত মূল্য ছিল। আধুনিকায়নের নামে সেটাকে পরিপূর্ণভাবে ফেলে দেয়া যায় না। সেজন্য ঢাকা শহরের পচনশীল বর্জ্যগুলো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জৈব সার উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে এবং টিএসপি সারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও কাজ শুরু হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও